২৪৪১১৩৯, বাঙালির অত্যন্ত পরিচিত একটি ফোন নম্বর। যে নম্বরে ফোন করলে পাওয়া যায় বেলা বোসকে (Bela Bose)! ১৯৯৪ সালে অঞ্জন দত্তের (Anjan Dutta) লেখা, সুর করা এবং গাওয়া বিখ্যাত সেই “চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো”, গানের প্রতিটি শব্দ আজও যুব সমাজের বুকে এসে লাগে। না, গায়ক অবশ্য তার গানের মধ্যে দিয়ে বেলা বোসের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি।
“মিটারে যাচ্ছে বেড়ে/ এই পাবলিক টেলিফোনের/ জরুরি খুব জরুরি দরকার”, চাকরি পাওয়ার শুভ সংবাদটি প্রেমিকার কাছে পৌঁছে দিতে পারেননি গায়ক। তবে বাংলার কোটি কোটি মানুষের মন ছুঁয়ে গিয়েছিল নব্বইয়ের দশকের এই গানটি। সমাজে বেকারত্বের সমস্যার গভীরতা যেন স্পষ্টতই অনুধাবন করা যায় এই গানে। বেকারত্ব যে কিভাবে প্রেমের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, গানের লিরিক্সে তা তুলে ধরেছিলেন অঞ্জন দত্ত (Anjan Dutta)।
গানটি আজও এই সমাজের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তবে একবারও কি ভেবে দেখেছেন, যে ফোন নম্বরটি বেলা বোসের ফোন নম্বর হিসেবে গানের লিরিক্সে উল্লেখ করেছেন অঞ্জন দত্ত, সেই নম্বরের আদেও কোনও অস্তিত্ব রয়েছে কি না? ওই নম্বরে ফোন করলে কি সত্যিই বেলা বোসকে পাওয়া যাবে? অঞ্জন দত্তের বেলা বোস কে? এই প্রশ্নও নিশ্চয়ই গান শুনতে শুনতে মনে এসেছে?
৭ ডিজিটের এই নম্বরটি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কিন্তু অঞ্জন দত্ত (Anjan Dutta) বেশ কিছু কারণের কথা উল্লেখ করেছেন। আসলে নব্বইয়ের দশকে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য ল্যান্ডলাইন ব্যবহার করতে হতো। সেই সময় সকল ল্যান্ড লাইনের ফোন নম্বর ৬ সংখ্যার হতো। তাই গানের ছন্দ মিলিয়ে মিলিয়ে ফোন নম্বর বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে অঞ্জন দত্ত একটি সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, যাতে তৎকালীন সময়ে কারোর ব্যবহৃত নম্বর না হয়ে যায় বেলা বোসের ফোন নম্বরটি!
২৪৪১১৩৯ নম্বরটি আসলে কার?
তবে পরে অবশ্য ল্যান্ডলাইন নম্বর ৭ সংখ্যাবিশিষ্ট হতে থাকে। ফলে ২৪৪১১৩৯ নম্বরটিও বর্তমানে অস্তিত্ব রাখে। এই নম্বরে যদি ফোন করেন তাহলে বেলা বোসকে পাবেন না। তার বদলে ফোন ধরবেন হিন্দি সংবাদপত্র “দৈনিক বিশ্বামিত্র” (Dainik Vishwamitra) এর সম্পাদক! নম্বরটি এখন কার্যত তার নামেই রেজিস্টার করা আছে। এদিকে অঞ্জন দত্তের গানের দৌলতে ২৪৪১১৩৯ নম্বরের জনপ্রিয়তা এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে কিছু কিছু মানুষ আবার বেলা বোসের খোঁজে সত্যি সত্যিই ওই নম্বরে ফোন করে বসেন।
নম্বরটি রেজিস্টার হওয়ার পর থেকেই প্রতিদিন প্রায় শত শত মানুষের ফোন আসছে ওই নম্বরে। বেলা বোসের খোঁজ থামেনি এখনও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বারবার ফোন আসাতে রীতিমতো বিরক্ত সংবাদমাধ্যম কর্তৃপক্ষ। সংবাদমাধ্যমের বিরক্তির মুখে পড়ে শেষ-মেষ তাদের কাছে ক্ষমাও চাইতে হয় অঞ্জন দত্তকে। ২৭ বছর পরেও বেলা বোসের খোঁজে ওই নম্বরে এখনও ফোন করে চলেছেন মানুষ।
বেলা বোস কে?
বেলা বোস বলে অঞ্জন দত্তের জীবনে কখনও কেউ ছিলেন না। কেবল কল্পনা শক্তি দিয়ে তৈরি অনবদ্য এই গানের কথা এবং সুর। তবে গানে ব্যবহৃত ওই ৭ সংখ্যার বাস্তব অস্তিত অস্বীকার করা যায় না। এই ফোন নম্বর আসলে ‘দৈনিক বিশ্বামিত্র’ নামে এক হিন্দি সংবাদপত্রের সম্পাদকের বাড়ির ফোন নম্বর ছিল। যা নিছকই কাকতালীয় ভাবে অঞ্জন দত্ত ব্যবহার করে ফেলেছিলেন তার গানে।
বেলা বোস গানের ইতিহাস
ছন্দ মেলাতে বিভিন্ন সংখ্যা নিয়ে গবেষণা করতে করতে অঞ্জন পেয়েছিলেন বেলা বোসের সেই বিখ্যাত নম্বর- ২৪৪১১৩৯। হাজার হাজার বার ওই নম্বরে ফোন গেছে বেলা বোসকে চেয়ে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায়, অঞ্জন দত্ত দুঃখপ্রকাশ করতে বাধ্য হন।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন ‘ওই সম্পাদক আমার বিরুদ্ধে মামলাই দিয়েছিলেন। আমি তাকে জানাই, নেহাত ছন্দ মেলানো ছাড়া আমার আর কোনও উদ্দেশ্য ছিলো না। এমনকী বেলা বোস বলে কাউকে আমি চিনতামও না।’