রিয়েল সিংঘম! সইফ আলি খানের উপর হামলার তদন্ত করবেন ‘আন্ডারওয়ার্ল্ডের ত্রাস’ এই অফিসার

সইফ আলি খানের উপর প্রাণঘাতী হামলার তদন্ত করবেন এই পুলিশ অফিসার। ‘এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট’ হিসেবে পরিচিত মুম্বাই ক্রাইম ব্রাঞ্চের এই অফিসারের নাম দয়া নায়ক। যার নামেই থরথর করে কাঁপে অপরাধীরা। বলিউড তারকা সইফ আলি খানের উপর হামলা চালিয়েছিল যে দুষ্কৃতী, এবার সেই ঘটনার তদন্ত ভার গেল এই দুঁদে অফিসারের হাতে। আজ আপনাদের আলাপ করাবো বাস্তবের আসল সিংঘমের সঙ্গে।

সইফের উপর হামলার খবর পেয়ে ওই রাতেই মুম্বাই পুলিশ অফিসাররা পৌঁছে যান ঘটনাস্থলে। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দয়া নায়ক। শুধু ছোটখাটো চোর-ডাকাত নয়, মুম্বাইয়ের কুখ্যাত আন্ডারওয়ার্ল্ডের কুখ্যাত গ্যাংস্টারদের কাছেও তিনি যম। ১৯৯০ এর দশকে মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে জড়িত ৮০ জনেরও বেশি গ্যাংস্টারকে গুলি করে এনকাউন্টার করে মুম্বাইকে আন্ডারওয়ার্ল্ডের ভয় মুক্ত করেছিলেন দয়া নায়ক। তার নিজের জীবনের গল্পটাও সিনেমার থেকে কম নয়।

 Daya Nayak

ছোটবেলা কেমন কেটেছিল পুলিশ অফিসার দয়া নায়কের?

এহেন দয়া নায়কের জন্ম হয় কর্নাটকের উদুপির একটি কোঙ্কনি পরিবারে। তিনি তার গ্রামেরই একটি কন্নড় মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। তারপর পরিবারের জন্য দুটো টাকা রোজগার করতে পড়াশোনা ছেড়ে মুম্বাই চলে যেতে হয় দয়াকে। সেখানে গিয়ে প্রথমে একটি হোটেলে চাকরি নিয়েছিলেন তিনি। যে হোটেলে কাজ করতেন, সেই হোটেলেরই বারান্দাতে জুঁটেছিল তার ঠাঁই। দিনভর কঠোর পরিশ্রম করেও দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন দয়া।

এখানেই শেষ নয়। স্কুলের পাঠ চুকিয়ে দয়া নায়ক এরপর আন্ধেরির সিইএস কলেজে স্নাতক স্তরে ভর্তি হন। ওই সময় নারকোটিক্স ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন পুলিশ অফিসারের সঙ্গে তার আলাপ হয়েছিল। তাদের দেখে এই পুলিশ অফিসার হওয়ার ইচ্ছে চেপে বসে তার মনে। ১৯৯৫ সালে পুলিশ একাডেমী থেকে স্নাতক পাস করে তিনি জুহু পুলিশ স্টেশনের সাব ইন্সপেক্টর হিসেবে নিযুক্ত হন। সেই সময় মুম্বাইতে আন্ডারওয়ার্ল্ডের রাজত্ব চলত। চাকরিতে যোগদানের এক বছরের মধ্যে ১৯৯৬ সালে মুম্বাইয়ের জুহুতে ছোটা রাজন নামে পরিচিত দুই গ্যাংস্টারকে হত্যা করেন। এতে পুলিশ মহলে তার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ওঠে। রাতারাতি নায়ক বনে যান তিনি।

আরও পড়ুন : কি দেখে ঘরে এল চোর? কত টাকার মালিক সেইফ আলি খান?

 Daya Nayak

আন্ডারওয়ার্ল্ডের ত্রাস দয়া নায়ক

সেই থেকে আন্ডারওয়ার্ল্ড নিধন যজ্ঞে নেমে পড়েন দয়া নায়ক। কয়েক বছরের মধ্যেই একের পর এক গ্যাংস্টারকে খতম করে তিনি মুম্বাইকে সন্ত্রাসমুক্ত করেন। যদিও তার নিজের জীবনেও বিতর্ক কিছু কম ছিল না। তার বিরুদ্ধেও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। ২০০৪ সালে মহারাষ্ট্র কন্ট্রোল অফ অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যাক্ট অ্যান্টি কোরাপশন ব্যুরোকে দয়া নায়কের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেয়। তদন্ত চলাকালীন দয়া নায়ককে গ্রেপ্তারও করেছিল ACB। যদিও ২০১২ সালে তাকে আবার অ্যাডিশনাল কমিশনার অফ পুলিশ কন্ট্রোল রুমে পুনর্বহাল করা হয়। সেই দয়া নায়কের নাম আবার উঠে এল বলিউড তারকা সইফ আলি খানের উপর হামলার মামলায়। আসলে এই ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে রীতিমত সন্ত্রস্ত গোটা মুম্বাই।

আরও পড়ুন : সইফ-অমৃতার বিয়ের সময় কত বয়স ছিল হবু বউ করিনার?

 Daya Nayak

কী ঘটেছিল সইফ আলি খানের উপর হামলার দিনে

গত বৃহস্পতিবার রাতে মুম্বাইয়ের বান্দ্রাতে নিজেরই অ্যাপার্টমেন্টে বহিরাগত দুষ্কৃতীর হামলার মুখে পড়েন সইফ। এই ঘটনায় রীতিমত শোরগোল পড়ে গিয়েছে বলিউডে। বৃহস্পতিবার ভোর রাতে সইফের বাড়িতে চুরি করতে আসে ওই দুষ্কৃতি। করিনা কাপুর তখন নাইট পার্টিতে ছিলেন। ‌বাড়িতে ছিলেন সইফ এবং কিছু পরিচারক। করিনাই নাকি লেট নাইট পার্টি থেকে ফিরে ওই দুষ্কৃতিকে আগে দেখতে পান। তার সঙ্গে ছিল ছোট ছেলে জেহও। ভীষণ ভয় পেয়ে চেঁচামেচি জুড়ে দেন করিনা। স্ত্রীর চিৎকার শুনে ছুটে আসেন সইফ। ছেলেকে নিয়ে কোনরকমে বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়েন করিনা। আর ওই দুষ্কৃতি প্রথমে সইফের কাছে ১ কোটি টাকা দাবি করে। তারপর ধারালো ছুরি দিয়ে একের পর এক আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে দেয় সইফকে। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান ছেলে ইব্রাহিম। তার কোমরে ও পিঠের একাধিক জায়গায় গভীর ক্ষত ছিল। প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা অপারেশনের পর আপাতত বিপদমুক্ত রয়েছেন সইফ।