অঞ্জন দত্তের বেলা বোস আজ কোথায়, কেমন আছেন তিনি

আজও বেঁচে আছেন অঞ্জন দত্তের (Anjan Dutt) বেলা বোস (Bela Bose)? নিছক ব্যর্থ প্রেমের কল্পনা নন, বেলা বোসের অস্তিত্ব সত্যিই ছিল। তবে অঞ্জন দত্তের গানের মত সত্যিই কি অত স্বার্থপর ছিলেন তিনি? অঞ্জন দত্তের বেলা বোস বেকার প্রেমিককে ছেড়ে মা-বাবার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করে সুখের সাগরে ভেসেছিলেন। বাস্তবের বেলা বোসের জীবন কিন্তু অত সুখের ছিল না। জীবনে প্রতি পদে পদে কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছে তাকে।

বেকার প্রেমিককে ছেড়ে প্রতিষ্ঠিত পুরুষকে বিয়ে করা স্বার্থপর, লোভী, কঠিন মনোভাবের মেয়ে হিসেবেই বেলা বোসকে চেনে বাঙালি। তবে বাস্তবে আরও এক বেলা বোস ছিলেন যাকে সকলেই ভুলেছেন প্রায়। কিন্তু তাকে মনে রাখবেন ষাটের দশকের বলিউড প্রেমীরা। এই বেলা বোসের জন্ম হয়েছিল ১৯৪১ সালে। তার জন্মও অবশ্য কলকাতাতেই। বেলা বোসের বাবার ছিল কাপড়ের ব্যবসা। ৫ সন্তানকে নিয়ে কোনওরকমে দিন চলতো এই মধ্যবিত্ত পরিবারটার। হঠাৎ একদিন বাবার কাছে সুযোগ আসে মুম্বাইতে গিয়ে ব্যবসা করার। গোটা পরিবার তখন পাড়ি দেয় মুম্বাই। এর সঙ্গে সঙ্গে বেলা বোসের ভাগ্যও নতুন মোড় নেয়।

Bela Bose

ছোট থেকেই নাচতে খুব ভালোবাসতেন বেলা। মুম্বাইতে গিয়ে যখন সংসারের হাল একটু শুধরালো তখন বাবা ভর্তি করালেন নাচের স্কুলে। সেই স্কুলের মাস্টারমশাই ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে পারিশ্রমিক নিতেন না। বদলে ছাত্রছাত্রীদের বিনা পারিশ্রমিকে বাইরে নাচ-গানের মঞ্চে অনুষ্ঠান করাতেন। এই ভাবেই ছোটখাটো প্রোগ্রাম আর নাচের তালিম নিয়ে এগোচ্ছিলেন বেলা। সেখান থেকেই হঠাৎ একদিন সিনেমাতে নাচের প্রস্তাব এলো। ধীরে ধীরে বলিউডের সঙ্গেও তার পরিচিতি বাড়ছিল। হঠাৎই একদিন বেলার জীবনে নেমে এলো অন্ধকার।

হঠাৎ করেই অসময়ে মারা গেলেন বেলার বাবা। মুম্বাইয়ের বুকে ৫ সন্তানকে নিয়ে প্রায় পথে বসার দশা হল মায়ের। তখন সংসারের হাল ধরতে হয় বেলাকে। সেই সময় বলিউডে নাচ এবং গানের দৃশ্যের জন্য প্রচুর ডান্সার প্রয়োজন হত। তবে প্রথম প্রথম সেখান থেকে বাদ পড়তে শুরু করেন বেলা। তার উচ্চতা এবং দেহের গড়ন পরিচালকদের চোখে ছিল বেমানান। কিন্তু হাল ছাড়েননি বেলা। ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়েই যেতে থাকেন তিনি। নাচের তালিম নিতে নিতে নিজেকে সমসাময়িক দিক থেকে অনেক বেশি দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে থাকেন। এরপর একদিন তার নাচই হয়ে উঠল তার অস্ত্র। তখন পরিচালকরা সোলো ডান্সার হিসেবে ডাকতে শুরু করলেন বেলাকে।

Bela Bose

বেলার চেহারার বিশেষ ফিচার্স তখন হয়ে উঠল তার ইউএসপি। বহু সিনেমার জন্য তিনি সোলো ডান্সার হিসেবে ডাক পেতে থাকেন একের পর এক। আবার ‘নাগিন অর সপেরা’ ছবিতে নায়িকা চরিত্রও পেলেন। এরপর আর ঘুরে তাকাতে হয়নি বেলা বোসকে। এরপর কাজের সুবাদেই তার আলাপ হয় পরিচালক তথা লেখক তথা অভিনেতা আশিষ সেনগুপ্তের সঙ্গে। প্রেম করে বিয়ে করে ফেললেন দুজনে। অঞ্জন দত্তের বেলা বোস পাননি তার প্রেমিককে। কিন্তু বাস্তবের বেলা বোস বিয়ে করেছিলেন ভালোবেসেই। বিয়ের পর আর কাজের জগতে ফেরেননি বেলা। বলিউড থেকে চিরতরে বিদায় নিয়ে সংসারেই মন দেন তিনি। স্বামী এবং সন্তানদের নিয়ে সুখের সংসার শুরু করেন।

আরও পড়ুন : যৌনকর্মী থেকে অভিনেত্রী, নটি বিনোদিনীর করুণ জীবন কাহিনী

Bela Bose

আরও পড়ুন : অরিজিৎ সিংয়ের প্রথম স্ত্রী কে? কাকে ডিভোর্স দিয়ে কোয়েলকে বিয়ে করেছেন অরিজিৎ?

বেলা বোসের ছেলেমেয়েরাও সুপ্রতিষ্ঠিত। তার মেয়ে মঞ্জুশ্রী ডাক্তার হয়েছেন। ছেলে অভিজিৎ সেনগুপ্ত একটি নামী বহুজাতিক সংস্থার কাজ করেন এখন ছেলেমেয়ে নাতি-নাতনিদের নিয়ে বেশ সুখে কেটেছে তার শেষ জীবন। ২০২৩ সালের ১লা জানুয়ারি ৮০ বছর বয়সে বেলা বোসের মৃত্যু হয়। প্রথম জীবন খুবই কষ্টে কাটলেও নিজের পরিশ্রম এবং যোগ্যতা দিয়ে বেলা বোস তার কেরিয়ারে সাফল্যের চূড়া ছুঁয়েছিলেন। পরে অবশ্য সংসারের জন্য তিনি সবকিছুই ছেড়ে দেন।