ভারত-চীন সীমান্তে সেনাদের মধ্যে হাতাহাতি হলেও কখনো গোলাগুলি হয়না কেন

গত দুই মাসের বেশী সময় ধরে ডোকলাম নিয়ে চীন এবং ভারতের মধ্যে বিরোধ চলছে।কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও পাকিস্তানের সীমান্তের মতন অশান্ত নয় চীনের সীমান্ত। বড়জোর হাতাহাতি হলেও গুলাগুলির পর্যায় সাধারণত যায়না চীন – ভারত। এই বিষয় আগেও লক্ষ্য করা গেছে, কিন্তু জানেন কি এর কারণ কি?

অটল বিহারী বাজপেয়ী এর সময় থেকেই চীন এবং ভারতের মধ্যে একটি সমঝোতার প্রেক্ষাপট তৈরি হয় যা পরবর্তীকালে মনমোহন সিংয়ের আমলেও সেই একই নীতি অনুসরণ করা হয়েছে। এই সমঝোতায় দুই দেশই সিদ্ধান্ত নেয় যে ফ্রন্টলাইনের সেনাদের কাছে কোনরকম অস্ত্র থাকবেনা। সেনা র‍্যাঙ্ক অনুযায়ী যদি কোনো আফিসারের কাছে অগ্নেয়াস্ত্র রাখা হয় সেক্ষেত্রে তার নল মাটির দিকে ঘুরিয়ে রাখতে হবে। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের এরকম কোনও চুক্তি নেই। এর জন্যেই ভারত-চীন সীমান্তে গোলাগুলি চলেনা বড়োজোর হাতাহাতি বা কুস্তির ছবি উঠে আসে।

তবে শুধু এটুকুই নয়, এই হাতাহাতিরও কিছু নিয়ম আছে। কেউ কাউকে চড় বা থাপ্পড় মারতে পারবেন না কারণ এটা তাকে অপমান। একে অপরকে ধাক্কা দেয়, কেউ পড়ে গিয়ে আবার উঠে দাঁড়ায়। কিন্তু কেউ কাউকে চড়-থাপ্পড় মেরেছে, এটা দেখা যায় না। চড় মারা অপমান করার সামিল। তাই ধাক্কাধাক্কির সময়েও কেউই হাত ব্যবহার করে না। নিজেদের রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই সেনা সদস্যরা এটা করে থাকেন।

১৯৭৫ সালেই শেষবার ভারত এবং চীনের মধ্যে গুলি চলেছিল। যদিও তাতে কোনো পক্ষের ক্ষতি হয়নি। পরবর্তীতে দুই দেশের মধ্যে অনেক বিরোধ হলেও এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়নি বরং নিয়মিত সমঝোতা ও আলোচনার মধ্যে দিয়েই সমস্যার সমাধান করেছে দুই দেশ।

ভারত এবং চীনের চুক্তি

১৯৯৩ সালে নরসিমহা রাও এর সময় চীন ও ভারতের মধ্যে মেইন্টেন্যান্স অফ পিস এন্ড ট্র্যাঙ্কুয়েলিটি চুক্তি (Agreement of maintenance of peace and tranquility along the LAC) সাক্ষরিত হয়। ১৯৯৬ সালে আস্থা বর্ধক ব্যবস্থাপত্র (Agreement of confidence-building measures in the military field along the LAC) স্বাক্ষরিত হয়। ২০০৩ সালে শান্তি মূলক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।  ২০০৫ সালে ভারত ও চীনের মধ্যে আরও একটি চুক্তি হয়েছ
(Protocol on the modalities of confidence-building measures in the military field along the LAC)। ২০১২ সালে ভারত এবং চীনের মধ্যে আরও একটি চুক্তিপত্র সাক্ষরিত হয় (Agreement on the establishment of a working mechanism for consultation and coordination on India-China border affairs)। ২০১৩ সালে বর্ডার ডিফেন্স কোঅপারেশন এগ্রিমেন্টই এর শেষ চুক্তি (Border defence cooperation Agreement) স্বাক্ষরিত হয়। সীমান্তের অমীমাংসিত অঞ্চলগুলোতে শান্তি বজায় রাখে এই শান্তি চুক্তি গুলোই।

আরও পড়ুন :- চীন ভারত যুদ্ধ লাগলে কোন কোন দেশ কার কার পক্ষ নেবে

এই চুক্তিগুলোর জন্যই সীমান্তে সাধারন ভাবে হাতাহাতি বা কুস্তির ভিডিও দেখা যায় কিন্তু গুলি চালানোর ভিডিও সেরকম দেখা যায়না। বর্তমান পরিস্থিতিতেও দুই দেশের মধ্যে এই পরিস্থিতিকে বহাল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।

ভারত ও পাকিস্তানের চুক্তি

১৯৪৯ এর করাচি চুক্তি :- এই চুক্তি অনুযায়ী সিজ ফায়ার লাইন বা অস্ত্র বিরতি রেখা নির্ধারিত হয়েছিল। ১৯৬৫-র যুদ্ধে ওই চুক্তি লঙ্ঘন না হলেও ৭১-এর যুদ্ধে ভারতের কাছে যখন ৯০ হাজার পাকিস্তানী সেনা যুদ্ধবন্দী হয়ে গিয়েছিল তখন এই চুক্তি লঙ্ঘন হয়েছিল। সিজফায়ার লাইনটিকে সেই সময়েই এল-ও-সি, অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণ রেখা বলে ধরে নেওয়া হয়। আর এই এল-ও-সি তে অস্ত্র বিরতির ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে কোনও চুক্তি নেই।

আরও পড়ুন :- মৃত্যুর ৫২ বছর পরও এই ভারতীয় সৈনিকের আত্মা সীমান্তকে রক্ষা করছে

পারভেজ মুশারফ পাকিস্থানের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ভারত পাকিস্তান সমঝোতা সাক্ষরিত হয়েছিল। যেখানে বলা হয়েছিল এল-ও-সিতে অস্ত্র বিরতি হওয়া উচিত। যতদিন মি. মুশারাফ প্রেসিডেন্ট ছিলেন, ততদিন ওই অস্ত্র বিরতি চালু ছিল। কিন্তু মি. মুশারাফ চলে যাওয়ার পর থেকে ওই সমঝোতা পত্র আর মান্যতা পায় না।