‘তুমি হিরো হলে অভিনয় ছেড়ে দেব’, অপমানের মোক্ষম জবাব দিলেন মিঠুন

টলিউডের (Tollywood) গণ্ডি পেরিয়ে সূদূর মুম্বাইয়ে বলিউডে (Bollywood) গিয়ে যে সকল বাঙালি অভিনেতা কিংবা অভিনেত্রী নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন, আপামর ভারতবাসীর কাছে অভিনেতা হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে পেরেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন মহাগুরু মিঠুন চক্রবর্তী (Mithun Chakraborty)। তবে মিঠুন চক্রবর্তীর টলিউডের “মহাগুরু” কিংবা বলিউডের “ডিস্কো ডান্সার” হয়ে ওঠার গল্পটা খুব একটা সহজ ছিল না।

   

আজ তিনি ইন্ডাস্ট্রির সকলের মিঠুনদা হয়ে উঠেছেন। তার অবাঙালি সহ-অভিনেতা কিংবা সহকর্মীরা তাকে “দাদা” বলেই জানেন এবং মানেন। কিন্তু একটা সময় ছিল যখন বলিউডে প্রতি পদে পদে ঠোক্কর খেতে হয়েছে তাকে। চলার পথে বহু বাধা-বিপত্তি, সহ-অভিনেতাদের টিটকিরি, পরিচালক প্রযোজকদের অপমান, গঞ্জনা নিত্যদিন হজম করতে হয়েছে তাকে। তবে তিনি অবশ্য হেরে যান নি। বলিউডের চোখে চোখ রেখে তিনি নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন।

আজ থেকে প্রায় ৪ দশক আগে মিঠুন চক্রবর্তী যখন বলিউডে প্রথম পা রাখেন, তখন বলিউড কিন্তু তাকে স্বাগত জানানোর জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিল না। গৌরাঙ্গ অর্থাৎ মিঠুন যেদিন মুম্বাইয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন, সেদিন তার মাথার উপর ছাদ বলতে কিছুই ছিল না। ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম রাতটা তাকে এক প্রযোজকের অফিসের বাইরে বেঞ্চের উপর শুয়েই কাটাতে হয়েছিল। তার পোশাক-আশাক, চেহারার জন্য বরাবর তাকে সমালোচিত হতে হয়েছে।

বলিউডের পরিচালক-প্রযোজকদের দরজায় দরজায় ঘুরে বিস্তর সংগ্রামের পর যদিও বা মৃণাল সেনের পরিচালিত “মৃগয়া” ছবিতে কাজের সুযোগ পেলেন মিঠুন, তবুও তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। বলিউডের একাধিক পরিচালক এবং তৎকালীন সময়ের বলিষ্ঠ নায়কেরা এক কথায় ভাবতেই পারতেন না যে মিঠুন চক্রবর্তী কোনদিনও নায়ক হয়ে উঠতে পারবেন।

জানলে হয়তো অবাক হবেন, মিঠুনের সমকালীন সময়ে ইন্ডাস্ট্রিতে রাজত্ব করতেন যিনি, সেই জিতেন্দ্র (Jitendra) মিঠুনকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এই বলে যে, “মিঠুন যদি বলিউডে সফল হয় তাহলে আমি অভিনয় ছেড়ে দেব”। বলাবাহুল্য, সেদিন জিতেন্দ্র মিঠুনকে যে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, পরবর্তী দিনে তা সত্যি হয়। সত্যি সত্যিই মিঠুন টলিউডের পাশাপাশি বলিউডেরও মহাগুরু হয়ে উঠলেন। আর দর্শকের বিচারে জিতেন্দ্র চলে গেলেন ব্যাকফুটে।

Mithun Chakraborty

একসময় যে ছেলেটিকে প্রতিনিয়ত তার সাদামাটা পোশাকের জন্য অপদস্থ হতে হতো, সেই ছেলেটিই ১৯৮২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত “ডিস্কো ড্যান্সার” ছবিতে এমন অভিনয় করলেন যে তার পরবর্তী সময়ে সকলেই তার পোশাকের অনুকরণ করতে শুরু করে। “ডিস্কো ড্যান্সার” ছবিটিকে তার মিঠুনের ক্যারিয়ারে মাইলস্টোন বলা যেতে পারে। কারণ এই ছবিতে অভিনয় করার পর তাকে আর কখনও ঘুরে তাকাতে হয়নি। বলিউডের একের পর এক ছবিতে নাচ এবং অভিনয় ক্ষমতার গুণে ঝড় তুলেছেন মিঠুন।

সেই সময় বলিউডে মিঠুনের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়ছিলো। একসময় যারা তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, তাদের উপযুক্ত জবাব দিয়েছিলেন মিঠুন। এদিকে জিতেন্দ্র অভিনীত প্রতিটি ছবি একের পর এক ফ্লপ হতে থাকে। তবে মিঠুনের সঙ্গে অবশ্য “জাল”, “অ্যাইসা প্যায়ার কাহা” এবং “স্বর্গ সে সুন্দর” ছবিতে সহ-অভিনেতা হিসেবে কাজ করেছিলেন জিতেন্দ্র। সেই সময় ইন্ডাস্ট্রিতে মিঠুন মানেই আলাদা সেন্সেশন ছিল।

সেই সেন্সেশনকে কাজে লাগাতে বলিউডে এক বছরে ১৫টি ছবিতে কাজের সুযোগ দেওয়া হতো মিঠুন চক্রবর্তীকে। ৪ দশকের অভিনয় জীবনে টলিউড এবং বলিউড মিলিয়ে ৩১৫ টিরও বেশি ছবিতে কাজ করে ফেলেছেন মিঠুন চক্রবর্তী। তার মুখনিসৃত “মারবো এখানে লাশ পড়বে শ্মশানে”, “আমি এমেলে ফাটাকেষ্ট”, “জাত গোখরো, এক ছোবলেই ছবি” আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। মিঠুন চক্রবর্তী শুধু একজন অভিনেতা নন, তিনি আপামর ভারতবাসীর কাছে ট্রেন্ডের অপর নাম।