আশা ভোঁসলের খুবই প্রিয় পাত্রী ছিলেন। করিশ্মার লিপে ‘সোনা কিতনা সোনা হে’ থেকে শুরু করে মাধুরীর লিপে ‘চানে কি ক্ষেত মে’, তার গাওয়া বিভিন্ন সুপার হিট সিনেমার গান আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। বলিউডে আশা-লতার জায়গা নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আজ কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছেন ৯০ দশকের জনপ্রিয় গায়িকা সুষমা শ্রেষ্ঠ (Sushma Shreshta)। জানেন কি এখন কোথায় কেমন আছেন সুষমা?
সুষমার শ্রেষ্ঠর জন্ম হয় ১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ের একটি নেপালি পরিবারে। তার বাবা ভোলানাথ শ্রেষ্ঠ ছিলেন সংগীত নির্মাতা। তিনি ৫০-৬০ এর দশকে বলিউডের অনেক প্রখ্যাত সংগীত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। সুষমার মা নির্মলা শ্রেষ্ঠও একজন সঙ্গীতপ্রেমী। তার সঙ্গে আবার গায়িকা আশা ভোঁসলের দারুণ বন্ধুত্ব ছিল। সুষমা যখন ছোট ছিলেন তখন থেকেই তাকে কোলে বসিয়ে গান শোনাতেন আশা।
বাড়িতে সবসময় সঙ্গীতের পরিবেশ ছিল। ছোট থেকেই বড় বড় শিল্পীদের সান্নিধ্যে আসতে পেরেছিলেন সুষমা। মাত্র ৯ বছর বয়সে তিনি হিন্দি ছবিতে প্রথম গান গাওয়ার সুযোগ পান। ছবির নাম ছিল ‘আন্দাজ’। ১৯৭১ সালে রমেশ সিপ্পির পরিচালনায় শম্মী কাপুর, হেমা মালিনী, রাজেশ খান্না, সিমি গারেয়াল অভিনীত এই ছবিতে ‘হ্যাঁয় না বোলো বোলো’ গানটি আসলে তারই গাওয়া। বলিউডে তার প্রথম প্লেব্যাক হিট হয়ে যায়। এরপর তাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি।
ছোট থেকে বাবার কাছেই গানের তালিম নিয়ে বড় হয়েছিলেন সুষমা। ভোলানাথ চেয়েছিলেন মেয়ে এমন একটি অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার সুযোগ পায় যেন সেখানে বলিউডের বড় বড় তারকারা থাকেন। সুষমা সেই সুযোগ পেয়েছিলেন বটে, কিন্তু দেখে যেতে পারেননি তার বাবা। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে ভোলানাথের মৃত্যু হয়। শুধু বাবার ইচ্ছে পূরণ করবেন বলে ওই বছর সুষমা মঞ্চে পারফর্ম করেছিলেন। এরপর তার হাতে একের পর এক কাজের সুযোগ আসতেই থাকে।
সুষমা শিশুদের জন্য তৈরি একটি গানের অ্যালবামে গান গাওয়ার সুযোগ পান এরপর। ওই অ্যালবামের ৪ টি গান ছিল তার গাওয়া। তিনি মারাঠি ভাষাতেও নিপুনভাবে গান গাইতে পারতেন। সংগীত পরিচালক রাহুল দেব বর্মন তার গান শুনে মুগ্ধ হন। সুষমা ‘জানে তু আর জানে না’, ‘কেয়া হুয়া তেরা ওয়াদা’, ‘ঠান্ডে ঠান্ডে পানি সে নাহনা চাহিয়ে’, ‘তেরা হে জামিন তেরা আসমান’ এর মত একাধিক হিট গান গেয়েছিলেন।
আশির দশকের দিকে সুষমা বিয়ে করেন। এরপর গানের জগতের সঙ্গে তার কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়। কিছুদিন পর তিনি আবার সংগীত দুনিয়ায় ফিরে আসেন। তখন তার নতুন নাম হয় পূর্ণিমা। ৯০ এর দশক থেকে আবার পূর্ণিমার চাহিদা ওঠে তুঙ্গে। তিনি ডেভিড ধাওয়ানের একের পর এক ছবিতেও গান গাওয়ার সুযোগ পান। যেমন, ‘বোল রাধা বোল’, ‘চমৎকার’, ‘অঞ্জাম’, ‘রাজা বাবু’, ‘গোপি কিষণ’, ‘বেতাজ বাদশা’, ‘লাডলা’, ‘ইনা মিনা ডিকা’, ‘বেওয়াফা সনম’, ‘লোফার’, ‘সাজন চলে সসুরাল’, ‘দিলজলে’, ‘মাসুম’, ‘জুড়ওয়া’, ‘ইশ্ক’, ‘হিরো নম্বর ওয়ান’, ‘কুলি নম্বরল ওয়ান’, ‘বিবি নম্বর ওয়ান’-এর মত সিনেমা।
আরও পড়ুন : কোথায় হারিয়ে গেলেন শাহরুখের ‘পরদেশ’ সিনেমার নায়িকা? এখন কেমন দেখতে হয়েছে তাকে?
আরও পড়ুন : খলনায়ক হয়ে অবিরাম কুড়িয়েছেন অভিশাপ! নিমু ভৌমিকের পরিণতি ছিল খুবই মর্মান্তিক
জয়া প্রদা, শ্রীদেবী, মাধুরী দীক্ষিত, জুহি চাওলা, মনীষা কৈরালা, রানি মুখোপাধ্যায়, রম্ভা, কাজল, শিল্পা শিরোদকর, সিমি গারেওয়াল, তব্বু, প্রীতি জ়িন্টা, শিল্পা শেট্টি, করিশ্মা কপূরের মত নায়িকাদের লিপে শোনা গিয়েছে পূর্ণিমা ওরফে সুষমার গান। কিন্তু এরপর আবার ধীরে ধীরে তার গান গাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তার হাতে কাজ আসা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। তখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মঞ্চে পারফর্ম করে তিনি উপার্জন করতে শুরু করেন। মাঝে দুই একটি গানের রিয়ালিটি শোতে তাকে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এখন সংগীত দুনিয়া এবং গ্ল্যামার দুনিয়া থেকে অনেক দূরেই থাকেন এই জনপ্রিয় গায়িকা।