প্রথম দেবদেবীর ছবি এঁকেছিলেন এই ভারতীয় শিল্পী! দিতে হয়েছিল কড়া মাশুল

ভারতীয় দেবদেবীর ছবি প্রথম কে এঁকেছিলেন জানেন? কল্পনার মাধুরী মিশিয়ে যিনি কাগজের পাতায় প্রথম এঁকেছিলেন দেবদেবীর ছবি, সেই শিল্পীর নাম রাজা রবি বর্মা। তবে এর জন্য কম খেসারতও দিতে হয়নি তাকে। ধর্মীয় গোঁড়ামির তার শিল্পী সত্তাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে চেয়েছিল। ছিনিয়ে নিয়েছিল তার সবকিছু। তবুও হার মানেননি রাজা রবি বর্মা। গোটা সমাজের সঙ্গে লড়াই করে তিনি এমন কিছু দিয়েছেন শিল্প জগৎকে যেগুলো আজও অমূল্য সম্পদ।

১২৫ বছর আগে রাজা রবি বর্মার জন্ম হয় কেরালায়। মাত্র ৭ বছর বয়সে তিনি ছবি আঁকতে শেখেন। তার কাকা ছিলেন একজন শিল্পী। কাকাকে দেখেই বাড়ির দেওয়ালে ছবি আঁকতে শুরু করেন ছোট্ট রবি বর্মা। বড় হওয়ার পর তিনিই প্রথম পৌরাণিক চরিত্রগুলোকে আঁকার সাহস দেখিয়েছিলেন। সেই সময় দেব-দেবীর মূর্তি কেবল মন্দিরে পূজা হত। তাদের ছবি আঁকা ছিল মহাপাপ। সমাজের বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি প্রথম এঁকেছিলেন মা সরস্বতীর বর প্রদানের ছবি। ১৮৯৬ সালে তিনি যে মা সরস্বতীর ছবি এঁকেছিলেন তার মুখ ‘সুগন্ধা’ নামের কোনও এক মহিলার অনুকরণে বানানো। যাকে রবি বর্মার প্রেমিকা বলা হয় কোথাও কোথাও।

 Raja Ravi Varma

রবি বর্মা জলরঙে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। তিনি তখনকার আমলের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী রাম স্বামী নাইডুর কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। রাম স্বামী ছিলেন তখনকার আমলে ত্রাভাঙ্কোর মহারাজের দরবারের শিল্পী। এছাড়াও রবি বর্মা ডাচ চিত্রশিল্পী থিওডোর জেনসনের কাছে অয়েল পেইন্টিং শিখেছিলেন। তিনি এত সুন্দর আঁকতে পারতেন যে ব্রিটিশ সরকার ১৯০৪ সালে তাকে কেসর ই হিন্দ উপাধি দেয়। এই সম্মান ভারতীয় নাগরিকদের জন্য সবথেকে বড় সম্মান ছিল।

আরও পড়ুন : ৬৭ তেই প্রাণ হারাবেন শাহরুখ-সালমান! জ্যোতিষীর গণনায় তোলপাড়

 Raja Ravi Varma

আরও পড়ুন : কেবিসির প্রথম কোটিপতি আজ কোথায়? ২৫ বছরে কি পরিবর্তন ঘটল তার জীবনে?

রাজা রবি বর্মার অনেক বিখ্যাত শিল্পকর্ম ছিল। তার মধ্যে অন্যতম ছিল অভিজ্ঞান শকুন্তলম। তার আঁকা ছবি অভিজ্ঞান শকুন্তলমের ইংরেজি অনুবাদের বইতে ঠাঁই পেয়েছিল। বিদেশীও শিল্পী মহলেও তার প্রচুর সুনাম ছিল। তবে দেবদেবীর ছবি আঁকার জন্য খোদ তার দেশের লোকেরাই তার বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হয়ে ওঠেন। এই চিত্রকর্মের জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। তার ছাপাখানা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু রং তুলি দিয়ে রবি বর্মা যেভাবে ভারতীয় ইতিহাস ও পুরাণকে মূর্ত করে তুলেছিলেন তার পরের প্রজন্মের শিল্পীদের অনুপ্রেরণা দিয়েছে যুগের পর যুগ। ১৯০৬ সালে তার মৃত্যু হয়।