পৃথিবী ঘুরছে অবিরাম। এক নিজের অক্ষের চারিদিকে আবার এই ঘুরতে ঘুরতে সূর্যকেও প্রদক্ষিণ করছে। এই পৃথিবীর সাথে সাথে আমরাও ঘুরছি। আমরা বলতে পৃথিবীর প্রত্যেকটা জিনিষই ঘুরছে পৃথিবীর সাথেই। এখন যদি হঠাৎ করে পৃথিবী ঘুর্নন বন্ধ করে দেয় তাহলে কি হবে? আজ আপনাদের এই ঘটনার ব্যাখ্যা দেব বিস্তারে।
পৃথিবীর ঘূর্ণন বন্ধ হলে অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে প্রথমেই আমাদের ওজন বেড়ে যাবে। বিরাট কিছু মারাত্মক পর্যায়ে বাড়বে না যাতে আপনি হাতির মতো ওজনের হয়ে যাবেন না। তাই এই ওজন বাড়ার ঘটনা খুব একটা দুশ্চিন্তার বিষয় না। দুশ্চিন্তার বিষয় অন্যক্ষেত্রে। আসুন দেখি ভুবিজ্ঞানী থেকে শুরু করে পদার্থ বিজ্ঞানিদের মতে কী কী হতে পারে।
পৃথিবী হটাত্ ঘূর্ণন বন্ধ করে দিলে কী হবে ?
প্রথমে একটা বিষয় আপনার মনে রাখা প্রয়োজন যে পৃথিবীর নিজেকে কেন্দ্র করে প্রতি ঘন্টায় প্রায় ১০০০ মাইল বা ১৬৭৫ কিলোমিটার গতিতে ঘুরছে। এই ঘুর্নন গতির ফলে আসলে আমাদের যা লাভ হচ্ছে তা হল সময়। আর সেই সময় আমাদেরকে দিচ্ছে জীবনধারন এর সব কিছু। এটা খুবই জটিল বিষয়। পৃথিবী পশ্চিম থেকে পুর্ব দিকে ঘুরছে।কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় পৃথিবী পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে ঘুরছে।
এখন আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, আপনি যদি ভাবেন পৃথিবী থেকে একটা লাফ দিয়ে কয়েক ফুট পরিমান উপরে উঠে যান তাহলে পৃথিবী তো আপনাকে ফেলে রেখেই এক সেকেন্ডেই ১২০৭ ফিট চলে যেত। কারন পৃথিবী প্রতি সেকেন্ডে এই গতিতে ঘুরছে নিজেকে কেন্দ্র করে। কিন্তু আপনি কেন তাহলে পৃথিবীর বাইরে চলে যাচ্ছেন না?
হচ্ছে না কারন পৃথিবী শুধু নিজেই ঘুরছে না তার উপরে থাকা সকল কিছুকে সঙ্গে নিয়েই ঘুরছে। তার মানে পৃথিবীর সাথে থাকা সকল বস্তু যেমন ঘর,বাড়ি বাতাস সবই পৃথিবীর সাথে সাথে ঘুরতে থাকে। সেটা আপনি পৃথিবীর যেখা্নেই থাকেন না কেন। পৃথিবীর আপনাকে যে আকর্ষন বল দিয়ে ধরে রাখছে সেই আকর্ষনের জন্যই এসব কিছু হচ্ছে। আর এই অভিকর্ষ বলের কারণেই রকেটকে এত এত বেশি জ্বালানি ব্যবহার করে পুরো পৃথিবীর অভিকর্ষ বলকে উপক্ষো করে আকাশের দিকে ঊর্ধ্বে মহাকাশ ছাড়িয়ে যায় য। আর একটা বিষয় হচ্ছে বস্তুর জড়তা এবং কেন্দ্রমুখি (inertia and centripetal force) শক্তি।
পৃথিবীর কী ঘটবে ?
মনে করুন আপনি একটা ট্যাক্সিতে উঠলেন যেটা ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে চলছে। হঠাৎ করে ট্যাক্সিটা একটা কষে ব্রেক দিলে কি হবে? ট্যাক্সির মধ্যে থাকা সবাই একই সাথে সামনের দিকে ঝুকে পড়বে। যদি ট্যাক্সিতে ব্রেক না দিয়ে রাস্তার পাশে একটা দেওয়ালের সাথে ধাক্কা লেগে একেবারে তৎক্ষনাৎ থেমে যায় তবে কি হবে। সবাই এত জোরে সামনের দিকে ছিটকে যাবে যে কেউই বেচে থাকার মতো অবস্থায় থাকবে না।
ভাবুন সামান্য একটা ট্যাক্সি যদি ঘন্টায় ৬০ কিমি বেগে চলতে চলতে হঠাৎ থেমে গেলে ট্যাক্সির মধ্যে থাকা সকল ব্যক্তির জীবন শেষ হতে যায় তাহলে ঘন্টায় ১৬৭৫ কিমি গতিতে চলা পৃথিবী হঠাৎ থেমে গেলে কি ভয়াবহ ঘটনা পারে?
পৃথিবী হঠাৎ থেমে গেলে প্রথম দুই সেকেন্ডে যা যা ঘটেবে
প্রথমেই পৃথিবীতে থাকা সকল বস্তু একই সাথে উড়তে শুরু করবে ঠিক পশ্চিম দিকে। সকল কিছু বলতে সকল কিছু। যেমন পৃথিবীর মধ্যে থাকা বিশাল বিশাল সব বাড়ি ,ঘর ফ্ল্যাট, রাস্তাঘাট, কল কারখানা এমনকি পাহাড় পর্বতগুলোও মাটি থেকে উপরে গিয়ে উড়তে শুরু করবে। এবং সেই উড়ে যাওয়ার গতি হবে প্রায় ঘন্টায় ১০০০ কিলোমিটার এর মতন। পৃথিবীর কোন কিছুই সোজা হয়ে দাড়িয়ে থাকতে পারবে না। কারন ওই ট্যাক্সির মতন পুরো পৃথিবী হঠাৎ করে যে একটা প্রচন্ড ধাক্কা লাগবে পুর্ব থেকে পশ্চিম দিকে যে তা পৃথিবীতে থাকা কোন কিছুই সামলাতে পারবে না ।তা আমাদের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ সেটা মাউন্ট এভারেস্টই হোক বা আমাদের সর্বোচ্চ বিল্ডিং বুর্জ খলিফা বিল্ডিংই হোক।
আরও পড়ুন : মাত্র ১ মিনিটে চামচ দিয়ে রোগ চিনুন, জিভের রঙে রোগ চেনার উপায়
মানুষ এমন ভাবে উড়তে শুরু করবে যেভাবে একটা পিস্তল থেকে বুলেট বের হলে সেই গতিতে। পৃথিবীর সকল মানুষ প্রজাতি একেবারে কিছুক্ষনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। কারন হঠাৎ করে আপনি যদি ১২০০ ফুট প্রতি সেকেন্ড ছিটকে গিয়ে উড়তে শুরু করেন তবে আপনার শরীরের প্রতিটি হাড় থেকে মাংস এবং শিরা, উপশিরা আলাদা হয়ে যাবে এবং শরীরের মধ্যে থাকা রক্তগুলো মাটিতে মিশে যাবে না তার বদলে তা বায়ু মন্ডল বরাবর ভাসতে থাকবে। এর কারন হচ্ছে পৃথিবীর আকর্ষণ বলের তারতম্য বা হ্রাস বৃদ্ধি।
প্রথম কয়েক সেকেন্ডে দুই স্থানে থাকা মানুষ বেঁচে যাবে। প্রথমত বেঁচে যাবে আকাশে প্লেনে উড়তে থাকা লোকেরা এবং একেবারে উত্তর এবং দক্ষিন মেরুতে থাকা লোকেরা। কিন্তু সেটা কয়েক সেকেন্ডের জন্য্। কারন পৃথিবীর থেমে যাওয়া কয়েক সেকেন্ড পরেই শুরু হবে ভয়ানক ধুলোর মেঘ জমা। যা শুরু করবে ভয়ানক ঝড় এবং প্রচন্ড বজ্রপাত এবং সেই বজ্রপাতের মধ্যে বিদ্যুত শক্তি এতটাই বেশি হবে যে আকাশে থাকা বিমানগুলো এক সেকেন্ডের মধ্যে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। চারিদিকে বজ্রপাতের ফলে সারা পৃথিবী জুড়েই মারাত্মক বিদ্যুতায়নের সৃষ্টি হবে।
আরও পড়ুন : বজ্রপাত থেকে বাঁচতে আপনার কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়
মেরু অঞ্চলে যারা থাকবে তারা প্রথমে হয়তো বেচে যাবে কিন্তু হঠাৎ করে পৃথিবীর ঘূর্ণন থেমে যাওয়ার কারনে পৃথিবী প্রচন্ড একটা ধাক্কার মতন বাতাসের সৃস্টি হবে। একটা পারমানবিক বোমা বিস্ফোরণ হলে হঠাৎ করে যেমন প্রচন্ড শক ওয়েভের সৃস্টি হয় ঠিক তেমনি অসম্ভব ভয়ানক একটা শক ওয়েভের ধাক্কা গিয়ে মেরু গুলোতে দেবে। এর ফলে সেখানে বসবাসকারীরা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হবে।তাদের ঘর বাড়ি একেবারে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। যেটা পারমানবিক বোমার শকওয়েভের ফলে হয়ে থাকে।
একটা মহাকাশ যান বা রকেট যখন মহাকাশ থেকে পৃথিবী দিকে বায়ু মন্ডলের বিভিন্ন স্তর ভেদ করে যদি ১৭০০ কিমি গতি প্রতি ঘন্টায় নামতে থাকে তখন তাতে যেমন বায়ুর ঘর্ষণের ফলে আগুন লেগে যায় ।ঠিক তেমনই অবস্থার সৃষ্টি হবে সারা পৃথিবী জুড়েই। সমস্ত স্থলভাগ ও সমুদ্র সহ সবকিছুতেই আগুন লেগে যাবে। এত ভয়ানক আগুন লাগবে যে সমুদ্রের জল শুকিয়ে যাবে। আর এই আগুনের জ্বালানি হচ্ছে কি?? অবশ্যই অক্সিজেন। অর্থাৎ জল যেমন একদিকে শেষ হবে তেমনি বাতাসের অক্সিজেনও খুব দ্রুততার সঙ্গে শেষ হবে।
এই ভয়ানক আগুন সমৃদ্ধ বাতাস মোটামুটি পৃথিবীর ভুত্বকে থাকা বাকি সবকিছুকেই শেষ করে দেবে।গাছপালা ,বন জঙ্গল, পশু পক্ষী ,জীব জন্তু সবকিছু।এমনকি মাটির ভিতরে ঢুকে থাকা গাছের শিকড়গুলোও পুরো পুড়ে যাবে।
আরও পড়ুন : রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারে আর কতটা গ্যাস বেঁচে আছে বুঝবেন কীভাবে
পৃথিবীর ঘূর্ণন বন্ধ হলে সমুদ্রের জলের যা হবে
আমরা জানি পৃথিবী অভিগত গোলকের আকারের।অর্থাৎ পৃথিবী পৃথিবী পুরোপুরি গোল না। কিছুটা চ্যাপ্টা। যেহেতু জলের ধর্ম সমতল পৃস্ঠ ধারন করা তাই জল সেটাই করবে। সে সেই কমলালেবু আকারের পৃথিবীকে নিখুঁত গোল করে ফেলবে। ফলে পুরো পৃথিবী একেবারে শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাবে ।তার মানে হচ্ছে পৃথিবীর ৯০ ভাগই হয়ে যাবে ভূভাগ। অর্থাৎ সমস্ত পৃথিবীর বিনাশ হবে তা হলফ করেই বলা যায়।