বাংলাদেশের পাবনার সাধারণ এক মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে থেকে কলকাতার সম্ভ্রান্ত অভিজাত পরিবারের পুত্রবধূ, তারপর সেখান থেকে টলিউডের (Tollywood) মহানায়িকা হয়ে ওঠা, রূপকথার থেকে যেন কিছু কম ছিল না রমা ওরফে সুচিত্রা সেনের (Suchitra Sen) জীবন। শুধু রূপ দেখেই ছেলে দিবানাথের জন্য এই মেয়েকে ঘরে তুলেছিলেন শ্বশুরমশাই আদিনাথ সেন। পর্দার মহানায়িকার দাম্পত্য জীবন কেমন ছিল?
বিলেত ফেরত ইঞ্জিনিয়ার স্বামীর সঙ্গে মধ্যবিত্ত পরিবারের রমার মানিয়ে নিতে প্রথমটা বেশ অসুবিধাই হত। বিয়ের পর তিনি জানতে পেরেছিলেন তার স্বামীর বেপরোয়া জীবনযাত্রার কথা। ছেলেকে শোধরানোর জন্যই নাকি তার বিয়ে দিয়ে দেন আদিনাথ। বিয়ের এক বছরের মধ্যে তিনি এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন, যদিও সে বাঁচেনি।
সুচিত্রা অবশ্য প্রথম দিকে সংসার করতেই চেয়েছিলেন। কিন্তু তার স্বামী দিবানাথ তখন দেনার দায় ডুবেছেন। হঠাৎ একদিন তার মনে হল ঘরে এত সুন্দরী বউ আছে কি করতে? তিনিই সুচিত্রাকে হাত ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন ষ্টুডিও পাড়ায়। দিবানাথের মনে হয়েছিল জুনিয়র আর্টিস্ট হিসেবে স্ত্রী যা কিছু উপার্জন করবেন, সবটাতেই থাকবে তার অধিকার।
কিন্তু ক্রমে দিবানাথের চাল উল্টে যায়। ধীরে ধীরে টলিউডের সুপারস্টার হয়ে ওঠেন সুচিত্রা। কিন্তু তারকা বনে গেলেও স্ত্রীর পারিশ্রমিকের অধিকাংশটাই দিবানাথ কাছ থেকে একপ্রকার ছিনিয়ে নিতেন। এর কোনও প্রতিবাদ করতে পারতেন না সুচিত্রা। স্ত্রীর উপার্জন তো নিতেনই, সেই সঙ্গে সুচিত্রাকে নিয়ে ঘোরতর সন্দেহ করতে শুরু করেন তিনি।
সুচিত্রা সেনের প্রতি দিন-প্রতিদিন দিবানাথের অত্যাচার বাড়ছিল। আসলে তখনকার সামাজিক পরিস্থিতিতে স্বামীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস কিংবা সামর্থ্য হত না বাঙালি পরিবারের মেয়েদের, তা তিনি যত বড় তারকাই হোন না কেন। উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেনের সম্পর্ক মোটেই মানতে পারতেন না দিবানাথ। একদিন তো নাকি উত্তম কুমারের দিকে ছুরি নিয়ে তেড়েও গিয়েছিলেন তিনি।
টলিউডে আসার পর দিনে দিনে সুচিত্রার গ্ল্যামার যেন ফেটে পড়তে থাকে। অন্যদিকে বুড়িয়ে যেতে থাকেন দিবানাথ। স্ত্রীর এত রূপ সহ্য করতে না পেরে একদিন তার দিকে অ্যাসিড ছুঁড়ে বসেন দিবানাথ। সেই আক্রমণে খুব বড় কিছু ক্ষতি না হলেও অ্যাসিডে ছিটে ফোঁটায় সুচিত্রার চেহারা বিকৃত হয়ে যায়। এরপর আর সহ্য করতে পারেননি সুচিত্রা। মেয়ে মুনমুনকে নিয়ে তিনি আলাদা থাকতে শুরু করেন।
সুচিত্রা এরপর নিজের বাড়ি ভেঙে ফেলে বেদান্ত অ্যাপার্টমেন্ট বানান। শেষ বয়সটা সেখানেই কেটেছে তার। এদিকে অতিরিক্ত মদ্যপান এবং উৎশৃংখল জীবনযাত্রার কারণে অল্প বয়সে মৃত্যু হয় দিবানাথের। বিধবা হলেও হয়ত বা স্বামীর মৃত্যুতে স্বস্তিই পেয়েছিলেন মহানায়িকা। সুচিত্রা সেনের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। তবে তিনি যে গার্হস্থ্য হিংসার শিকার ছিলেন সেই গুঞ্জন টলিউডে রয়েছে।