পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের ১১,০০০ কোটি টাকার জালিয়াতি মামলা প্রকাশ্যে এসেছে। এই ক্ষত এখনও শুকোয়নি। এর মধ্যেই জুয়েলার নীরব মোদি এবং রোটোম্যাক পেন কোম্পানির মালিক বিক্রম কোঠারির ৮০০ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা জেনেছে দেশবাসী। পরপর দুটো জালিয়াতির মামলার ঘটনা তুলে দিয়েছে অনেক প্রশ্ন। তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ কী করছিল? তাঁদের নাকের ডগা দিয়ে কোটি কোটি টাকা চুরি হল কীভাবে?
দেশের ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের ভুল-ত্রুটিগুলি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে এই দুই জোচ্চর। সঙ্গে ব্যাঙ্কের কার্যপ্রণালী এবং প্রযুক্তির ব্যার্থতাও দায়ী। নীরব মোদী আদতে গুজরাটের মানুষ। ৪৭ বছরের এই হীরা ব্যবসায়ী মুম্বাইয়ে ঘাঁটি গেড়ে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের একটি শাখা থেকে ভুয়ো কাগজপত্রের মাধ্যমে ১১ হাজার ২০০ কোটি টাকা তছরুপ চালিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিদেশ পালায়। এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁর স্ত্রী, ভাই-সহ ব্যবসার অন্য মাথারাও দেশত্যাগী হন। অভিযোগ, নিয়ম ভেঙে নীরবকে ওই বিশাল অঙ্কের টাকা ঋণ পেতে সাহায্য করেছিলেন পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কেরই এক অবসরপ্রাপ্ত কর্তা। ২০১১ সাল থেকে এই জালিয়াতি চললেও ধরা পড়তে কী করে সাত বছর সময় লাগল, বিস্ময় সেখানেও।
কীভাবে ঘটল এই জালিয়াতি?
ব্যাঙ্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, নিম্নমানের ব্যাঙ্কিং ব্যাবস্থার ফলেই এই অঙ্কের টাকা দূর্ণীতি করা গেছে। ব্যাঙ্কের প্রযুক্তি ব্যবস্থার অপব্যবহার করা হয়েছিল। এর সঙ্গেই পাঞ্জাব ব্যাঙ্কের অভ্যন্তরীণ সফ্টওয়্যার সিস্টেম এসডব্লিউআইএফটি-র সঙ্গে সংযুক্ত ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে, ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের সমস্ত বিষয় রাখতে হবে এসডব্লিউআইএফটি-তে। অন্যথায় ব্যাঙ্কের বইতে কোনও রকম লেনদেন দেখা যাবে না। ঠিক এখানেই ভুল হয়েছে পাঞ্জাব ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের। নীরব মোদীর সঙ্গে ব্যাঙ্কের লেনদেনের কোনও রেকর্ডই ছিল না।
ব্যাঙ্কিং একটি ঝুকিপূর্ণ ব্যবসা। প্রতি দুই থেকে তিন বছর অন্তর কর্মকর্তাদের বদলি করা হয়। এই কেলেঙ্কারীতে জড়িত ব্যাঙ্ক কর্মচারির ক্ষেত্রে সেই বদলি নীতি মানা হয়নি। টানা সাত বছর একই পদে থেকে নীরব মোদীকে ঋণের টাকা পাইয়ে দেওয়ার মতো দূর্ণীতি করেছেন ওই কর্মী। যদি তাকেও বদলি করা হত তবে হয়তো এমন কেলেঙ্কারী থেকে রক্ষা পেত পাঞ্জাব ব্যাঙ্ক।
পশ্চিমী দেশগুলিতেও ব্যাঙ্ক দূর্ণীতি ঘটে। কিন্তু সেখানকার ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা অনেক আঁটসাঁট। টাকা চুরি হয়তো করতে পারে কিন্তু পালিয়ে যাওয়ায় উপায় নেই। ২০০৮ সালের সাবপ্রাইম ক্রেডিট সঙ্কট অর্থনীতিতে গুরুতর প্রভাব ফেলেছিল। তা থেকে শিক্ষা নিয়ে আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্কগুলি নিজেদের কর্পোরেট গভর্নেন্সকে আরও শক্তিশালী করেছে। দুর্ভাগ্যবশত ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলি এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে। নীরব মোদী এবং বিক্রম কোঠারির জালিয়াতি মামলাই এর প্রমাণ। পিয়ার রিভিউয়ের সময় আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্কের কর্মীদের ছুটিতে পাঠানো হয়। অবশ্যই ভারতীয় ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে এমন ঘটে না।
যতক্ষণ না পর্যন্ত কঠোর ব্যাবস্থা নেওয়া হচ্ছে, ব্যাঙ্কিং ব্যাবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত এমন জালিয়াতি চলতে থাকবে।