লেখক থেকে গোয়েন্দা, গায়ক থেকে নায়ক – বুদ্ধির গোড়ায় ধোঁয়া না দিলে কাজ এগোয় না একদম। ব্যোমকেশ থেকে মান্না দে, তাই সকলেই ধূমপানের কার্যকারীতার কথা পরোক্ষে হলেও স্বীকার করে নিয়েছেন।
আমাদের দেশে ধূমপানের অভ্যেস অতি প্রাচীন। যিশুর জন্মেরও ৩০০০ বছর আগে এ দেশে ধূমপানের প্রমাণ মিলেছে। তবে তামাক পাতা নয়, গাঁজা গাছের পাতা পুড়িয়ে ধোঁয়ার নেশা করার চল ছিল সেসময়ে। তামাক পাতা পোড়ানোর চল চালু হয় পরে। এই ব্যাপারে পথিকৃৎ আমেরিকা। কারণ তামাক গাছের জন্ম ভিটে এই দেশেই।
৬০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের সময়কালে তামাক গাছের অস্তিত্বের কিছু নমুনাও পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। জানা গেছে, দাঁতের ব্যথা কমাতে বা কাটাছেঁড়ার ওষুধ হিসেবে সে সময় তামাক পাতা ব্যবহার করা হত আমেরিকায়। তবে তামাক পাতা পুড়িয়ে ধোঁয়া টানার প্রচলন হয় ষোড়শ শতকের কিছু আগে থেকে। ভার্জিনিয়ার বাসিন্দা টমাস হ্যারিয়েট তামাক পাতা পুড়িয়ে ধোঁয়া টানার প্রচলন করেন।
সালটা ১৫৮৮। আমেরিকায় গিয়ে টমাসের ধারণা হয়েছিল, নানা রোগ আটকাতে পারে তামাকের ধোঁয়া। আর সে জন্যই তিনি তামাক পাতা পুড়িয়ে ধোঁয়া টানার প্রচলন করেন। ২ জুলাই, ১৬২১ সালে ৬১ বছর বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে টমাস হ্যারিয়েটের মৃত্যু হয়। অনেকের ধারণা, অতিরিক্ত তামাক সেবনই হ্যারিয়েটের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর পর তামাকের চাহিদা এতটাই বৃদ্ধি পায়, যে ইউরোপ ও আমেরিকার বেশ কিছু দেশে একটা সময় স্বর্ণমুদ্রার পরিবর্তে তামাক পাতা দিয়ে বেচাকেনা শুরু হয়েছিল।
আরও পড়ুন : সিগারেট ও তামাক সেবনের কূঅভ্যাস কীভাবে ছাড়বেন ?
এর অনেক পরে ১৯০২ সালে শুরু হয় বিশ্ববিখ্যাত সিগারেট প্রস্তুতকারী সংস্থা মার্লবোরো-র বিপনন। আর তার পরই সারা বিশ্বে ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পড়ে ধূমপান-সহ নানা তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবসা আর চাহিদা। এই মুহূর্তে বিশ্বের প্রায় ১০০ কোটি মানুষ সিগারেটের ধোঁয়ায় আসক্ত।
আমাদের দেশে প্রতি সপ্তাহে ধূমপানের জন্য ধূমপায়ীদের খরচ হয় ৩৪৮ টাকা। তবে কলকাতায় ধূমপায়ীদের সংখ্যা দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বেশী। কলকাতায় ধূমপায়ীদের হার শতকরা ৪৯ শতাংশ। সেখানে বাকি রাজ্যের ধূমপায়ীদের হার ৪৩ শতাংশ। ফ্রান্সে ধূমপানকারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় হ্রাস পেয়েছে। ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমেছে দশ লক্ষ। ২৮ মে, ২০১৮-এ ফ্রান্সের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়।
আরও পড়ুন : শিবের সঙ্গে গাঁজা জড়ানো নিছক গাঁজাখুরি
আরও পড়ুন : দীর্ঘদিন ধূমপানে মুখের গঠন পাল্টায় যেভাবে! দেখুন ৪ ছবি
সম্প্রতি ‘আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি’-র এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে যে আমাদের দেশে এমন ৬ লক্ষ ২৫ হাজার ধূমপায়ী আছেন যাঁদের বয়স ১০ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। ভারত দ্বিতীয় বৃহত্তম তামাক ব্যবহারকারী দেশ। প্রতি বছর ভারতে ১০ লক্ষ মানুষের অকালমৃত্যু হয় শুধুমাত্র তামাক ব্যবহারের কারণে। তামাক উৎপাদনের দিক থেকে ভারত তৃতীয় স্থানে। দেশের সমস্ত ক্যানসার রোগীদের ৫০ শতাংশই তামাক সেবন করেন। মুখের ক্যানসারের ৯০শতাংশই সিগারেট, গুটখা ও অন্যান্য তামাকের নেশায় আসক্তির কারণে হয়। ভারতে প্রায় ৯ কোটি পুরুষ ও ১.৩ কোটি মহিলা ধূমপান করেন।