জগন্নাথ মন্দিরে জগন্নাথের মূর্তিতে হাত নেই কেন, রইল এক অজানা কাহিনী

উড়িষ্যার পুরী শহরের জগন্নাথ ধামে রয়েছে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার মূর্তি। পুরীর অলিতে গলিতে জগন্নাথ দেবকে নিয়ে নানা কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। প্রভু জগন্নাথ ঠুঁটো কেন? কেন তার হাত নেই? এই প্রশ্নের জবাব মিলবে নানা উপকথায়‌। জেনে নিন পুরীর এই জগন্নাথ ধামের সঙ্গে জড়িত প্রচলিত কাহিনীটি।

সাধারণত হিন্দু দেবী-দেবতার মূর্তি পাথর কিংবা ধাতুর সাহায্যে বানানো হয়। কিন্তু জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার মূর্তি তিনটি কাঠের তৈরি। কলিঙ্গ রাজ্যের রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন চেয়েছিলেন তার রাজ্যে ভগবান বিষ্ণুর একটি মন্দির হবে। রাজার আদেশে শুরু হয় জগন্নাথ মন্দির এবং বিগ্রহ নির্মাণের কাজ।

ব্রহ্মার পরামর্শে রাজা বিষ্ণুর কঠিন ধ্যান করে জানতে পারেন পুরীর কাছের সমুদ্রে নিম গাছের গুঁড়ি ভেসে আসবে। সেই কাঠের গুঁড়ি দিয়েই বিগ্রহের নির্মাণ হবে। বিষ্ণুর কথামতো নিম গাছের গুঁড়ি এনে মূর্তি নির্মাণের কাজ তো শুরু হলো, কিন্তু কাটতে যেতেই বারবার ভেঙে যেতে লাগল সেই গুঁড়ি। এই সময় পথ দেখালেন স্বয়ং বিষ্ণু।

বিষ্ণুর আদেশে দেবতাদের কারিগর বিশ্বকর্মা ছদ্মবেশে রাজার কাছে উপস্থিত হলেন। তিনি রাজাকে বললেন বন্ধ দরজার অন্তরালে তিনি মূর্তি বানাবেন। তবে তিনি যতক্ষণ না চাইবেন ততক্ষণ দরজা খোলা যাবে না। তার অনুমতি ব্যতীত দরজা খোলা হলে এই মূর্তি বানানোর কাজ অসম্পূর্ণ রেখে তিনি বিদায় নিবেন। এরপর শুরু হয়ে গেল বিশ্বকর্মার মূর্তি বানানোর কাজ।

এদিকে বেশ কিছু দিন কেটে যাওয়ার পরও বিশ্বকর্মা মন্দিরের দরজা খোলেন না। বন্ধ দরজার ওপ্রান্ত থেকে কোনও শব্দও শোনা যায় না। এদিকে রাণী বারবার রাজাকে তাগাদা দিতে শুরু করেন। শেষমেষ রাজা কৌতূহল চাপতে না পেরে বিশ্বকর্মার শর্ত ভেঙ্গে দরজা খুলে ফেলেন।

এইবার ছদ্মবেশী বিশ্বকর্মা নিজের পরিচয় দিয়ে জানান যেহেতু তার শর্ত ভঙ্গ হয়েছে তাই তিনি আর মূর্তি বানাতে পারবেন না। ততদিনে কাঠের বিগ্রহের পদযুগল, হাত, কান, কোনও কিছুই সম্পন্ন হয়নি। রাজার অনেক অনুরোধ সত্বেও বিশ্বকর্মা নিজের কথায় অটল থেকে মূর্তি বানানোর কাজ অসমাপ্ত রেখেই ফিরে গেলেন স্বর্গে।

প্রবল অনুশোচনায় রাজা রীতিমতো ভেঙে পড়েন। এই সময় স্বয়ং বিষ্ণু এসে উপস্থিত হন তার সামনে। বিষ্ণু এই অসমাপ্ত মূর্তিরই মন্দির স্থাপন করে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে বলেন। সেই থেকে উড়িষ্যার পুরী শহরের জগন্নাথ ধামে মহাসমারোহে এই অসমাপ্ত মূর্তিরই পুজো চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে।