‘দেখেছ কি তারে, ওই নীল নদীর ধারে’, গানের সুবাদে কয়েক প্রজন্মের মানুষের কাছে ভীষণ পরিচিত নাম শুভমিতা ব্যানার্জী (Subhamita Banerjee)। তার কন্ঠে যেন মা সরস্বতীর বাস। একসময় রিয়েলিটি শো-য়ে মিষ্টি সুরে জাদুতে তিনি মন জয় করেছিলেন বিচারক থেকে শ্রোতা সকলের। দেখতে দেখতে ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি কাটিয়ে ফেললেন বেশ কয়েকটা দশক। কিন্তু এখনকার রিয়েলিটি শো নিয়ে তিনি বেজায় অসন্তুষ্ট।
অথচ এমনই এক রিয়েলিটি শো থেকেই উঠে এসেছিল শুভমিতার নাম। গানের দুনিয়াতে পরিচিতি পেয়েছিলেন তিনি। তবে শুভমিতা মনে করেন তার সময়ের রিয়েলিটি শোয়ের সঙ্গে এখনকার রিয়েলিটি শোয়ের অনেক পার্থক্য রয়েছে। তাদের সময়ে গানের প্রতিযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ ছিল শুধু গান। কিন্তু এখন প্রতিযোগীদের গ্রুমিং এবং সাজসজ্জাও একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে কোথাও যেন ফিকে হয়ে যাচ্ছে গানটাই।
শুভমিতা নিজেও অনেকগুলি রিয়েলিটি শোয়ের বিচারক হিসেবে উপস্থিত থেকেছেন। তাই তিনি রিয়েলিটি শোয়ের সেকাল একালের ফারাকটা হাড়ে হাড়ে অনুভব করেছেন। তিনি দেখেছেন প্রতিযোগীরা গান গাইতে এসেছেন মঞ্চে, বিচারক বসে রয়েছেন সামনেই। সঙ্গে সঙ্গে মেকআপ আর্টিস্ট এসে প্রতিযোগীর চুল ঠিক করে দিলেন। শুভমিতার প্রশ্ন, এই সময় ওই প্রতিযোগীর ধ্যান গানের দিকে থাকা উচিত নাকি সাজগোজের দিকে?
এই যুগের রিয়েলিটি শো মানেই শুধু সাজগোজ আর গ্রুমিং। কিন্তু এমনটা তো ছিল না শুভমিতাদের সময়ে। তারা গান গাইতে আসলে শুধু গানের দিকেই নজর দিতেন। সাজগোজ কিংবা কে কী পোশাক পরে এসেছেন, সেসব দিকে নজর দেওয়ার মানসিকতা তাদের ছিল না। শুভমিতা যখন তার রিয়েলিটি শোয়ের ভিডিওগুলি দেখতে বসেন তখন তার চোখে পড়ে যেমন-তেমন শাড়ি পরে শুধু গান গাওয়াতেই মগ্ন তিনি।
অবশ্য শুভমিতা মনে করেন যুগের চাহিদা মেনে কিছুটা গুমিংয়ের দরকার রয়েছে। কিন্তু তা যেন কখনও সংগীতকে ছাপিয়ে না যায়। সেই সঙ্গে এখনকার প্রজন্মের থেকে তিনি নতুনত্ব খোঁজেন। কারণ তার মনে হয় রিয়েলিটি শোগুলোতে প্রতিযোগীরা পুরনো গানই গেয়ে চলেছেন। সত্যিই কি নতুন কিছু দিতে পারছেন বর্তমান প্রজন্ম শিল্পীরা? অনুষ্ঠানগুলিতে শুধু মিউজিক, পোশাক-পরিচ্ছদ, সাজসজ্জা আর আলোর ঝলকানি। নতুন গান কোথায় দিতে পারছেন নতুন শিল্পীরা?
সংগীতে স্ট্রাইকিং ভয়েস নেই ইন্ডাস্ট্রিতে। সবাই হয় শ্রেয়া ঘোষাল, নয়তো অরিজিৎ সিংকে অনুকরণ করছেন। রেওয়াজ না করলে কন্ঠ তৈরি হয় না। সঙ্গীতের প্রতি মাথা নত না করলে কিছুই শেখা যায় না। আজকের প্রজন্ম একটি-দুটি অনুষ্ঠান করেই নিজেদের শিল্পী ভাবতে শুরু করে। তবে সঙ্গীতের দুনিয়াতে এত বছর কাটিয়ে ফেললেও শুভমিতার মনে হয় তিনি যেন কিছুই করে উঠতে পারেননি। শেখার কোনও শেষ নেই, সিনিয়র হিসেবে নতুন প্রজন্মকে এই বার্তাই দিতে চান শুভমিতা।