সোশ্যাল মিডিয়াতে চূড়ান্ত ট্রোল্ড হলেন অপরাজিতা আঢ্য (Aparajita Adhya)। সামাজিক মাধ্যমে অভিনেত্রীদের ট্রোলিং নতুন কোনও বিষয় নয়। কখনও চেহারা নিয়ে, কখনও আবার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কাটা ছেঁড়া চলতেই আছে। কেউ কেউ পাল্টা জবাব দেন। কেউ ছেড়ে দেন। কিন্তু অপরাজিতা ছেড়ে দেওয়ার দলে নন। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়াতে তাকে নিয়ে যেভাবে ট্রোল করা হচ্ছিল তার জবাব দিলেন লক্ষ্মী কাকিমা।
টলিউড সিনেমার পাশাপাশি বহু বাংলা সিরিয়ালেও অভিনয় করেছেন অপরাজিতা। তার অভিনীত প্রত্যেকটা চরিত্রই প্রায় দর্শকদের মনে গেঁথে আছে। তবে তিনি সবথেকে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন ‘জল নূপুর’ সিরিয়ালে ‘পারি পাগলি’ চরিত্রটিতে অভিনয় করে। যেখানে মানসিক দিক থেকে বিশেষভাবে সক্ষম একটি মেয়ের চরিত্র নিখুঁতভাবে তিনি পর্দায় ফুটিয়ে তোলেন। পারির আবেগ, রাগ, দুঃখ, অভিমান সবকিছুই অভিনয়ের মাধ্যমে একেবারে বাস্তবভাবে ক্যামেরায় ফুটিয়ে তুলেছিলেন অপরাজিতা। এর জন্য তিনি বহু মানুষের ভালোবাসা যেমন পেয়েছেন, তেমন অনেকের কটাক্ষ তাকে হজম করতে হয়।
বর্তমানে স্টার জলসাতে ‘জল নূপুরে’র পুনঃ সম্প্রচার হচ্ছে। ‘পারি’র চরিত্রটি নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে তরজা। ১৪ই নভেম্বর শিশু দিবসে যার জবাব দিয়ে অপরাজিতা সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি পোস্ট করেন। ‘পারি’র ছবি দিয়ে তিনি লেখেন, “দিল তো বাচ্চা হ্যা জি বলা যতটা সহজ, নিজের অন্তরের শিশুকে বাস্তবিক ভাবে লালন করে চলা কিন্তু আসলে ততটাই কঠিন! সমাজতত্ত্বে, মনস্তত্ত্বে শিশুসুলভতার মধ্যে যে পবিত্রতা, যে মমত্ব লিখিত ও প্রমাণিত সত্য, তাকে বাস্তবিকতায় আলিঙ্গণ করতে গেলেই রে রে করে উঠবে চারিপাশ, ঘটে যাবে অনর্থ । কথায় বলে যা কিছু তাত্ত্বিক, তা বইয়ের পাতাতেই ভালো! জীবন সাধারণ ছাপোসা নিয়মে বাঁচাই শ্রেয়, আর সেটা নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবার জন্যই সত্যি । এবার নারী যেহেতু সবকিছুতেই দ্বিতীয়ত, আর সেটা নিয়ে সামাজিকতায় কোনো প্রশ্ন নেই, কাজেই এ ক্ষেত্রেও যে নারীর উপর হম্বিতম্বী একটু বেশি হবে, সেটাই তো স্বাভাবিক! পূর্ণবয়স্ক নারী, তিনি হতেই পারেন ব্যাংক কর্মী, শিক্ষিকা, গবেষক, শিল্পী, গৃহবধূ, কিন্তু তিনি যাই হোন না কেন, তিনি যদি নিজের শিশুসুলভতার ভিত্তিতে জীবনের ইঁট গুলো প্রতিস্থাপন করতে চান, বা করেন, তিনি হয়ে যাবেন ন্যাকা, আল্লাদি, বেহায়া, ঢঙি, ইত্যাদি ইত্যাদি। তা তখন তার নাম অপরাজিতা আঢ্য হোক বা আনোয়ারা বিবি, নিতান্ত ন্যাকা ছাড়া তাকে সমাজ আর কোনো নামেই ডাকবে না। পরিবারের ভিতর তুমি বড্ড ছেলেমানুষ! বাচ্চাদের মতো করো না! থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে বিশ্বন্যাকা, একেবারে অসহ্য! কচি খুঁকি শুনতে শুনতে অভ্যস্ত আমি মাঝে মাঝে ভাবি, আমার উপর তো এত মানুষের আশীর্বাদ, আমিই যদি এত শুনি, না জানি অসাধারণ ভাবে সাধারণ নারীদের আরও কি কি শুনতে হয়! যা কানে নেওয়ার নয়, তা না নেওয়াই শ্রেয় জানি, তবু যার কাছে সেটা ছাড়া আর কোনো উপায়ই অবশিষ্ট নেই, তাদের যন্ত্রণার কথা ভাবলে শিশু দিবস আপাদমস্তক ব্যর্থ লাগে। নাহয় একটু বেহায়া কচি খুঁকি হলাম, তাতে আমার শিশুসুলভ মন কিন্তু আনন্দই পাবে। অন্তরের শিশুর চোখ দিয়ে দেখুন, নিষ্পাপ মুক্তির কামনায় আপনারও একটি বার বেঁচে নিতে ইচ্ছা করবে।”
অপরাজিতার এই লেখা পড়ে তার সঙ্গে সহমত হয়েছেন অনেকেই। তারা লিখছেন, “খুব পরিশীলিত ও তার ভাবাবেগ আছে এই লেখনীর মধ্যে, একদম বাস্তব ভাষা। ধন্যবাদ আপনাকে।” কেউ লিখছেন, “অপূর্ব লিখেছেন।” আর একজন লিখেছেন, “একদম ঠিক।”
আরও পড়ুন : কোথায় হারিয়ে গেলেন অমৃতা রাও? এখন কেমন দেখতে হয়েছে তাকে?
আরও পড়ুন : অভিনয়ের আড়ালে দেহব্যবসা! বাথরুম থেকে উদ্ধার ১২ লাখ, অভিনেত্রীর কীর্তি শুনলে ছিঃ ছিঃ করবেন
আসলে সোশ্যাল মিডিয়াতে কম সমালোচনার মুখে পড়তে হয় না অপরাজিতাকে। সর্বদা হাসিখুশি এই অভিনেত্রী বয়সটাকে পাত্তা না দিয়ে নিজের মত বাঁচেন। বিভিন্ন সময় পার্টি মুহূর্তে তার নাচানাচির ভিডিও কিংবা সমুদ্র সৈকতে শর্টস পরে উচ্ছ্বাস এসব নিয়ে নীতিপুলিশদের কটাক্ষ বহুবার তাকে হজম করতে হয়েছে। তবে তাতে অবশ্য থোড়াই কেয়ার অভিনেত্রী। এই পোস্টের মাধ্যমে তিনি সেই সব মানুষদেরও জবাব দিলেন যারা নিত্যদিন অপরাজিতাকে এসব নিয়ে খোঁটা দিতেন।