৩০ বছর বয়সেই শাহরুখ, সালমান, মাধুরীর মা! রিমার প্রয়াণে মাতৃহারা বলিউড

যে সময় পর্দায় নানাধরনের এক্সপেরিমেন্টাল চরিত্রে অভিনয় করার কথা, সেই সময়ই ‘মা’য়ের তকমা সেঁটে গিয়েছিল তার গায়ে। তিনি অভিনেত্রী রিমা লাগু (Reema Lagoo)। সঞ্জয় দত্ত থেকে শুরু করে জুহি চাওলা, সালমান খান, শাহরুখ খান, মাধুরী দীক্ষিতের মত বলিউড (Bollywood) তারকাদের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মনে দাগ কেটেছিলেন তিনি। পর্দায় অন্তরঙ্গ দৃশ্যে অভিনয় করতে স্বচ্ছন্দ ছিলেন না, তাই নায়ক-নায়িকার মা হয়েই অভিনয়ের সাধপূরণ করেছিলেন তিনি।

তার আসল নাম নয়ন ভাড়গড়ে। ১৯৫৮ সালের ২১শে জুন তার জন্ম হয়েছিল। তার মা ছিলেন মারাঠি সিনেমা জগতের অভিনেত্রী। সেই সূত্রে অভিনয়ের শখ ছিল তার। থিয়েটারের মাধ্যমে অভিনয়ের হাতে খড়ি হয়েছিল রিমার। থিয়েটারে অভিনয় করে মারাঠি থিয়েটার জগতে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে যান তিনি। কিন্তু থিয়েটার করে সংসার চালানো সহজ ছিল না। তাই বিকল্প উপার্জনের রাস্তা খুঁজে নিতে হয় তাকে।

কেরিয়ারের শুরুতে ব্যাঙ্কে চাকরি পেয়েছিলেন রিমা। এরপর প্রেম আসে তার জীবনে। বিবেকের সঙ্গে প্রেম করে ১৯৭৮ সালে তাকে বিয়ে করেন রিমা। তবে সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর ভেঙে যায় তাদের সংসার। বিচ্ছেদের পরই সিনেমাতে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন রিমা। মারাঠি ছবির মাধ্যমেই অভিনয় জগতে তার যাত্রা শুরু হয়। মারাঠি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ‘সিংহাসন’ ছবির হাত ধরে আবার অভিনয়ে প্রবেশ করেন অভিনেত্রী।

এইভাবে অভিনয় করতে করতেই একসময় মুম্বাইয়ের পৃথ্বী থিয়েটারের লেখক পি এল দেশপান্ডের ‘মাই ফেয়ার লেডি’ নাটকে অভিনয় করার সুযোগ পান। সেই সময় পৃথ্বীর মালিক ছিলেন শশী কাপুর। রিমার অভিনয় দক্ষতা তার নজরে পড়েছিল। এরপর তাকে আর ঘুরে তাকাতে হয়নি। ‘কলিযুগ’ ছবিতে কাজের সুযোগ পান তিনি। তারপর সেই ছবির পরিচালক গোবিন্দ নিহালানির ‘আক্রোশ’-এও আবার সুযোগ পেয়েছিলেন রিমা।

তবে ‘আক্রোশ’ ছবিতে কুলভুষণ খরবন্দার সঙ্গে শয্যাদৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়ে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়ে যান তিনি। এরপর ১৯৮৮ সাল থেকে তিনি বলিউড নায়ক-নায়িকাদের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে আসছেন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৩০ বছর। আমির খান এবং জুহি চাওলার ‘কয়ামত সে কয়ামত তাক’ ছবিতে জুহি চাওলার মায়ের প্রস্তাব পেয়ে ‘হ্যাঁ’ বলে দেন অভিনেত্রী। সেই থেকে বলিউডে মায়ের চরিত্রে তার যাত্রা শুরু হয়।

এক টানা ৩০ বছর তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে মায়ের ভূমিকা পালন করেছেন। এই চরিত্র থেকেই তিনি অনেক খ্যাতি এবং অসংখ্য দর্শকের ভালোবাসাও পেয়েছেন। কিন্তু অভিনয় করতে করতে শুটিং ফ্লোরে আচমকা হৃদরোগে আক্রান্ত হন অভিনেত্রী। সালটা ছিল ২০১৭, ১৭ই মে। মহেশ ভাটের ‘নামকরণ’ ধারাবাহিকের শুটিং চলাকালীন তার বুকে ব্যথা শুরু হয়। তড়িঘড়ি মুম্বাইয়ের হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। হাসপাতালে মাত্র ৫৯ বছর বয়সেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার প্রয়াণে ‘মাতৃহারা’ হয়ে পড়ে গোটা বলিউড।