বলিউডে (Bollywood) প্রথম স্কাইফাইধর্মী ছবির প্রচলন শুরু করেছিলেন রাকেশ রোশন। তার ‘কোই মিল গেয়া’ (Koi Mil Gaya) ছবিটি ছিল ‘ক্রিস’ সিরিজের প্রথম ছবি। এই ছবির কার্যত পরিচালক হিসেবে রাকেশ রোশন এবং তার ছেলে ঋত্বিক রোশনকে অভিনেতা হিসেবে কেরিয়ার গড়ে দিয়েছিল। ভিনগ্রহী প্রাণীদের নিয়ে কল্পবিজ্ঞান নির্ভর এই সিনেমার কেন্দ্রে ছিল জাদু। এই চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছিলেন তাকে দর্শকদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষই চেনেন না।
জাদুর ছোটখাটো রোবটের মত চেহারার আড়ালে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল ইন্দ্রবদন পুরোহিতের (Indravadan Purohit) নাম ও চেহারা। হ্যাঁ, এই ছবিতে হৃত্বিকের বেস্ট ফ্রেন্ডের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন এই অভিনেতা। হিন্দি সিরিয়ালের জনপ্রিয় মুখ হলেন ইন্দ্রবদন। তিনি বলিউডেরও প্রায় ৩০০ টি ছবিতে বিভিন্ন ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তবে এই বর্ষিয়ান অভিনেতাকে আজ সেভাবে মনে রাখেনি বলিউড।
রাকেশ রোশনের ছবিতে ‘জাদু’ হয়ে ওঠার জন্য প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জনের অডিশন নেওয়া হয়েছিল। অডিশনে সবাইকে টপকে সুযোগ হাতিয়ে নিয়েছিলেন ইন্দ্রবদন। জাদুর জন্য অস্ট্রেলিয়া থেকে বিশেষ ধরনের পোশাক অর্ডার করে আনানো হয়েছিল। প্রায় ১ বছর সময় নিয়ে বানানো হয়েছিল এই পোশাকটি। সম্পূর্ণ পোশাকের ওজন ছিল প্রায় ১৫ কেজি। এত ভারি পোশাক পরে দিনের পর দিন ঘন্টার পর ঘন্টা বেশ চ্যালেঞ্জের সঙ্গেই জাদুর চরিত্রটিকে ফুটিয়ে তুলেছিলেন ইন্দ্রবদন।
ইন্দ্রবদনকে বলিউডে সবাই ‘ছোটে ওস্তাদ’ নামে চেনেন। ১৯৭৬ সালে তিনি বলিউডে এসেছিলেন অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। সেই থেকে সারা জীবনে প্রায় ৩০০ টিরও বেশি ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন। সেই সঙ্গে ‘তারক মেহতা কা উল্টা চশমা’, ‘বালবির’সহ হিন্দি টেলিভিশনের একাধিক সিরিয়ালেও তিনি অভিনয় করেছিলেন।
অনেকেই হয়তো জানেন না হলিউডের মাস্টারপিস ‘লর্ড অফ দ্য রিংস’ এর ‘লর্ড অফ দা রিংস দ্যা ফেলোশিপ অফ দ্য কিং’ সিনেমারও অংশ ছিলেন তিনি। তবুও তিনি সেভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারলেন না। ইন্দ্রবদনর সম্পূর্ণ কেরিয়ারে জাদুর চরিত্রটি তার জন্য অন্যতম মাইলস্টোন বলা যেতে পারে। যদিও গোটা ছবিতে কোথাও তার মুখ দেখানো হয়নি।
এই চরিত্রের জন্য অনেক পরিশ্রম করেছিলেন তিনি। তাকে জিম এবং ডায়েটের মাধ্যমে ওজন কমাতে হয়েছিল। এছাড়া সর্বক্ষণ ভারী কস্টিউম পরে থাকার জন্য তাকে আলাদা করে অক্সিজেন নিতে হত। হিন্দি টেলিভিশন হোক বা সিনেমার পর্দা, বছরের পর বছর চুটিয়ে কাজ করেছেন ইন্দ্রবদন পুরোহিত। তবুও বলিউড থেকে তিনি সেভাবে নামযশ, খ্যাতি কোনও কিছুই পেলেন না। ২০১৪ সালে সকলের অগোচরেই প্রয়াত হন ইন্দ্রবদন। বলিউড থেকে তার নামটা যেন তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই মুছে গিয়েছে।