দেখলেই গা শিউরে ওঠে, পর্দার কুচুটে খলনায়িকা চৈতালি চক্রবর্তীর অতীত জানলে চোখে জল আসবে

বাংলা সিরিয়ালের (Bengali Mega) অভিনেত্রী মানেই তাকে দেখতে সুন্দরী হতেই হবে এমনই একটা ধারণা আজও হয়ে গিয়েছে ইন্ডাস্ট্রির অভ্যন্তরে। তবে চৈতালি চক্রবর্তীর (Chaitali Chakraborty) মত অভিনেত্রীরাই বারবার ইন্ডাস্ট্রির এই মিথ ভেঙে দেন। তিনিও একজন অভিনেত্রী, ইন্ডাস্ট্রির নজরে কালো, সব থেকে খারাপ দেখতে অভিনেত্রী! তবে নিন্দুকরা যে যাই বলুক না কেন, তার অভিনয় প্রতিভাকে কখনও ছাপিয়ে যেতে পারেনি কেউ। কারণ নিজের কাজের জায়গাতে তিনিই সেরা।

দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে অভিনয় পেশার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন চৈতালি। তবে অভিনয় জগতে তিনি নিজেকে অভিমুন্য বলেই পরিচয় দেন। কারণ তার মা ছিলেন একজন থিয়েটার অভিনেত্রী। মায়ের গর্ভে থাকতেই তাই অভিনয়টা যেন তার রন্ধ্রে ঢুকে গিয়েছিল। তার মা শেলী পাল, বাবা পরিতোষ পাল, দিদিমা দিপালী চক্রবর্তী, সকলেই ছিলেন নান্দীকার নাট্য সংস্থার সদস্য। স্বনামধন্য অভিনেত্রী লিলি চক্রবর্তী তার মাসি।

এত কিছু শোনার পর মনে হতেই পারে অভিনয় জগতে তাহলে চৈতালির আসার পথটা মসৃণ ছিল। কিন্তু বাস্তবে তেমনটা মোটেই ছিল না। ছোট থেকে অভিনয় শিখতে শিখতে বড় হয়েছেন বটে তবে তাকে রীতিমত কঠিন পরীক্ষা দিয়ে তবে ইন্ডাস্ট্রিতে স্থান পেতে হয়েছে। খুব ছোটতেই তিনি তার মাকে হারিয়ে ফেলেন। এরপর অভিনয় করবেন বলে যখন থিয়েটারে যোগ দেন তখন শুধুই অবহেলা জুটেছে তার ভাগ্যে।

অভিনেত্রীর কথায় টানা পাঁচটি বছর তিনি থিয়েটারে শুধু শতরোঞ্চি পাততেন, লাইটের ড্রিমার ঠেলতেন, লোকের ফাইফরমাশ খাটতেন। কিন্তু কেউ তাকে অভিনয়ের সুযোগ দিত না। ১৭ বছরের মেয়ে চৈতালি তখন শুধুই চোখের জল ফেলতেন। পড়াশোনাতে কিন্তু বেশ ভালই ছিলেন তিনি। তবে অভিনয়টাই ছিল তার প্রধান লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য পূরণের আশায় তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক নিয়ে পড়াশোনা করেন। সেখানেও শুধুই অপমান জুটেছে।

চৈতালির অভিনয় দেখে তার সহপাঠীরা তাকে বলেছিলেন, ‘১০ বছর আগে ভিড়ে অভিনয় কর তারপর অভিনেত্রী হওয়ার কথা ভাববি।’ মন ভেঙে গিয়েছিল তার। তবে তিনি হেরে যেতে আসেননি। আবার নতুন উদ্যমে নিজেকে আরও বেশি যোগ্য করে তোলার জন্য কাজ শুরু করে দেন তিনি। অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘৩ পয়সার পালা’ নাটকে অভিনয়ের পর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তার পরিচিতি। যারা তাকে দেখে এক সময় অপমান করেছিল, মুখ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাদের।

এরপর অশোক মুখোপাধ্যায়ের ‘একা এবং একাকিনী’ নাটকের জন্য তিনি পেয়েছিলেন ওয়েস্ট বেঙ্গল গভর্মেন্ট বেস্ট অ্যাক্ট্রেস অ্যাওয়ার্ড। টেলি পর্দায় তার প্রথম ধারাবাহিক ছিল ‘জন্মভূমি’। সেখানে মাত্র পাঁচ দিনের চরিত্রের ঢুকে টানা পাঁচ বছর কাজ করতে হয়েছে তাকে। বেশিরভাগ ধারাবাহিকে তিনি হয় খলনায়িকা, বা রাক্ষসী বা পেত্নী চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এখনও সহকর্মীরা তাকে ‘রাক্ষসী’ বলে কটাক্ষ করার চেষ্টা করেন। তবে অভিনেত্রী তাদের উত্তর দেন, ‘ভাগ্যিস, ওই জন্য রোজ কাজ করি, আর বাকিরা কাজ না পেয়ে ঘুরে বেড়ায়’।