

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জাতির উদ্দেশ্যে শর্তসাপেক্ষে ২০ই এপ্রিলের পর কিছু ক্ষেত্রে ছাড়ের কথা বলেছিলেন। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দেশজুড়ে চলা লকডাউনে বন্ধ সমস্ত রকম পরিষেবা। থমকে যাওয়া অর্থনীতি ও গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক পরিষেবার ক্ষেত্রগুলিকে স্বাভাবিক করতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সভার বৈঠকে গত বুধবার কিছু নির্দেশিকা জারি হয়। এই ছাড় পশ্চিমবঙ্গেও মিলবে, তবে পশ্চিমবঙ্গে আরও কিছু বাড়তি ক্ষেত্রেও ছাড় রয়েছে। কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন এই ছাড় সেইসব এলাকার জন্যই যেখানে এখনো কোনো সংক্রমণ হয়নি। আর সংক্রমণ হলেও ছাড় তুলে নেওয়া হবে। অর্থাৎ নিজের এলাকাকে সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব আপনারই।
যেসব ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে ছাড় পাওয়া যাবে সেগুলি হল:-
• চিকিৎসা পরিষেবায় যুক্ত চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, নার্স, প্যারামেডিকেল স্টাফ, ল্যাব টেকনিসিয়ান, মিডওয়াফ ও হাসপাতাল সহযোগী অনান্য কর্মীরা সকল প্রকার ছাড় পারবেন। যেতে পারবেন রাজ্য ও রাজ্যের বাইরে। ব্যবহার করতে পারবেন বিমান। • কৃষি চাষ ও কৃষি সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলি খোলার ক্ষেত্রে মিলবে ছাড়। খোলা থাকবে কৃষি দ্রব্য উৎপাদন সংস্থা, কৃষি যন্ত্রপাতি, যন্ত্রপাতি সারানোর দোকান, কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদন সংস্থা, সরবরাহ সংস্থা, সার, কৃষির ওষুধপত্র ও বীজ সরবরাহ ব্যবস্থা। • দুগ্ধজাত দ্রব্যের ক্ষেত্রে দুধ সঞ্চয় কেন্দ্র, দুধ সরবরাহ ব্যবস্থা, দুগ্ধজাত দ্রব্য উৎপাদন, যোগান দেওয়ার ক্ষেত্রে সকল প্রকার ছাড় থাকবে।
• সকল প্রকার মৎস চাষ কেন্দ্র। মাছের চারা উৎপাদন, মাছের খাবার তৈরির কেন্দ্র ও মৎস সংক্রান্ত সকল প্রকার বাণিজ্যে ছাড়। পশুদের খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনের ক্ষেত্রেও ছাড় দেওয়া হয়েছে। • সামাজিক ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বাড়ির শিশু, পঙ্গু ও মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে লকডাইনের নিয়ম প্রযোজ্য হবে না। নজর রাখা হবে অবজার্ভ হোম ও কেয়ার হোমে থাকা শিশুদের। • খোলা থাকবে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। এছাড়াও ছাড় দেওয়া হয়েছে তেল উৎপাদন ও গ্যাস পরিষেবা ক্ষেত্রগুলিকে। খোলা থাকবে পোস্টাল সার্ভিস ও পোষ্ট অফিস।
• পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় দফায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত নেন রাজ্যের জুটমিল, ক্ষুদ্র নির্মাণ, ক্ষুদ্র শিল্প সংস্থা, ইঁটভাঁটাগুলি খোলা থাকবে। চলবে ১০০ দিনের কাজ। • এছাড়াও রাজ্যজুড়ে ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন দুধ বিক্রয়কারীরা। এদের কথা ভেবে খুলে দেওয়া হয়েছে মিষ্টি দোকানগুলি। • বিড়ি শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে পারবেন। • ফুল বিক্রেতারা দোকান খুলতে পারবেন, পাশাপাশি ফুলের ক্ষেত্রে আদানপ্রদানে যানবাহনেরও ছাড় মিলবে।
এছাড়াও ছাড় পাওয়া যাবে সবরকম পণ্য পরিবহনে • কৃষিজাত পণ্য আহরণ করে তা বাজারে পৌঁছানো সরাসরি ও বিকেন্দ্রীকরণ বাজারের মাধ্যমে, সার উৎপাদন এবং বন্টন, কীটনাশক এবং বীজ, মৎস্য চাষ, ইত্যাদি এবং পশুপালন পোল্ট্রি এবং চা কফি ও রাবার প্লান্টেশনে • গ্রামীণ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, রাস্তা নির্মাণ, সেচ প্রকল্প, গ্রামে শিল্প প্রকল্পের নির্মাণকার্য, এম এন আর ই জি এ প্রকল্পের কাজ ইত্যাদি চলবে তবে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে সেচ ও জল সংরক্ষণে।কমন সার্ভিস সেন্টারের কাজ চলবে যাতে পরিযায়ী শ্রমিক এবং গ্রামীণ শ্রমিকরা কাজ করতে পারে।
• গ্রামীণ শিল্পকর্ম। • ই-কমার্স অপারেশন, আইটি এবং আইটি এনাবল সার্ভিস, সরকারি কাজের জন্য ডেটা এবং কল সেন্টার এবং অনলাইন শিক্ষকতা ও দূরশিক্ষা সংক্রান্ত কাজ। • সকল স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং সামাজিক ক্ষেত্রের সাথে যুক্ত কাজ • পাবলিক ইউটিলিটির কাজ • অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পরিবহন • খোলা থাকবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের ও স্থানীয় প্রশাসনের অফিস। • অ্যাক্সেস কন্ট্রোল অনুমতি দেওয়া আছে এসইজেডএ, ইওইউ, শিল্পতলুক এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউনশিপকে অনুমতি দাওয়া হয় কিন্তু এই ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
• আইটি হার্ডওয়ার উৎপাদন এর কাজ, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য এবং প্যাকেজিং এর কাজ। • কয়লা খনি এবং তেল উৎপাদনের কাজ। • আর বি আই, ব্যাংক, এটিএম,বীমা কোম্পানিগুলো কাজ করবে।শিল্প ক্ষেত্রকে পর্যাপ্ত নগদ ও ঋণ দাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।মনে করা হচ্ছে এই পদক্ষেপের ফলে শিল্প ও উৎপাদন ক্ষেত্রে অবস্থা ঠিক হবে।
আরও পড়ুন :- পশ্চিমবঙ্গে করোনার হটস্পট এবং নন হটস্পট জেলার তালিকা
তবে এইসবের ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্বের নীতি যাতে সঠিক ভাবে পালন করা হয় সেক্ষেত্রেও নজর রাখা হবে। এই বিষয়গুলিতে আগে থেকে ছাড় দাওয়া হলেও এখন আরো কিছু জিনিস যোগ করা হয়েছে। এবার সেই তালিকায় আরও কিছু যুক্ত করার কথা হচ্ছে। সেগুলো হলো :-
• নন ব্যাংকিং ফিনান্স কর্পোরেশন ও মাইক্রো ফিনান্স ইনস্টিটিউট। • নারকেল , কোকোয়া ও বাঁশ গাছ বসানোর কাজ। • আদিবাসীদের চাষবাস ও গাছ লাগানোর কাজ। • গ্রামাঞ্চলে জল সরবরাহ, বিদ্যুৎ সরবরাহ ও টেলিকমের অপটিক্যাল ফাইবার বসানোর কাজ। • কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাজন, ফ্লিপকার্ট ও স্ন্যাপডিলে মোবাইল ফোন, টিভি, ফ্রিজ, ল্যাপটপ এর মতন গ্যাজেটস, জামাকাপড়, ওষুধ ও মুদিখানার জিনিসপত্র বিক্রি করা যাবে। তবে এক্ষেত্রে গাড়ি চালানোর জন্য প্রশাসনের অনুমতি প্রয়োজন।
আরও পড়ুন :- পশ্চিমবঙ্গের এই ১০ জেলাকে ছুঁতে পারেনি করোনা, জানালেন মুখ্যমন্ত্রী
২০ এপ্রিল সোমবার থেকে খুলে যাবে রাজ্য সমস্ত সরকারি দপ্তরগুলি। শুরুতে ২৫ শতাংশ কর্মী নিয়ে কাজ শুরু হবে। কোন কোন ক্ষেত্রের কর্মীরা এখানে যোগদান করবেন তা পরবর্তী নির্দেশিকায় জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। রাজ্যের যুগ্ম সচিব ও উচ্চ পদস্থ আধিকারিকদের ২০ই এপ্রিল থেকে কাজে যোগ দেবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছাড় পাওয়া যেতে পারে আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, দুই দিনাজপুর, মালদহ, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরলিয়া, পূর্ব বর্ধমান, ঝাড়গ্রাম জেলায় মনে করা হচ্ছে।
এছাড়াও লকডাউন জারি হওয়ার সময় থেকেই যে সকল ক্ষেত্র যেমন অত্যাবশ্যকীয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছিল সেই সব ক্ষেত্রে স্বাভাবিক নিয়মেই মিলবে ছাড়। তবে মনে রাখতে সব ক্ষেত্রেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও মাস্ক ব্যবহার অত্যাবশ্যকীয়।