৮ দিনেই ১৫ কোটির গন্ডি পেরিয়ে গেল খাদান (Khadaan)। বাংলা সিনেমার বক্স অফিস কালেকশনের (Box Office Collection) হিসেবে এটা একটা অভাবনীয় রেকর্ড। বক্স অফিসের রিপোর্ট অনুসারে খাদান হতে চলেছে এই যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়কারী সিনেমা। তবে জানেন কী এই বক্সঅফিস কালেকশন? কীভাবে এর হিসেব হয়? কোন সিনেমা কত আয় করলে তাকে হিট, সুপারহিট বা ফ্লপের পর্যায়ে ফেলা যায়? জেনে নিন।
বক্স অফিস, এই শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয় ১৮৭৬ সালে। শুরুতে বক্স অফিস বলতে থিয়েটারে বক্স বিক্রির পরিমাণ বা ব্যক্তিগত আসনকে বোঝানো হত। ১৯০৪ সাল থেকে বক্স অফিস বলতে কোনও ছবির মোট ব্যবসার পরিমাণকে বোঝানো হতে থাকে। তারপর থেকেই কোনও প্রযোজনা সংস্থার ছবি মুক্তি পাওয়ার পর বাণিজ্যিকভাবে সফল হল না ফ্লপ, তা নির্ধারণ করা হতে থাকে বক্স অফিসের হিট কিংবা ফ্লপের রিপোর্ট অনুসারে।
বর্তমানে ‘বক্স অফিস’, ‘বক্স অফিস ইন্ডিয়া’, ‘শোবিজ়ডাটা’, ‘বক্স অফিস মোজ়ো’র ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া রিপোর্ট থেকে ছবি লাভ এবং লোকসানের অংক কষা হয়। তবে এক্ষেত্রে সব দায় কিন্তু বর্তায় প্রযোজকের উপর। ছবি বানানোর সময় থেকে তারকাদের পারিশ্রমিক, অন্যান্য কর্মীদের বেতন, ছবির প্রচার ও বিজ্ঞাপনের জন্য তারা অর্থ খরচ করেন। তারপর ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছে ছবির স্বত্ব বিক্রি করেন প্রযোজকরা। আর সেই ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউটাররা ছবিগুলোকে পৌঁছে দেন সিনেমা হলে। বলতে গেলে সিনেমা হল এবং প্রযোজকদের মাঝে থাকেন এই ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউটাররা। কখনও কখনও ছবি মুক্তির আগেও প্রযোজকরা ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছে ছবির স্বত্ব বিক্রি করে দেন। এই ডিস্ট্রিবিউটাররা হল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে ছবির রিলিজের জন্য হল ভাড়া নিয়ে নেন।
বর্তমানে ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ১৪ টি সার্কিটে বিভক্ত। এই ১৪টি সার্কিট হল, মুম্বই, দিল্লি/ইউপি, পূর্ব পঞ্জাব, মধ্য ভারত, সিপি বেরার, বিহার, রাজস্থান, নিজাম, তামিলনাড়ু, মাইসুরু, কেরল, ওড়িশা, অসম এবং পশ্চিমবঙ্গ। টিকিট বিক্রি শুরু হলে হল মালিকেরা টাকার হিসাব করতে শুরু করেন। যত টাকার টিকিট বিক্রি হয় তা কিন্তু হলমালিকদের হাতে থাকে না। মোট পরিমাণ থেকে রাজ্য সরকারের তরফের বিনোদন কর প্রথমে কাটা যায়। সাধারণত এই কর মোট কালেকশনের ৩০% পর্যন্ত হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন : পুষ্পা রাজ খতম, দেবও ফেল! ইতিহাস গড়লো এই বাংলা সিনেমা, লিখল নতুন রেকর্ড
এরপর আসে হলমালিক, ডিস্ট্রিবিউটরদের আয়ের হিসেব। মাল্টিপ্লেক্সের ক্ষেত্রে ছবিমুক্তির প্রথম সপ্তাহে যা আয় হয় তার ৫০ শতাংশ ডিস্ট্রিবিউটরদের দেওয়া হয়। ছবি মুক্তির দ্বিতীয় সপ্তাহে আয় কিছুটা কমে যায়। ওই সপ্তাহে যা আয় হয়, তার থেকে ৪২ শতাংশ পান ডিস্ট্রিবিউটাররা। এইভাবে তৃতীয় সপ্তাহে যা আয় হয় তার ৩০ শতাংশ ডিস্ট্রিবিউটর পান। আর সিঙ্গেল স্ক্রিনের ক্ষেত্রে ছবি যত সপ্তাহ হলে দেখানো হবে, প্রতি সপ্তাহেই সমান হারের টাকা যাবে ডিস্ট্রিবিউটরের পকেটে। সাধারণত এক্ষেত্রে ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ টাকা হল মালিকদের থেকে ডিস্ট্রিবিউটররাই নিয়ে নেন।
এইবার আসা যাক ছবি হিট না ফ্লপ সেই বিচারের প্রসঙ্গে। ছবির বাজেট, বক্স অফিস পারফরম্যান্স, ডিস্ট্রিবিউটরদের শেয়ার ইত্যাদি মাপকাঠির উপর নির্ভর করে সেই ছবির সফলতা কিংবা ব্যর্থতা বিচার করা হয়। কম বাজেটের সিনেমা যদি বেশি আয় এনে দিতে পারে, তাহলে তাকে হিট ধরা হয়। আর যদি বেশি বাজেটের ছবি কম আয় করে সেক্ষেত্রে তাকে ফ্লপ বলা হবে।
আরও পড়ুন : ফ্যামিলি ম্যান থেকে পাতাললোক! ২০২৫ শে মুক্তি পাবে এই ৫ ওয়েব সিরিজের সিক্যুয়াল
এবার দেখুন বক্স অফিস সম্পর্কিত কিছু শব্দ এবং সেগুলোর আসল মানে জেনে নিন। বক্স অফিস কালেকশন সম্পর্কে ধারণা আরও পরিষ্কার হবে।
Gross Collections : বক্স অফিসে ঐ সিনেমার মোট সংগ্রহ।
Nett Gross বা মোট আয় : মোট কিংবা গ্রস বাদে বিনোদন ট্যাক্স হয়। যা সাধারণত ছবির আয়ের ৩০ শতাংশ হয়ে থাকে। সরকার যদি কোনও সিনেমার ট্যাক্স ছাড় দেয়, সেক্ষেত্রে ওই সিনেমাটিকে করমুক্ত বলা হয়।
FLOP : যদি সিনেমাটি তার মোট বিনিয়োগের অর্থ তুলতে না পারে তাহলে তাকে FLOP বলা হবে।
Average বা গড় : যদি কোনও সিনেমা কোনওভাবে ছবি বানানোর খরচ তুলে নিতে পারে তবে তাকে Average fare বা গড় ভাড়া বলে।
SEMI-HIT : যখন একটি সিনেমা ডিস্ট্রিবিউটরের বিনিয়োগ করা অর্থ থেকে দ্বিগুণ ব্যবসা করে তবে এটিকে SEMI-HIT বলে।
HIT : যখন একটি সিনেমা ডিস্ট্রিবিউটরের বিনিয়োগ করা অর্থ থেকে দ্বিগুণের থেকে কিছু বেশি ব্যবসা করে তবে এটিকে HIT বলে।
SUPER-HIT : যখন একটি চলচ্চিত্র দ্বিগুণ এর চেয়ে অনেক বেশি ব্যবসা করে ডিস্ট্রিবিউটরের বিনিয়োগ করা অর্থ থেকে তবে এটিকে SUPER-HIT বলে।
BLOCKBUSTER : যখন একটি সিনেমা ডিস্ট্রিবিউটরের বিনিয়োগ করা অর্থ থেকে তিনগুণ ব্যবসা করে তবে এটিকে BLOCKBUSTER বলে।
ALL TIME BLOCKBUSTER : যখন একটি সিনেমা ডিস্ট্রিবিউটরের বিনিয়োগ করা অর্থ থেকে তিনগুণ এর চেয়ে অধিক অর্থাৎ ৩০০% ব্যবসা করে তবে এটিকে ALL TIME BLOCKBUSTER বলে।