সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যুগের ধ্যান-ধারণা, মানসিকতার বহু পরিবর্তন আসে। কিন্তু সমাজের কিছু বদ্ধমূল ধারণার গোড়ায় আঘাত হেনে পরিবর্তন ঘটানোর ক্ষেত্রে অনেকটাই সময় লেগে যায়। এই যেমন এই আধুনিকতার যুগে দাঁড়িয়েও রূপান্তরকামীদের (Transgender) এখনও তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করতে হয়। যে লড়াই লড়ছেন অভিনেত্রী সুজি ভৌমিক (Suji Bhoumik)।
সুজি একজন রূপান্তরকামী। তাকে বেশ কিছু বাংলা সিরিয়ালে (Bengali Mega Serial) দেখা গিয়েছে এর আগে। প্রথমবার জি বাংলাতে (Zee Bangla) ফিরকি (Phirki) ধারাবাহিকে রানী মাসির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সুজি। এরপর লীনা গাঙ্গুলীর ‘এক্কাদোক্কা’ সিরিয়ালে তাকে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল একজন নার্সের ভূমিকায়। কিন্তু বিনোদনের দুনিয়া তাকে হতাশ করেছেন।
হাতে গোনা কিছু সিরিয়ালে অভিনয় করার সুযোগ পেয়ে নিজের দক্ষতাকে ফুটিয়ে তুলেছিলেন সুজি। আসলে তিনি খুব ছোটবেলা থেকেই অভিনয় শিখছেন। সেই সুবাদে পর্দায় বেশ ভালই অভিনয় করতে পারেন তিনি। তবুও তার কাজ জুটছে না। ইন্ডাস্ট্রিতে থেকে সৎ পথে রোজগার করে জীবন অতিবাহিত করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু রূপান্তরকামী হওয়ায় তাকে সেই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না ।
২০১১ সাল থেকে টালিগঞ্জে কাজ করছেন সুজি। কিন্তু তার পরিচয় ট্রান্সজেন্ডার হওয়ার কারণে ইন্ডাস্ট্রি তাকে এখন আর কাজ দিচ্ছে না। যে কারণে কলকাতা ছেড়ে তিনি আবার তার নিজের শহর বহরমপুরে ফিরে এসেছেন। এই নিয়ে ফেসবুকে তিনি তার ক্ষোভ উজাড় করে দেন। তিনি লেখেন, “আজ আমি ট্রান্সজেন্ডার বলে অভিনয় জগতে কোনও দাম নেই, কাজও নেই। আমার জীবনে সবথেকে বড় ভুল অভিনয় করে সৎ ভাবে করে খাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম।”
এরপর একটি সাক্ষাৎকারে তিনি তার ক্ষোভ উজাড় করে দিয়ে বলেন, “২০১৪ সালে ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকারের বিল পাস হয়। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষজনকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও আমাদের জন্য কাজ নেই।” সুজি আরও বলেছেন রূপান্তরকামীরা কারও বোন, দিদি, ডাক্তার নার্সের চরিত্রে অভিনয় করতে পারে। সেই কথা কারও মাথায় আসছে না।
তার আক্ষেপ সমাজের মাথারা শুধু মুখেই ইকুয়ালিটি নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু সবটাই আসলে লোক দেখানো। লোকে বলে কেন ট্রান্সজেন্ডাররা সিগনালে দাঁড়ায়? ট্রেনে হাততালি দিয়ে টাকা চায়? কাজ করতে গেলেও কোথায় তাদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে বলে প্রশ্ন করেছেন সুজি। আপাতত তিনি অন্য পেশা খুঁজছেন। ভাল কাজ পেলে আবার তিনি পর্দার সামনে কাজ করতে চান বলে জানিয়েছেন।