এই ৫টি কারণেই রাতারাতি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক মেগা সিরিয়াল

একটা সময় পর্যন্ত দূরদর্শন একা কোটি কোটি দর্শকের কাছে একমাত্র বিনোদনের মাধ্যম ছিল। সারাদিনের একটা বড় অংশ জুড়ে দর্শকদের টিভির সামনে ধরে রাখা যেত। আজ থেকে দশ বছর আগে পর্যন্ত এক একটি সিরিয়াল (Bengali Mega Serial) ৪-৫ বছর অনায়াসে চলেছে। কোনও কোনও সিরিয়াল তো আবার ১২-১৫ বছর পর্যন্ত এগিয়েছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ৩-৪ বছর তো দূর, বেশিরভাগ বাংলা সিরিয়ালের মেয়াদ ১ বছরেরও নিচে নেমে গিয়েছে।

হালফিলের বহু সিরিয়াল কোনওটা ১ বছর, কোনওটা ৮ মাস থেকে ৬ মাস, কোনওটা কোনওটা তো আবার স্রেফ ৩ মাসের মাথাতেও শেষ হয়ে যাচ্ছে। মাধবীলতা, বৌমা একঘর, আয় তবে সহচরী থেকে ধূলোকণা, জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও মাঝপথেই থেমে যাচ্ছে সব সিরিয়ালের যাত্রা। কেন বাংলা সিরিয়ালগুলোর এমন অবস্থা হচ্ছে? কেউ কেউ দায়িত্ব টিআরপিকে, কেউ বলছেন গল্পের মান নেমে যাওয়ার কারণে দর্শক হারাচ্ছে বাংলা সিরিয়াল। এই বিষয়ে ইন্ডাস্ট্রির কলাকুশলীরা কী ভাবছেন?

বাংলা সিরিয়ালের প্রবীণ অভিনেতা ফাল্গুনী চ্যাটার্জী এই প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলের কাছে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেন, ‘টিআরপি সবটা নিয়ন্ত্রণ করে। রেটিং ভালো না হলে বিজ্ঞাপন আসবে না। তাই চ্যানেল কর্তৃপক্ষ সিরিয়াল বন্ধ করে দেন। অথচ আমিই এমন সিরিয়ালে অভিনয় করেছি, যেগুলি সাত-আট বছর চলেছে।’ আর্টিস্ট ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক শান্তিলাল মুখার্জীর দাবি এখন চ্যানেল কর্তৃপক্ষ ঠিক করে দেয় কোন দৃশ্য দেখানো হবে। যার ফলে কাহিনী রচয়িতা, চিত্রনাট্যকারদের ভূমিকা কমে গিয়েছে।

অভিনেত্রী বিদিপ্তা চক্রবর্তী সরাসরি গল্পের খারাপ মানকেই দায়ী করেছেন। তার কথায়, যারা আগে অভিনয় করতেন, তারা এখনও অভিনয় করছেন। তিনি মনে করেন সিরিয়ালের ক্ষেত্রে গল্প, চিত্রনাট্যই হল আসল। গল্প খারাপ মানের হলে অভিনেতারা আর কী করবেন? অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায় থেকে দেবদূত ঘোষ, সকলেরই একই বক্তব্য। দেবদূতের কথায়, ‘শুরুতে কাহিনি যে অপছন্দ হয় তা নয়। কিন্তু পরে গল্প বদলে যায়। তখন ছেড়ে দেওয়া যায় না যেহেতু চুক্তি থাকে। তার উপর এটাই আমাদের উপার্জনের জায়গা।’

রাতারাতি ধারাবাহিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে কাজ হারাচ্ছেন শিল্পীরা। অভিনেতা বাদশা মৈত্রের কথায় এটাই উদারনৈতিক অর্থনীতির নিয়ম। তার সাফ কথা, ‘যখন-তখন কাজ হারাব, এটা জেনেই শিল্পী হয়েছি। একটা নোটিসে যদি কারখানা বন্ধ করা যায়, তা হলে টিভি ইন্ডাস্ট্রিতে অন্যরকম কিছু কী করে হবে?’ অন্যদিকে প্রযোজক তথা চিত্রনাট্যকার লীনা গাঙ্গুলী কিন্তু সরাসরি দর্শকদেরই দায়ী করেছেন।

লীনা গাঙ্গুলীর কথায়, ‘দর্শকের এখন আর আগের মতো ধৈর্য নেই। তাদের সামনে বিনোদনের অনেক বিকল্প। তাই তারা যতদিন দেখবেন, ততদিন সিরিয়াল চলবে। অভিনেতা, টেকনিশিয়ানরাও এটা জানেন। এই অনিশ্চয়তা অন্য কাজের ক্ষেত্রেও আছে।’ অরিন্দম গাঙ্গুলী মনে করেন সরকারি গণমাধ্যম যদি দূরদর্শনের পাশে দাঁড়াত তাহলে বাণিজ্যিক চ্যানেলগুলো প্রতিযোগিতার মুখে পড়তো। তার কথায়, “সরকার এসব ভাবে না, তারাই কর্পোরেটের কাছে বিকিয়ে গিয়েছে।”