‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ নিয়ে এত হইচই কেন, কি এমন আছে এই সিনেমায়

মুক্তির আগে থেকেই চর্চা শুরু হয়েছে বিবেক অগ্নিহোত্রী (Vivek Agnihotri) পরিচালিত ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ (The Kashmir Files) ছবিটিকে কেন্দ্র করে। ছবির প্রেক্ষাপট জানতে ৩০ বছর পিছিয়ে যেতে হয়। যে সময় হাজার হাজার কাশ্মীরি পন্ডিত এবং তাদের পরিবারকে তাদের বাসস্থান থেকে রাতারাতি উৎখাত করা হয়েছিল। যারা এক কাপড়ে রাতারাতি ঘর ছেড়েছিলেন আজ তারা পর্যটক হয়ে দূর থেকে কেবল নিজেদের আদি বাসস্থান দেখতেই পারেন। কাশ্মীর তাদের আর আপন করে নেয়নি।

কোনও মনগড়া গল্প-কাহিনী নয়, বিবেক অগ্নিহোত্রীর কথায় এই ছবি বানাতে তাকে রীতিমতো ৫ হাজার ঘন্টা গবেষণা করতে হয়েছে। ১৫ হাজার পৃষ্ঠার সংগৃহীত নথির উপর ভিত্তি করে বানানো এই ছবিতে ২০ মিনিটের একটি ভিডিও রয়েছে যেখানে কাশ্মীরে পণ্ডিতদের সাক্ষাৎকার ছিল। এরা সকলেই সেই সময় কাশ্মীরের ভয়ঙ্কর ঘটনাবলীর সাক্ষী।

The Kashmir Files

ছবি তৈরীর জন্য ৭০০ এর বেশি নির্যাতিত কাশ্মীরি পন্ডিতদের সাক্ষাৎকার রেকর্ড করা হয়েছিল। এরা সকলেই এমন এক পরিস্থিতির শিকার ছিলেন যেখানে তাদের ওপর ঘটে যাওয়া নির্যাতনের সত্য লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল সরকারই। নিজভূমে পরবাসী হয়ে ধর্ম এবং সম্মান রক্ষার্থে কাশ্মীর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন যারা তাদের মধ্যে অনেকেই ভারতবর্ষের আনাচে-কানাচে এবং বিভিন্ন দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গেও এমন অনেকেই রয়েছেন। টলিউড অভিনেতা ভরত কলও কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বংশধর। সেই ভয়াবহতার সাক্ষী তার পরিবারকেও হতে হয়েছিল।

বেহালার রাজেশ কৌল থেকে শুরু করে পিএন রায়না, বংশীলাল রায়না, কৃষ্ণা সুচারু, সুমন রায়না, প্রীতি থুসোরাদের মত হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী আজও প্রশ্ন তোলে ৩০ বছর আগে কাশ্মীরের বুকে যে তাণ্ডব চলেছিল তা আদতে গণপ্রস্থান ছিল নাকি গণহত্যা? কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উপর হওয়া অত্যাচার ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল খোদ সরকার। সেই সময় তাদের মাথার উপরে ছাদ ছিল না, ছিল না সুরক্ষা, নিরাপত্তার ব্যবস্থা। সেই দুঃস্বপ্নের রাতের বাস্তবচিত্র প্রেক্ষাগৃহে দর্শকদের চোখে জল এনেছে।

The Kashmir Files

সময় বদলেছে, কাশ্মীরের উপর থেকে ৩৭০ ধারা আজ অবলুপ্ত। কাশ্মীরের মাটিতে জঙ্গিদের উত্থান এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা। তবুও ৩০ বছর আগে যারা ধর্মরক্ষার্থে সব হারিয়েছেন তাদের আর কিছুই ফিরে পাওয়ার জো নেই। উগ্রবাদীদের হাতে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের খুন, ধর্ষণ, গণহত্যার জীবন্ত দলিল হয়ে থেকে যাবে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’।