ছোটতেই বন্ধ পড়াশোনা, কম বয়সে বিয়ে! কিভাবে অভিনেত্রী হলেন ‘নিম ফুলের মধু’র ঠাম্মি লিলি চক্রবর্তী?

শুধু টলিউড নয়, এক সময় বলিউডেও দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন লিলি চক্রবর্তী (Lily Chakravarty)। কাজ করেছিলেন উত্তম কুমার থেকে অমিতাভ বচ্চন সকলের সঙ্গেই। ছোটবেলায় বিয়ে হয়ে গেলেও তা কখনো ক্যারিয়ারে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। টলিউডের অভ্যন্তরে রাজনীতির কথাও তিনি লিখেছেন ‘আমি লিলি’ নামক অটোবায়োগ্রাফিতে। জানুন জি বাংলার ‘নিম ফুলের মধু’ (Neem Phooler Madhu) ধারাবাহিকের ঠাকুমা লিলি চক্রবর্তীর জীবনের নানা অজানা গল্প, যা সত্যি মুগ্ধ করবে আপনাকে।

১৯৪১ সালের ৮ই আগস্ট বাংলাদেশের ঢাকার বিক্রমপুরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন লিলি চক্রবর্তী। মাত্র ৫ বছর বয়সে দেশভাগের সময় সপরিবারে ভারতে চলে এসেছিলেন লিলি। বছরখানেক বালিগঞ্জে কাকার বাড়িতে থাকার পর মধ্যপ্রদেশে বড় মামার বাড়িতে চলে যান অভিনেত্রী। ১০ বছর বয়সে তিনি আসেন বেলুড়ে, ছোট মামার বাড়িতে। কিন্তু হঠাৎ টাইফয়েড হওয়ায় অভিনেত্রীর মা তাকে আবার নিয়ে চলে যান মধ্যপ্রদেশে। সেখানে কিছু বছর পড়াশোনা করার পর আর্থিকভাবে বাবার পাশে দাঁড়ানোর জন্যই তিনি শুরু করেন নাটকে অভিনয়। ভাইদের পড়াশুনো করানোর জন্য শেষ করতে পারেননি নিজের পড়াশোনাও।

Lily Chakravarty

অভিনেত্রীর মা দিপালী চক্রবর্তী ছিলেন নান্দীকার দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। দিদি শেলী চক্রবর্তী ছিলেন গ্রুপ থিয়েটারের একজন নামী অভিনেত্রী। ছোটবেলা থেকেই মা এবং দিদির কাছেই অভিনয়ের হাতে খড়ি হয় লিলির। দিদির সঙ্গে বেশ কিছু নাটকে অভিনয়ও করেছিলেন ছোটবেলাতেই। থিয়েটারে নাটক করতে করতেই তিনি সুযোগ পান ‘ভানু পেল লটারি’ সিনেমায় অভিনয় করার, যা ছিল লিলির জীবনের টার্নিং পয়েন্ট।

‘ভানু পেল লটারি’ সিনেমায় কমল মিত্র এবং জহর রায়ের সঙ্গে সাবলীলভাবে লিলির অভিনয় দেখে ক্যামেরাম্যান অনিল বাবুর মুখে মুখে ছড়িয়ে যায় অভিনেত্রীর প্রশংসা। ‘মধ্যরাতের তারা’, ‘ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্ট্যান্ট’, ‘হাসুলি বাঁকের উপকথা’, ‘মিস প্রিয়াঙ্কদা’ সহ আরো নানান সিনেমার অফার আসতে শুরু করে অভিনেত্রীর কাছে। এরপরেই আসে মানিক বাবুর ডাক।

Lily Chakraborty

মানিকবাবুর ‘অপুর সংসার’ সিনেমায় লিলি চক্রবর্তীর অভিনয় করার কথা ছিল, কিন্তু তার আগেই শর্মিলা ঠাকুর রাজি হয়ে যাওয়ায় সেই চরিত্র হাতছাড়া হয়ে যায়। তবে সত্যজিৎ রায়ের পরবর্তী দুটি সিনেমা ‘জন অরণ্য’, ‘শাখা প্রশাখা’ সিনেমায় অভিনয় করেন লিলি। মহানায়ক উত্তম কুমারের বিপরীতে দেয়া নেয়া সিনেমায় অভিনেত্রীর অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে যান বলিউডের পরিচালকরাও। ডাক আসে বলিউড থেকে।

‘সম্পূর্ণ বিষ্ণু পুরাণ’ নামে একটি মাইথোলজিক্যাল সিনেমায় অভিনয় করার জন্য তিনি গিয়েছিলেন মুম্বাইতে। সেখানেই অফার পেয়েছিলেন তরুণ মজুমদারের ‘ফুলেশ্বরী’ সিনেমায় পদ্ম বৌদির চরিত্রে অভিনয় করার। মুম্বাইতে থাকাকালীন গীতিকার মুকুল দত্তের মাধ্যমে আলাপ হয়েছিল গুলজারের সঙ্গে। লিলি চক্রবর্তীর মুখে হিন্দি শুনে রীতিমতো হতভম্ব হয়ে যান গুলজার। গুলজারের ‘আচানক’ সিনেমায় বিনোদ খান্নার বিপরীতে অভিনয় করার সুযোগ পেয়ে যান তিনি। এরপর ‘চুপকে চুপকে’ এবং ‘আলাপ’ সিনেমায় অভিনয় করার পর তিনি ফিরে এসেছিলেন বাংলায়।

Lily Chakravarty

অভিনয় করতে করতেই মাত্র ১৯ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায় লিলি চক্রবর্তীর। স্বামী অজিত কুমার ঘোষ ছিলেন পেশায় একজন ডেয়ারী এবং ফার্মেসীর ব্যবসায়ী। সিনেমা তৈরির সুবাদেই দুজনের আলাপ হয়। লিলি চক্রবর্তীর বাড়ির পরিস্থিতি দেখে তাদের পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার পাশাপাশি অজিত বাবু বিয়ে করে ফেলেন অভিনেত্রীকে। তবে ২০১০ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর একা হয়ে যান তিনি। সাময়িক বিরতি নেন অভিনয় জীবন থেকে। তবে কিছু বছর পর আবারো তিনি শুরু করেন অভিনয়।

আরও পড়ুন : কচি গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে! নতুন বছরে ফের চর্চায় ‘বাদাম কাকু’, তোলপাড় নেটপাড়া

Lily Chakravarty

আরও পড়ুন : লিভ-ইনের পর ভেঙেছিল সম্পর্ক! ভাঙা প্রেম নিয়ে মন খারাপ রোহন ভট্টাচার্যের

ঋতুপর্ণ ঘোষের চোখের বালিতে লিলি চক্রবর্তীর অভিনয় চোখে পড়ার মতো ছিল। গত কয়েক বছরে ‘কিসমিস’, ‘অর্ধাঙ্গিনী’, ‘সাঁঝবাতি’, ‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’, ‘রক্ত রহস্য’, ‘পোস্ত’, ‘রাজকাহিনী’ সিনেমায় অভিনয় করে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন নতুন প্রজন্মের সঙ্গেও তিনি সমান ভাবে সাবলীল। দীর্ঘ ৬০ বছরের অভিনয় জীবনে লিলি চক্রবর্তী পেয়েছেন একাধিক সম্মান। সিনেমা ছাড়াও ধারাবাহিকও চুটিয়ে অভিনয় করছেন ৮১ বছর বয়সী এই প্রবীণ অভিনেত্রী।