বক্সার জেলে তৈরি দড়ি দিয়েই কেন আসামীদের ফাঁসি দেওয়া হয়

অবশেষে ইনসাফ পেল নির্ভয়া, ফাঁসি দেওয়া হল নির্ভয়া কান্ডের দোষীদের। এই ফাঁসির দড়ি এসেছিল বিহারের বক্সার জেল থেকে। বক্সার জেলের তৈরি এই বিশেষ দড়িতেই মৃত্যু হয়েছে গান্ধিজির হত্যাকারী নাথুরাম গডসে, মুম্বই হামলায় জড়িত আজমল কাসাব, মুম্বই বিষ্ফোরনে জড়িত ইয়াকুব মেনন ,ভারতীয় সংসদে সন্ত্রাসী হামলায় অভিযুক্ত আফজল গুরুর। কিন্তু কি এই দড়ির বিষেশত্ব?

   

এর পেছনে রয়েছে এক লম্বা ইতিহাস। ১৮৮৪ সালে ব্রিটিশরা এই বক্সার জেলের প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময় ব্রিটিশরা ফাঁসির দড়ি আনাতেন ম্যানিলা থেকে। ফাঁসির দড়ি আনাতে অর্থ ও সময় দুটোই ব্যয় হত প্রচুর। বক্সার জেল গঙ্গার তীরে অবস্থিত হওয়ার একটা সুবিধা ছিল কাঁচা মাল আর পর্যাপ্ত জল সরবরাহ।

ব্রিটিশরা এর সুযোগ নিয়ে পরীক্ষামূলক গবেষনা করতে লাগলেন। বক্সার জেলে বসালেন বিদেশ থেকে আনা ফাঁসির দড়ি তৈরী করার যন্ত্র। বেশ কিছুদিন গবেষনা করে তৈরী করা হল এক দড়ি। “ইন্ডিয়ান ফ্যাক্টরি আইন” এই দড়ির মান পরীক্ষা করে বললেন এই দড়ির কাছে অন্য সব দড়ির মান হার মেনেছে। দেশজোড়া খাতি পেল বক্সার জেলের তৈরী এই বিশেষ দড়ি। এর পরই ব্রিটিশরা বিদেশ থেকে আনা দড়ির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন। বর্তমানে ভারতের অধীনস্ত সব জেলে এই বক্সার দড়িতেই ফাঁসি দেওয়া হয়।

ভারতীয় জেলে ফাঁসির পর আসামীদের তিনঘন্টা ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে রাখা হয়। তারপর চিকিৎসক দেহ পরীক্ষা করে দেখেন।কিন্তু নিয়মানুযায়ী কোনো রকম ক্ষতর দাগ পাওয়া যাবেনা। এই দড়ির একটি অন্যতম গুন এই দড়িতে ফাঁসি দিলেও গলায় কোনোরকম দাগ থাকেনা।জানা গিয়েছে, এই দড়ি বানাতে মোট তিন থেকে চারদিন সময় লাগে। প্রায় পাচজন মিলে এই দড়ি তৈরী করে থাকেন।

আরও পড়ুন :- নির্ভয়াকাণ্ডে দোষীদের ফাঁসি দিয়ে রেকর্ড ভাঙ্গা এই জল্লাদকে চিনে নিন

বর্তমানে এই তুলোর জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচা মাল আসে পঞ্জাব থেকে। এই দড়ির তুলো পাঞ্জাব প্রদেশেই চাষ হয়। তবে এই দড়ই একবার তৈরী হয়ে গেলে বেশী দিন ব্যাবহার না করে ফেলে রাখা যায়না। বক্সার জেলে পাঁচজন বিশেষ প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত কর্মী রয়েছেন। বর্তমানে মূলধনের দাম বেড়ে যাওয়ায় দামও বেড়ে গিয়েছে এই দড়ির।

আরও পড়ুন :- সূর্যোদয়ের আগেই কেন সবাইকে ফাঁসি দেওয়া হয়, জেনে নিন ৪ কারণ

অপেক্ষাকৃত নরম ও শক্তপক্তো ফাঁসের জন্য বিশেষ পদ্ধতিতে বোনা এই দড়ির গুনেই এটা সম্ভব। যা একমাত্র বক্সারের জেলেই তৈরি হয় বলেই এখানকার ফাঁসির দড়ির সুমান গোটা ভারত জুড়ে। এই বিশেষ দড়ি ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে তিহার জেলে। সেখানেই আগামী ২২ জানুয়ারি ফাঁসি হবে নির্ভয়া কাণ্ডে অভিযুক্ত চার আসামীর।