আঙ্গুল ফোটালে শব্দ হয় কেন? আঙুল ফোটানো ভালো না খারাপ?

আমাদের অনেকেরই অভ্যাস আছে, কাজের ফাঁকে, প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে,আঙ্গুল ফোটানোর। আঙ্গুল ফোটানো যেন অনেকেরই নিত্য-নৈমিত্তিক অভ্যাস, অনেকেই বলেন আঙ্গুল ফোটালে অনেক ভাল লাগে।  আঙ্গুল ফোটালে একধরনের জোড়ালো “ক্র্যাকিং”, শব্দও হয়। সাধারণত ধারণা কারা হয়, আঙ্গুল মোচড়ানোর সময় হাড়ে হাড়ে ঘষা লেগে বুঝি শব্দ হয়।

কিন্তু বিষয়টি মোটেও তা নয়। আমাদের শরীরের হাড়গুলোর সংযোগস্থলগুলো একগুচ্ছ সুতার মতো তন্তু বা লিগামেন্ট দ্বারা আবদ্ধ থাকে। এই লিগামেন্টগুলোর বন্ধনী আমাদের শরীরের দুই পাশের হাড় শক্ত করে ধরে রাখে। হাড়ের এই তন্তুগুলো কিছুটা স্থিতিস্থাপক। যখন কোনও কারণে হাত বা পায়ের জোড়ায় অস্বস্তি লাগে তখন আমরা ওই গোঁড়ায় চাপ বা মোচড় দিয়ে স্বস্তি লাভ করার চেষ্টা করি। এই চাপ বা মোচড়ের কারণে সংযোগ স্থলের হাড় দুই পাশে সামান্য সরে যায়। ফলে কিছু সময়ের জন্য সেখানে ফাকা জায়গার সৃষ্টি হয়।

এই ফাকা জায়গা সৃষ্টি হওয়ার ফলে আশেপাশের পেশী ও তন্তু কলায় সঞ্চিত তরল দ্রুত ওই শূন্যস্থানের দিকে ছুটে যায়। বিভিন্ন দিক থেকে দ্রুত ছুটে আসা এই তরল পদার্থগুলো একসাথে খালি স্থানে চলে এলে তাদের মিলিত হওয়ার একটা শব্দ হয়ে থাকে। যাকে বলা যেতে পারে ছোট একটা বিস্ফোরণ।

আর সেই শব্দটিই আমরা শুনতে পায় এবং এটিকে আমরা আঙ্গুল ফোটানোর শব্দ মনে করে থাকি। পরে দ্রুত ছুটে আসা তরল পদার্থ গুলো আবার ধীরে ধীরে চারপাশে মিশে যায় এবং দুই পাশের হাড় আবার তার বন্ধনীতে আবদ্ধ হয়ে যায়। হাড় গুলো তার বন্ধনীতে মিলিত হবার ক্ষেত্রে তরল পদার্থের চেয়ে একটু বেশী সময় নিয়ে থাকে। ফলে একবার আঙ্গুল ফোটানোর কিছু সময় পর পর্যন্ত পুনরায় আঙ্গুল ফোটানো যায় না।

আঙুল ফোটানো কি খারাপ ?

না! আঙুল টানাটানি কিংবা ফোটানোর সঙ্গে শরীরের হাতের ক্ষয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। আনগার নামের ক্যালিফোর্নিয়ার এক চিকিৎসক ৬০ বছর ধরে নিজের ওপর একটি পরীক্ষা চালিয়েছেন। প্রতিদিন নিয়ম করে বাঁ হাতের আঙুল ফুটিয়েছেন কিন্তু ডান হাত ধরেননি। এত দীর্ঘ পরীক্ষার ফল? দুই হাতের মাঝে কোনো পার্থক্যই খুঁজে পাননি ডক্টর আনগার। এত গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের জন্য ২০০৯ সালে ‘আইজি নোবেল’ বা ইগনোবেল পুরস্কারও জুটেছে তাঁর।

আরও পড়ুন ; Jio র ইন্টারনেট স্পিড ১ মিনিতে বাড়িয়ে নিন ৩ গুণ এইভাবে

তবে অতিরিক্ত আঙ্গুল ফোটালে অতিরিক্ত চাপের কারণে হাড়ের সমস্যা হতে পারে বা হাড়ের স্থান চ্যুতি ঘটতে পারে। বর্তমানে এক গবেষণায় দেখা গেছে মাঝে মাঝে আঙ্গুল ফোটালে অস্থির ক্ষতজনিত রোগ আর্থ্রায়টিস বা অস্টিওআর্থ্রাইটিস রোগ হওয়ার আশংকা কিছুটা কম থাকে। তবে ঘাড় ফোটানো পরিহার করা উচিত, কারণ ঘাড় ফোটাতে গিয়ে ঘাড়ে স্থায়ী ব্যথা, ঘাড়ের রগের বড় ধরনের সমস্যা বা এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে।