বাংলার গর্ব, বাঙালির আবেগ সত্যজিৎ রায় (Satyajit Ray) এবং তার অমর সৃষ্টি পথের পাঁচালী (Pather Panchali)। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী রচনা পথের পাঁচালীকে পর্দাতে সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন সত্যজিৎ রায়। ছোট্ট অপু-দুর্গা তো আজ এত বছর বাদেও দর্শকদের মনের মধ্যে জীবন্ত। ১৯৫৫ সালে সত্যজিৎ রায় যে অনন্য সৃষ্টি উপহার দিয়েছিলেন বাংলাকে তার সদস্য ছিলেন উমা দাশগুপ্ত (Uma Dasgupta)।
উমা দাশগুপ্তই ছিলেন সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালীর ছোট্ট দুর্গা। এই ছবি বানানোর জন্য চরিত্রগুলোকে প্রাণবন্ত করে তুলতে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে অভিনেতা এবং অভিনেত্রীদের নিয়ে এসেছিলেন সত্যজিৎ রায়। বিশেষত দুর্গা চরিত্রটিকে নিজের মনের মত করে পর্দাতে সাজিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। গ্রামের দস্যি মেয়ে হিসেবে চরিত্রে প্রাণ ঢেলে অভিনয় করেছিলেন উমা দাশগুপ্ত।
তিনি ছোটবেলা থেকেই নিয়মিত স্কুল থিয়েটারে অভিনয় করতেন। তার স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে সত্যজিৎ রায়ের পরিচয় ছিল। তাকেই দুর্গার চরিত্রে অভিনয়ের জন্য অভিনেত্রীর খোঁজ দেওয়ার ভার দিয়েছিলেন পরিচালক। করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি এই ছবিতে সর্বজয়ার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তার চেহারার সঙ্গে উমা দাশগুপ্তের তৎকালীন সময়ের চেহারার মিল ছিল। উমাকেই তাই দুর্গা হিসেবে বেছে নেন সত্যজিৎ রায়।
যদিও উমা দাশগুপ্তের বাবা চাননি তার মেয়ে সিনেমাতে অভিনয় করুন। রক্ষণশীল পরিবারের তরফ থেকে এসেছিল প্রবল বাধা। তবে শেষমেষ তিনি মত দেন। দস্যি মেয়ে অপু সারাদিন বনে বাদাড়ে ঘুরে ঘুরেই দিন কাটাতো। দিদির চোখ দিয়েই প্রকৃতিকে দেখতে শুরু করে অপু। দিদির সংস্পর্শে বড় হতে হতে প্রকৃতির প্রতি আলাদাই এক টান গড়ে ওঠে অপুরও।
দুর্গার মৃত্যু শুধু অপুর মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছিল তা নয়, তার মৃত্যু বাঙালিকেও কাঁদিয়েছে। এই ছবি পরবর্তী দিনে অস্কারের জন্য মনোনীত হয়। সত্যজিৎ রায়ের অমর সৃষ্টি হিসেবে আজীবন প্রশংসা পাবে পথের পাঁচালী। ছবিতে উমাকে দুর্গা হিসেবে সাদরে গ্রহণ করেছিলেন দর্শকরা। সেই অভিনেত্রী আজ কোথায়?
শোনা যায় যখন এই সিনেমাটি তৈরি করা হচ্ছিল তখন নাকি টাকা-পয়সার চরম অভাব ছিল। আর্থিক মন্দার কারণে ছবির বেশ কিছু কলা-কুশলী পারিশ্রমিক নেননি। উমা দাশগুপ্তও ছিলেন তাদেরই একজন। তিনিও সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকের সত্যজিৎ রায়ের ছবির নায়িকা হয়েছিলেন। সত্যজিতের ছবিতে কাজ করাটাই ছিল তার কাছে সব থেকে বড় পাওনা।
পথের পাঁচালীর জনপ্রিয়তার প্রসঙ্গ উঠলে নিঃসন্দেহে উমা দাশগুপ্তের অবদানের বিষয়টাও উঠে আসে। ছবিতে অভিনয় করার দরুন দারুণ প্রশংসা পেয়েছিলেন তিনি। পথের পাঁচালী কালো জয়ী হওয়ার পিছনে এই শিল্পীর অবদান অনস্বীকার্য।