মোদী সরকারের দীর্ঘ ৭ বছরেরও বেশি মেয়াদকালে কেন্দ্রীয় সরকারী বিভিন্ন নীতিকে কেন্দ্র করে জনমানসে বহু বিতর্ক দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রথমবার সরকার গঠনের পর প্রথম পাঁচ বছর তার যে জনপ্রিয়তা দেশ তথা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল, ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিভিন্ন কারণে সেই জনপ্রিয়তা কিছুটা হলেও খর্ব হয়েছে।
বেকারত্বের সমস্যা তো ছিলই, পরবর্তী দিনে কৃষক বিদ্রোহ, বিতর্কিত সিএএ আইন, জিডিপির অবনমন, ভগ্নপ্রায় অর্থনীতি, মূল্যবৃদ্ধি, রাষ্ট্রীয় সম্পদের বেসরকারিকরণ নীতি নিয়ে তর্কবিতর্কের পর এবার করোনাকালে অতিমারি সামাল দিতে মোদি সরকারের ব্যর্থতা নিয়েও সমালোচনায় মেতেছে আন্তর্জাতিক মহল! দেশ তথা সমগ্র পৃথিবী জুড়ে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে যে সমালোচনার হাওয়া বইছে তাতে ভারতবাসীর মনেও কি মোদি বিরোধী হাওয়া বইতে শুরু করেছে? কী বলছে সেই সমীক্ষার রিপোর্ট?
সম্প্রতি সারা দেশজুড়ে ৫৪৩ টি লোকসভা কেন্দ্রের প্রায় ১ লক্ষ ৩৯ হাজার মানুষের উপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল বিশিষ্ট রাজনৈতিক সমীক্ষক সংস্থা সি-ভোটার। সেই সমীক্ষার রিপোর্ট সম্প্রতি প্রকাশও করেছে তারা। সেই রিপোর্টে উঠে এলো চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য। নরেন্দ্র মোদী, মমতা বন্দোপাধ্যায়, রাহুল গান্ধী এবং অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মধ্যে থেকে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পদের দাবীদার হিসেবে ভোটাররা বেছে নিলেন তাদের পছন্দের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে।
কীভাবে নেওয়া হয় এই সমীক্ষা?
মোদী সরকারের বিদেশনীতি, কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বিলোপ, রাম মন্দির সম্পর্কিত সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়, করোনাকালে লকডাউনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ, দেশে-বিদেশে ভ্যাকসিন বন্টন নীতি সম্পর্কে জনতার রায় চাওয়া হয়েছিল এই সমীক্ষায়। এই প্যারামিটারের উপর নির্ভর করেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে যেমন অনেকেই সমর্থন জানিয়েছেন, তেমনই মোদী সরকারের প্রতি অসমর্থনও জানিয়েছেন অনেকেই।
সমীক্ষার ফলাফলে কে কত পয়েন্ট পেলেন?
আন্তর্জাতিক মহলে মোদীকে নিয়ে যতই সমালোচনা চলুক না কেন, ভারতবাসীর প্রথম পছন্দ কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই, এতে কোনও সন্দেহ নেই। এই সমীক্ষায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতিপক্ষ হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল গান্ধী, মনমোহন সিং এবং অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে রাখা হয়েছিল। তবে ৪২ শতাংশ মানুষের সমর্থন পেয়ে প্রথম স্থানে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদীই।
অন্যান্যদের মধ্যে রাহুল গান্ধী পেয়েছেন মাত্র ১২ শতাংশ ভোট, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ভোট পেয়েছেন ৬ শতাংশ ভোট, অরবিন্দ কেজরিওয়াল ৬ শতাংশ এবং বাকি ৪ শতাংশ মানুষ পরবর্তী দিনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখতে চেয়েছেন দিল্লির আসনে।
সরাসরি প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসেবে কার পাল্লা ভারী?
সরাসরি প্রধানমন্ত্রী বেছে নেওয়ার সমীক্ষায় রাহুল গান্ধী এবং নরেন্দ্র মোদীকে রাখা হয়েছিল। ৫০ শতাংশ ভোটার আগামী দিনেও নরেন্দ্র মোদীকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। ৩০ শতাংশ মানুষের সমর্থন দিয়েছে রাহুল গান্ধীর দিকে। ১০ শতাংশ মানুষের কাউকেই পছন্দ নয়, বাকি ১০ শতাংশ মানুষ উত্তর দিতে চাননি।
আরও পড়ুন : মোদীর পর বিজেপির প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তালিকায় কারা রয়েছেন
একুশের নির্বাচনে বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে হেরে যাওয়ার পর ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোদী সরকারের প্রতিপক্ষ হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম উঠে এসেছিল রাজনৈতিক মহলে। “দিল্লিতে মমতাদিকে চাই”, এই মর্মে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছিলেন মমতা সমর্থকরা। সি-ভোটার রিপোর্ট অবশ্য বুঝিয়ে দিল যে, জনতার রায়ে নরেন্দ্র মোদীই এগিয়ে।