মুক্তির পর থেকেই কার্যত বক্স অফিসে ঝড় তুলছে অল্লু অর্জুনের পুষ্পা ২ (Pushpa 2)। এক সপ্তাহের মাথাতেই হাজার কোটির কাছাকাছি ব্যবসা করে ফেলেছে এই সিনেমা। শুধু তেলেগু এবং হিন্দিতে মুক্তি পাওয়াতেই মিলেছে এমন সাফল্য। যদিও তামিল, কন্নড়, মালায়ালাম এবং বাংলাতেও সিনেমাটি মুক্তির কথা ছিল। বাংলার শিল্পীরা ডাবিংও করে ফেলেছিলেন। তবুও কেন বাংলা ভাষায় মুক্তি পেল না পুষ্পা ২?
পুষ্পা ২ মুক্তির আগে বাংলাতে এই সিনেমার ট্রেলার সম্প্রচারিত হয়েছিল। ছবিটি যাতে বাংলা ভাষাতেও পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পায় তার জন্য শিল্পীদের দিয়ে ডাবিং করানো হয়েছিল। এমনকি সিনেমার গানগুলোকেও বাংলাতে গেয়েছিলেন শ্রেয়া ঘোষাল, তিমির বিশ্বাস, উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায়, অর্পিতা চক্রবর্তীরা। নভেম্বর মাসের মাঝের সময়ে শুরু হয়েছিল ডাবিং। যার ফলে অন্যান্য ভাষায় ডাবিংয়ের জন্য যেটুকু সময় পাওয়া গিয়েছে বাংলাতে তার থেকে অনেক কম সময়ে কাজ শেষ করতে হয়েছে।
প্রথমে হায়দ্রাবাদের একটি সংস্থার অধীনে ডাবিং শুরু হয়েছিল। পরে সেই দায়িত্ব পান কবি শ্রীজাত। বাংলাতে ছবির গান লেখা থেকে শুরু করে চিত্রনাট্য তারই লেখা। অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রির মত জনপ্রিয় তারকাদের দিয়ে নয়, বাংলার পেশাদার ডাবিং শিল্পীদের দিয়েই এই কাজ করানো হয়েছিল। অল্লু অর্জুনের কন্ঠ হয়েছিলেন শুভায়ন রায়। তিনি ১০ বছর ধরে ডাবিং শিল্পী হিসেবে কাজ করছেন। রশ্মিকা মান্দানার চরিত্রের জন্য ডাবিং করেছেন দেবশ্রী মুখোপাধ্যায়। ফাওয়াদ ফাসিলের কন্ঠ দিয়েছেন অর্ঘ্য মাল্য। তবে বাংলাতে সিনেমাটি মুক্তি না পাওয়াতে ডাবিং শিল্পীরা তাদের প্রকৃত প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত থেকে গেলেন।
এত কম সময়ের মধ্যে এত চাপ নিয়ে কাজ করার ফলে শিল্পীদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হয়েছেন। ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। কেউ বা নিজের বিয়ের প্রস্তুতিটাও ঠিক করে নিতে পারেননি। ৩ রা ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রচন্ড চাপের মধ্যে কাজ করে যেতে হয়েছে শিল্পীদের। কিন্তু পরেরদিন তারা জানতে পারলেন সিনেমাটি বাংলাতে মুক্তিই পাচ্ছে না। এমনকি শিল্পীরা পর্যন্ত তাদের উপযুক্ত পারিশ্রমিক পাননি।
কিন্তু কেন কাজ সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পরেও বাংলাতে এই সিনেমাটি মুক্তি পেল না? এর কারণ হিসেবে জানা গিয়েছে হিন্দি ছবি বাংলাতে ডাবিং করে মুক্তির ক্ষেত্রে আগেও এই বাংলায় সমস্যা হয়েছে। টলিউডেরই একাংশ এমনটা হতে দিতে চান না। তাই ঝুঁকি নিয়ে কেউ আর এইভাবে অন্য ভাষার ছবি বাংলাতে ডাবিং করে মুক্তি দিতেও পারেন না। বাংলার শিল্পীদের যুক্তি, এতে নাকি বাংলা ছবির বাজার নষ্ট হবে। কারণ বাংলাতে ওই মাপের ছবি তৈরি করা হয় না। যেহেতু এই ধরনের ডাবিং করা ছবিতে বাংলার টেকনিশিয়ানদের কোনও প্রয়োজন পড়ে না তাই তারাও এমন ছবির বিরোধিতা করেন।
আরও পড়ুন : ‘পুষ্পা ২’ এর জন্য কত টাকা পারিশ্রমিক নিলেন অল্লু অর্জুন? এত টাকা পাননি কোনও সুপারস্টার
আরও পড়ুন : রূপে লক্ষী গুণে সরস্বতী, বলিউড সুন্দরীদের থেকে কোনও অংশে কম নন অল্লু অর্জুনের স্ত্রী
তবে এই সমস্যা শুধু আজকের নয়। ১০ বছর আগে ২০১৪ সালে যখন গুন্ডে সিনেমাটি বাংলাতে ডাবিং হয়ে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল তখনও এই একই সমস্যা দেখা দেয়। আসলে এর পেছনে কাজ করে বাংলার শিল্পী এবং টেকনিশিয়ানদের নিরাপত্তাহীনতা। বাইরের সুপারহিট কোনও ছবি বাংলাতে ডাব হয়ে বাংলার দর্শকদের নজর কাড়ুক, এটা বাংলার শিল্পীরাই চান না। তবে পুষ্পা ২ এর বাংলা ডাবিং ওটিটিতে মুক্তি পাবে। তাই দুধের স্বাদ কিছুটা অন্তত ঘোলে মেটাতে পারবেন বাংলার দর্শকরা। কিন্তু যে ডাবিং আর্টিস্টরা দিনরাত এক করে পরিশ্রম করে গেলেন, তারা আড়ালেই থেকে গেলেন। সিনেমাটি হলে মুক্তি পেলে অন্তত তাদের পরিচিতি কিছুটা বাড়তো। তারা তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু পেতেন।।