কোথায় হারিয়ে গেলেন বাংলা ছবির ডাকসাইটে ভিলেন সুমিত গাঙ্গুলী (Sumit Ganguly)? যার কটা চোখের চাউনি দেখলেই শিউরে উঠতেন দর্শকরা। প্রসেনজিৎ, চিরঞ্জিত, জিৎ থেকে দেব, টলিউডের তাবড় তাবড় অভিনেতাদের বিপরীতে টক্কর দিয়ে অভিনয় করেছেন তিনি। কিন্তু এখন আর বাংলা সিনেমাতে দেখা যায় না সুমিত গাঙ্গুলীকে। কেন জানেন?
৯০ এর দশকে বাংলা সিনেমাগুলোতে ভিলেন মানেই সুমিত গাঙ্গুলীর জায়গা ছিল বাঁধা। ১৯৯৩ সালে ‘তোমার রক্তে আমার সোহাগ’ সিনেমা দিয়ে তিনি টলিউডে পা রাখেন। এরপর তাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ৩০ বছর ধরে ৩০০ এর বেশি সিনেমাতে কাজ করে ফেলেছেন তিনি। তিনি এমন ভয়ানক ভিলেন ছিলেন, ৯০ এর দশকের মায়েরা ছোট ছোট বাচ্চাদের খাওয়াতে, ঘুম পাড়াতে এবং স্কুলে পাঠাতে তার নাম করে ভয় দেখাতেন। দর্শকদের মধ্যে তার কদর কমেনি। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি তার প্রতি বিমুখ। এমনকি সুমিত নিজেও এখনকার সিনেমার কনটেন্টের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেন না। তার কথায়,
‘‘এখন যে সমস্ত ছেলেমেয়েরা এসেছে সবকটা আঁতেল। সিনেমাই বোঝে না তারা। অদ্ভূত অদ্ভূত সব সাবজেক্ট নিয়ে ছবি তৈরি হচ্ছে। একটা হাত নেই, একটা পা নেই, সে নাকি হিরো! এমন আসছে, হাঁটতে পারে না, চলতে পারে না, বাজারে গিয়ে টমেটো দর করছে, পচা মাছ দর করছে, একটা ছোট্ট ঘিনঘিনে বস্তিতে থাকে, সে হিরো। দর্শকদের ভালো লাগবে দেখতে? আইনক্সে ঝকঝকে পর্দায় বসে দেখছে, একটা নোংরা বস্তি সাবজেক্ট। চলবে সেই সিনেমা? তাকে গিয়ে আমি মারব? …. মারধার লাগবে তো।’’
তবে গোঁড়া থেকেই কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে ভিলেন হওয়ার জন্য আসেননি তিনি। তিনি একজন জাত শিল্পী। যিনি কমেডি চরিত্রেও অসাধারণ অভিনয় করতে পারেন। ২০ বছরের মেয়ের চরিত্রেও তার অভিনয় দেখলে কেউ চিনতেই পারবে না তাকে। পর্দায় নায়িকাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক যেমনই থাকুক না কেন, বাস্তবে তিনি কিন্তু খুবই রোমান্টিক মানুষ। যার নাকি ৭০০ থেকে ৮০০ প্রেমিকা আছে। তার মধ্যে এমন গুণ আছে যে তার সঙ্গে ৪-৫ মিনিট কথা বললেই মেয়েরা গলে জল হয়ে যান। সুমিতের স্ত্রীও তার এই গুণের ব্যাপারে জানেন। অভিনেতার কথায়, তার নাকি জ্যোতিষের ছকে রয়েছে এমন গুণ।
আরও পড়ুন : রূপে লক্ষী গুণে সরস্বতী, বলিউড সুন্দরীদের থেকে কোনও অংশে কম নন অল্লু অর্জুনের স্ত্রী
তবে ইন্ডাস্ট্রির প্রতি তার প্রচন্ড অভিমান রয়েছে মনে। তার কথায়, ‘‘ইন্ডাস্ট্রির দুর্ভাগ্য আমাকে পেল না। আমি কী অভিনয় করতে পারি সেটা কেউ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কেউ জানার চেষ্টা করল না। দুঃখ-যন্ত্রণা-আফশোস এগুলোর উপরে গিয়ে যদি কিছু থাকে, তাহলে সেই খারাপলাগাটা রয়েছে।” তার মনে হয়েছে একই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে করতে তিনি টাইপ কাস্ট হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু বাঁধাধরা গতের বাইরে যদি তাকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করত কেউ, তাহলে তিনি নিজের সেরাটা দিতে পারতেন।
আরও পড়ুন : স্ত্রীকে নিয়ে টিভির পর্দায় রাজুদা! দেখুন কত সুন্দরী ভাইরাল রাজুদার স্ত্রী
বহু বছর পর দেবের ‘খাদান’ সিনেমার হাত ধরে আবারও সিনেমার পর্দায় ফিরলেন সুমিত। তাকে আবার সিনেমার পর্দায় দেখার বহুদিনের ইচ্ছেটা ভক্তদের পূরণ হল। এছাড়া কাজের বাইরে তিনি আপাদমস্তক ফ্যামিলি ম্যান। স্ত্রী শেলি এবং একমাত্র মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার তার। গোটা পৃথিবী তাকে ভয় পেলেও তার নিজের মেয়ে কিন্তু তাকে একটুও ভয় পায় না। উল্টে মেয়েকেই ভয় পান অভিনেতা। তাই পর্দায় তার চেহারা এবং অভিনয় দেখে তাকে যাতেই ভয়ংকর মনে হোক না কেন, বাস্তবে কিন্তু তিনি একেবারেই অন্য মানুষ। বহু বছর পর ‘খাদান’ সিনেমা দিয়ে বলতে গেলে সুমিতের দ্বিতীয় কামব্যাক হল ইন্ডাস্ট্রিতে। ভবিষ্যতে তাকে আরও ভালো ভালো প্রজেক্টে দেখার আশায় রয়েছেন ভক্তরা।