“ছিঃ ছিঃ ছিঃ রে ননী ছিঃ…’’ সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় এই গানে। গানের ভাষা বুঝুন বা বুঝুন, ট্রেন্ডিং এই গানে রিল বানাতে ব্যস্ত গোটা নেটপাড়া। ভাইরাল এই গানের মানে কী? গানের যে দুটি চরিত্রকে নিয়ে এত মাতামাতি সেই ননী এবং তার প্রেমিকের চরিত্রেই বা অভিনয় করেছেন কারা? আজ আপনাদের শোনাবো এই ভাইরাল গান বানানোর পেছনের আসল গল্প। শুনবেন ভাইরাল এই গানের সম্পর্কে নানা জানা কথা।
ননীকে ভালোবেসে তাকে নিয়ে ঘর করার স্বপ্ন দেখে গ্রাম ছেড়ে কাজের সন্ধানে গিয়েছিল এক গরিব যুবক। টাকা উপার্জন করে ফিরে আসার পর জানতে পারে তার ননীর বিয়ের জন্য পাত্র দেখা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই তার বিয়ে হয়ে যাবে অন্য কারও সঙ্গে। এই কথা শুনে তার মন ভেঙে যায়। বুক ফাটা সেই যন্ত্রণা গান হয়ে বেরিয়ে আসে। সেই গান এখন ভাইরাল। ওড়িশার এই গান এখন গোটা পৃথিবীতে ভাইরাল। ১২০ কোটির বেশিবার গানটি শোনা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে অন্তত এক লক্ষের বেশি মানুষ এই গান নিয়ে রিলস বানিয়েছেন।
গানের পাঞ্চ লাইন “ছিঃ ছিঃ ছিঃ রে ননী ছিঃ…’’ -ই মানুষের সব থেকে বেশি মনে ধরেছে। তবে গোটা গানের মানেটা কিন্তু খুবই হৃদয়বিদারক। গানের মানেটা এইরকম –
প্রতিদিন ছোট ছোট আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করতাম/ প্রতিদিন বিনোদন ও আনন্দের ব্যবস্থা করতাম/ আমি তোমার মা-কে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলাম/ অনেক বার বলেছি, আমার কাছে কেমন ছিলে তুমি/ আমি যখন আমার গ্রাম থেকে ফিরলাম, তুমি কী করে সব ভুলে গেলে?/ এটা সত্যিই লজ্জার, ননী/ তুমি শুধুই সম্পত্তি দেখলে, কিন্তু আমার ভালোবাসার প্রকৃত মূল্য দিতে পারলে না/ তুমি সোনা ও দামি গয়না চিনতে পেরেছ। কিন্তু, প্রকৃত মানুষ চিনতে পারোনি/ আমার সম্পত্তির অভাব ছিল বলে তুমি আমাকে এ ভাবে ছেড়ে দিয়েছ/ তুমি বুঝতে পারোনি যে, যার কাছে সম্পদ আছে, তার হৃদয় নেই/ তুমি আমাদের অতীতের সব কথাও ভুলে গিয়েছ।আমি তোমার কথা রেখেছি, তোমায় দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছি। এবং তুমি যা চেয়েছ সবই করেছি/ আমি তোমাকে সব রকম উপহার কিনে দিয়েছি/ আমি রঙিন সুতো রেখেছিলাম আমার ভালোবাসার চিহ্ন হিসেবে/ এমনকী আমি আমাদের বাড়িতে অনুষ্ঠানের জন্য একটি ছাগলও কিনেছিলাম/ তুমি আমার সব আশা নষ্ট করে দিলে। ননী, কেন তুমি আমাকে এই ব্যথা দিলে?/ আমি গ্রাম থেকে ফিরে দেখলাম, তুমি কী করে সব ভুলে গেলে?/ লজ্জার ননী/ এটা অত্যন্ত লজ্জার।
ভাইরাল এই গানের জন্ম কিন্তু আজ নয়, বরং ২০ বছর আগে। সেই হিসেবে এটা এই গানের পুনর্জন্ম বলা যেতে পারে। দুই দশক আগে গানটি লিখেছিলেন ওড়িশার বিখ্যাত গায়ক তথা গীতিকার সত্যনারায়ণ অধিকারী। ১৯৯৫ সালে গানটি প্রথমবার রেকর্ড করা হয়। ২০০৫ সালে প্রযোজক সীতারাম আগরওয়াল এই গানের উপর একটি ভিডিও বানানোর কথা ভাবেন। সেই মত ভিডিওর জন্য গল্প তৈরি করেন পরিচালক মনোভঞ্জন নায়ক। নায়কের ভূমিকায় বেছে নেওয়া হয় সম্বলপুরের বিশিষ্ট থিয়েটার শিল্পী বিভূতি বিশ্বালকে। তিনি সম্বলপুরের গোবিন্দটোলার বাসিন্দা। থিয়েটারই তার ধ্যান এবং জ্ঞান। তিনি আকাশবাণী সম্বলপুরের সঙ্গে যুক্ত এবং পার্ট টাইম আর্ট টিচার হিসেবেও কাজ করেছেন।
আরও পড়ুন : ‘ছিঃ ছিঃ ছিঃ রে ননি ছিঃ’ গানটি বাংলায় হলে কেমন হত? শুনে নিন বাংলা ভার্সন
বিভূতির গ্রাম্য চেহারা এবং অভিনয় দক্ষতা দেখেই পরিচালকের পছন্দ হয়েছিল তাকে। যদিও এর আগে কখনও ক্যামেরার সামনে আসেননি বিভূতি। কিন্তু পরিচালক ভরসা রেখেছিলেন তার উপর। বিভূতিও নিরাশ করেননি। পিটাপালি এবং জামদারপালি গ্রামে এই মিউজিক ভিডিওর শুটিং করা হয়েছিল। এই গানটিকে নিয়ে ওই সময় বেশ আশাবাদী ছিলেন নির্মাতারা। গানটি সেই সময় অল্প বিস্তর মানুষ দেখলেও সেভাবে ভাইরাল হয়নি।কিন্তু নির্মাতারাও ভাবতে পারেননি ২০ বছর পর এই গান হঠাৎ এইভাবে কোটি কোটি মানুষের মন জয় করে নেবে।