কাজ দেয় না টলিউড (Tollywood), প্রযোজকদের দরজায় দরজায় ঘুরেও হতাশ হচ্ছেন বারবার। সংসার চালাতে তাই বাধ্য হয়েই ফুটপাতে খাবারের দোকান দিতে বাধ্য হলেন বাংলা সিরিয়ালের নামী পরিচালক অয়ন সেনগুপ্ত (Ayan Sengupta)। ‘কে আপন কে পর’, ‘কী করে বলবো তোমায়’, ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’ এর মত একাধিক জনপ্রিয় সিরিয়ালের পরিচালনা করেছেন তিনি। অথচ তার হাতেই কিনা এখন কাজ নেই।
স্ত্রী এবং এক সন্তানকে নিয়ে খুবই ছোট সংসার অয়নের। ছেলে খুবই ছোট তার। ইন্ডাস্ট্রি তার থেকে এমনভাবে মুখ ফিরিয়েছে যে সংসার চালানোর মত টাকাটুকুও তিনি জোগাড় করতে পারছেন না। রাস্তার ধারে খাবারের অস্থায়ী দোকান খুলতে হয়েছে তাকে। ক্যামেরা ছেড়ে রাস্তায় খাবার বিক্রি করতে হবে এমন দুর্দিনও যে আসতে পারে স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি পরিচালক। তবে তিনি হার মানেননি। রাতের পর রাত জেগে নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করেছেন। নিজের খরচ, ছেলের খরচ যে তার কাঁধে। এছাড়া আর কীই বা উপায় আছে তার হাতে?
তপন থিয়েটারের সামনে ফুটপাতের উপর ‘গার্ডেন আমব্রেলা’ নামের দোকান খুলেছেন অয়ন এবং তার স্ত্রী। ইন্ডাকশন ওভেনেই চলছে রান্নাবান্না। ঘুগনি, ভেজিটেবিল চপ, চিকেন পাকোড়া সহ আরও অনেক কিছু পাওয়া যাচ্ছে এই দোকানে। তবে তাই বলে সব ছেড়ে ইন্ডাস্ট্রি থেকে দূরে সরে যাননি অয়ন। তিনি পরিচালনার পাশাপাশি অভিনয়ও করেন। বর্তমানে স্নেহাশীষ চক্রবর্তীর ‘গীতা এলএলবি’ সিরিয়ালে অভিনয় করতে দেখা যাচ্ছে তাকে।
বিগত কয়েক বছর ধরেই অয়নকে নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রিতে। কোনও এক অজানা কারণে কেউই তাকে কাজ দিতে চাইছেন না। টলিউডের গিল্ড বা ফেডারেশনের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিলেন তিনি। যেখানে যেখানে যোগাযোগ করা দরকার, তিনি চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেননি। কেউ সরাসরি জানাচ্ছেন কাজ নেই। কেউ কোনও না কোনও কারণ দেখিয়ে তাকে বাদ দিয়ে দিচ্ছেন।
অয়নের দাবি, বিগত দুই বছর ধরে তিনি দেখছেন যারা কাজ করছেন তারাই অনবরত কাজ করে চলেছেন। আর যারা কাজ পাচ্ছেন না তারা একই বারেই কাজ পাচ্ছেন না। অথচ অয়ন কেন কাজ পাচ্ছেন না সেটাও তাকে কেউ স্পষ্ট করে জানাতে পারছেন না। তবে নিজের সমস্যা নিয়ে অয়ন একেবারেই ফেডারেশনের দ্বারস্থ হতে চান না। তার এই অবস্থা দেখে সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেক শিল্পী আফসোস করছেন। কেউ কেউ কুর্নিশ জানাচ্ছেন তার এই উদ্যোগকে।
এর আগে হেয়ার ড্রেসার তনুশ্রী দাসকে নিয়েও এমন খবর প্রকাশ পেয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে কাজ না পেয়ে তনুশ্রী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তখন তাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে ডিরেক্টর্স গিল্ড। অয়নের ক্ষেত্রেও কি কোনও সুরাহা হবে? ডিরেক্টর্স গিল্ডের সভাপতি সুব্রত সেন বলেছেন, “ইন্ডাস্ট্রিতে যে হারে কাজ কমেছে তাতে কাজ হারানো মানুষের পাল্লাটাই ভারী। একই সঙ্গে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ বা প্রযোজকেরা নিয়মিত কাজ যাঁরা করেন তাঁদের উপরেই ভরসা রাখতে ভালবাসেন। অয়ন অনিয়মিত হয়ে পড়ায় তাই সমস্যায় পড়েছেন।”
আরও পড়ুন : স্বামীহারা, নিঃসন্তান! শেষ বয়সে কীভাবে দিন কাটাচ্ছেন অনুরাধা রায়?
স্বর্ণেন্দু সমাদ্দারের ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’ সিরিয়ালের কাজ করেছিলেন অয়ন। তিনি বলেছেন, “অয়নদাকে মাঝে কাজের জন্য ডেকেছিলাম। সেই সময় তিনি অন্য প্রযোজনা সংস্থার কাজ করছিলেন। ফলে, আমার কাজ করতে পারেননি। পরে আবার আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু আমার হাতে তখন আর কাজ ছিল না।” তবে স্বর্ণেন্দু আশ্বাস দিয়েছেন তিনি খুব তাড়াতাড়ি অয়নের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।।
আরও পড়ুন : কবে কোন সময়ে আসছে গৃহপ্রবেশ? দেখুন স্টার জলসার নতুন সিরিয়ালের টাইম স্লট
অন্যদিকে ‘কি করে বলবো তোমায়’ সিরিয়ালের নায়িকা স্বস্তিকা দত্ত বলেছেন, “আমি এ বিষয়ে মতামত জানানোর মতো যোগ্যতা এখনও অর্জন করিনি। কিন্তু অয়নদার সঙ্গে কাজ করেছি। ভীষণ পরিশ্রমী। কাজের বিষয়ে মনোযোগী। ওঁর মনের জোর দেখে ওঁকে কুর্নিশ জানাচ্ছি।” মোটকথা অয়নের মত পরিচালকের এই পরিস্থিতি সত্যিই টলিউডের মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে। এর আগেও বহু যোগ্য শিল্পীকে কাজের অভাবে এভাবেই সবজি কিম্বা মাছ মাংসের দোকান দিতে দেখা গিয়েছে। পেটের টানে বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন শিল্পীরা। এতে টলিউড বহু যোগ্য শিল্পীকে হারাচ্ছে। যা ইন্ডাস্ট্রির জন্য মোটেও ভালো নয়।