বাংলা টেলিভিশন (Bengali Telivision) থেকে টলিউড (Tollywood), অবাধ বিচরণ ছিল তার। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত থেকে শুরু করে দেবশ্রী রায়, ইন্দ্রানী হালদার শ্রীলেখা মিত্রদের মত বড় মাপের অভিনেত্রীদের সঙ্গে তিনি চুটিয়ে অভিনয় করেন পর্দাতে। সেই সময় তিনি দর্শকদের কাছে অত্যন্ত পছন্দের একজন অভিনেতা ছিলেন। তবে আজ এত বছর পরে আর কেউ মনে রাখেনি তাকে। এমনকি তার শেষ পরিণতির কথাটাও অনেকেরই জানা নেই।
টেলিভিশনের এই সুদর্শন অভিনেতার নাম ছিল কুনাল মিত্র (Kunal Mitra)। খুবই অল্প বয়সে মর্মান্তিক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। তবে তার আগে তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে যে কাজগুলি করে গিয়েছেন তাতে তাকে দর্শকরা পুরোপুরি ভুলে যেতে পারবেন না। ১৯৬৫ সালে ৩০ শে এপ্রিল কলকাতাতে তার জন্ম হয়েছিল। তার আসল নাম ছিল বাসক মিত্র। ১৯৯৪ সালে আলফা বাংলার সিরিয়াল ‘এবার জমবে মজা’ দিয়ে তিনি শুরু করেন তার কেরিয়ার।
ইন্ডাস্ট্রিতে শোনা যায় তিনি নাকি পরিচালক দেবকি কুমার বসুর নাতি। একসময় বাংলা টেলিভিশনের সুদর্শন অভিনেতাদের মধ্যে তাকে গণ্য করা হত। সেই সঙ্গে দারুণ গুণী অভিনেতা ছিলেন কুনাল। তখন তার জনপ্রিয়তাও বেশ বাড়তে থাকে। বাংলা টেলিভিশনে থেকে কাজ করাকালীন তার কাছে টলিউডের প্রস্তাব আসতে খুব একটা দেরি হয়নি।
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর বিপরীতে ‘আলো’ ছবিটি তার কেরিয়ারের অন্যতম অবদান। এছাড়া ঋতুপর্ণা এবং কুনাল ‘সংশয়’ ছবিতেও অভিনয় করেন। এর পাশাপাশি ‘নেতাজি সুভাষ’, ‘জাহাঙ্গীরের স্বর্ণ মুদ্রা’, ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’, ‘আপন হল আপন’, ‘যুগান্ত’, ‘ফেরারি ফৌজ’, ‘রাঙ্গামাটি’ ইত্যাদি বিভিন্ন ছবিতে তিনি অভিনয় করেন। টেলিভিশনে তার অভিনীত জনপ্রিয় ধারাবাহিক ছিল ‘রাজাগজা’।
‘রাজা-গজা’ ধারাবাহিকে জনার্দন জনা নামের একটি মজার চরিত্রে তিনি অভিনয় করতেন। সেই সময় কিন্তু অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রের সঙ্গে তার জুটিটা দারুণ পছন্দ করতেন টেলিভিশনের দর্শকরা। পর্দাতে তাদের রসায়নটা এতটাই বাস্তব বলে মনে হত যে দর্শকদের ধারণা ছিল তারা নাকি গোপনে বিয়ে করেছেন! তবে অভিনেতার স্ত্রীয়ের নাম রুমা মিত্র। তাদের দুই সন্তানও রয়েছেন।
‘ছ-এ ছুটি’ ছবিটি ছিল কুনাল মিত্র অভিনীত শেষ ছবি। তারপরে তিনি অভিনয় করতেন ‘উৎসবের রাত্রি’ নামের একটি সিরিয়ালে। ইন্দ্রপুরী সেটে শুটিং চলাকালীন আচমকাই একদিন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়। তার এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত ছিল না টলিউড। কিন্তু ১৩ বছর পার করে আজ আর অভিনেতাকে কজনই বা মনে রেখেছেন? তবে না তার সহকর্মীরা কিন্তু আজও তার মৃত্যুবার্ষিকীতে একবার হলেও তাকে স্মরণ করতে ভোলেন না।
এদের মধ্যে রয়েছেন শ্রীলেখা মিত্র। কুণালের সম্পর্কে বলতে গিয়ে অভিনেত্রী বলেন, ‘১৩ বছর হয়ে গেল, কুনাল নেই, ইন্ডাস্ট্রির মনে নেই। আমিও কাল মরলে পরশু সবাই ভুলে যাবে।’ অভিনেতা ভাস্বর চ্যাটার্জীও অভিনেতার একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করে পুরনো দিনের স্মৃতিচারণ করেছেন। সেই সঙ্গে তার অকাল মৃত্যু নিয়ে দুঃখ প্রকাশও করেছেন ভাস্বর।