কোথায় হারিয়ে গেলেন ‘ম্যায় তুলসী তেরে আঙ্গন কি’ সিনেমার নায়িকা নীতা মেহতা (Neeta Mehta)? বিনোদ খান্না, সঞ্জীব কুমারদের মত অভিনেতাদের সঙ্গে একের পর এক হিট সিনেমাতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। সঞ্জীব কুমারের সঙ্গে বিয়ে হওয়ারও কথা ছিল তার। কিন্তু আচমকাই সবকিছু ছেড়ে দিয়ে সন্ন্যাস নিয়ে নেন এই অভিনেত্রী। কেন জানেন?
মুম্বাইয়ের এক গুজরাটি পরিবারে জন্ম নেন নীতা। তার বাবা ছিলেন উকিল। মা চিকিৎসক। দুজনেই চাইতেন মেয়ে পড়াশোনা করে ভাল চাকরি করুক। কিন্তু মেয়ের তো নজর ছিল বলিউড। পড়াশোনাতে খুব বেশি আগ্রহ ছিল না নীতার। তার পাখির চোখ ছিল বলিউড। স্কুলের গণ্ডি পার করে ফিল্ম টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়াতে তিনি ভর্তি হয়ে যান। কিন্তু তার বাবা-মা কখনোই চাননি মেয়ে অভিনয় নিয়ে পড়াশোনা করুক। বলতে গেলে বাড়ির বিরুদ্ধে গিয়েই তিনি ফর্ম তুলেছিলেন কলেজের। তখন ২০ হাজারের মধ্যে ৪ থেকে ৫ জনকে ভর্তি নিত এফটিআইআই। তাদের মধ্যেই চান্স পেয়ে গেলেন নীতা।
এই প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করার পাশাপাশি বলিউডের বড় বড় তারকাদের সঙ্গেও যোগাযোগ হতে শুরু করে তার। সেই সঙ্গে তিনি মডেলিং করতে শুরু করেন। কলেজে পড়তে পড়তেই ‘পোঙ্গা পন্ডিত’, ‘ইয়ে হে জিন্দেগি’ এর মত সিনেমাতে কাজ করার সুযোগ পেয়ে যান তিনি। ১৯৭৮ সালে তার হাতে ‘মে তুলসী তেরে আঙ্গন কি’ ছবির প্রস্তাব আসে। বিনোদ খান্না, আশা পারেখের মত অভিনেত্রীদের সঙ্গে তিনি এই ছবিতে কাজ করার সুযোগ পান। এই ছবিতে তার অভিনয় দারুণ প্রশংসা পায়। এরপর একের পর এক ছবির প্রস্তাব আসতে থাকে তার হাতে। সঞ্জীব কুমারের সঙ্গে তার জুটি তখন দারুণ হিট ছিল।
একটার পর একটা ছবিতে সঞ্জীবের সঙ্গে কাজ করতে করতে ক্রমশ তার ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠতে শুরু করেন নীতা। ইন্ডাস্ট্রিতে গুঞ্জন ছিল তাদের প্রেম নিয়ে। সঞ্জীবকে বিয়েও করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিয়ের জন্য আবার শর্ত রেখেছিলেন সঞ্জীব কুমার। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন বিয়ের পর অভিনয় করতে পারবেন না নীতা। বলিউডের সঙ্গে সব সম্পর্ক তাকে ছিন্ন করতে হবে। কিন্তু এই প্রস্তাবে আপত্তি ছিল অভিনেত্রীর। ভালোবাসার জন্য তিনি কেরিয়ার বিসর্জন দিতে চাননি।
সঞ্জীব কুমার ভেবেছিলেন অন্য মহিলাদের মত নীতা তার যশ এবং প্রতিপত্তি দেখে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। তাই নীতা যখন বলেন বিয়ের পর তিনি কাজ চালিয়ে যেতে চান তখন সঞ্জীব বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে নেন। এদিকে এই ঘটনা জানাজানি হয়ে যাওয়ার পর নীতার হাতে কাজের সুযোগ অনেক কমে যায়। যেখানে তাকে নায়িকার রোল অফার করা হত, সেখানে তাকে ক্রমশ বয়স্কা পার্শ্ব চরিত্রে ঠেলে দেওয়া হতে থাকে। নীতা সেসব চরিত্র করতেন একপ্রকার বাধ্য হয়ে।
এরপর যখন বলিউডে শ্রীদেবী, জয়াপ্রদাদের মত অভিনেত্রীদের আগমন হয়, নীতা তখন বুঝতে পারেন এবার আর তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে খুব বেশি সুবিধা করতে পারবেন না। তাই তিনি অভিনয় ছেড়ে দেন। সঞ্জীব কুমারের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর তিনি আর বিয়েও করেননি। অভিনয় ছেড়ে মুম্বাইতে একটি গয়নার দোকান খুলেছিলেন নীতা। কিন্তু ব্যবসার কাজেও খুব বেশি মন দিতে পারেননি তিনি। ব্যবসা বন্ধ করে তিনি ঈশ্বরের প্রতি নিজেকে সমর্পণ করেন।
আরও পড়ুন : ‘গজনী’ সিনেমার নায়িকা আসিন আজ কোথায়? এখন কেমন দেখতে হয়েছে তাকে দেখুন
আরও পড়ুন : কোথায় হারিয়ে গেলেন প্রসেনজিতের ‘মন মানে না’ নায়িকা? দেখুন এখন কেমন দেখতে হয়েছে তাকে
ছোট থেকেই নীতা তার মাকে মা আনন্দময়ীর আশ্রমে যেতে দেখতেন। তিনিও সেই আশ্রমে যেতে শুরু করেন। আনন্দময়ীকে উৎসর্গ করে তিনি একটি বই লেখেন। বিলাসবহুলতা ছেড়ে বর্তমানে সন্ন্যাসীর মত জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। তার একটি ইউটিউব চ্যানেল আছে সেখানে তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় পোস্ট শেয়ার করে থাকেন।