

দেশ জুড়ে তর্ক বিতর্ক, স্তব্ধ রাজধানী।পথে নেমেছে কৃষকরা।সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি বিলের বিরুদ্ধে পাঞ্জাব-হরিয়ানার অগণিত চাষিরা প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। নানান মহলের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এই আন্দোলনকে সমর্থন জানাচ্ছে। সোনিয়া গান্ধি (Sonia Gandhi) থেকে, DMK নেতা এম. কে স্তালিন (M.K. Stalin), NCP নেতা শরদ পাওয়ার (Sharad Pawar), মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) সকলে জানিয়েছেন তারা কৃষকদের পাশে আছেন।কিন্তু এতকিছুর পরেও বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, এই আন্দোলন যদি সফল হয় তাহলে কি সত্যিই উপকৃত হবেন কৃষকরা?
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষি আইনের বিরোধিতা চাষীদের বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবে হচ্ছেনা,হচ্ছে মূলত বিরোধীদের রাজনীতির জন্য। এই আন্দোলন যদি সফল হয় তবে চাষীরা যেমন পাবেন, তেমন হারাবেনও।একনজরে দেখে নেওয়া যাক সবটা।
কেন্দ্রের কৃষি আইন কী বলছে?
কেন্দ্রের কৃষি আইন অনুসারে,প্রথমত কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে সরকারের হস্তক্ষেপ কমে যাবে। অন্যান্য পণ্যের মতন কৃষি পণ্যের অবাধ ব্যবসা দেশজুড়ে করতে পারবেন কৃষকরা। দ্বিতীয়ত, কোনও কৃষক চাইলে চুক্তিভিত্তিক চাষ করতেই পারেন।যেকোনও কর্পোরেট হাউসের সাথে চুক্তি করে কৃষিপণ্যের ব্যবসা করতে পারবেন তারা। তৃতীয়ত, কৃষিপণ্য বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট এলাকার সীমাবদ্ধতা তুলে দেওয়া হলো। সম্পূর্ন দেশের মধ্যে যেকোনও স্থানে যেকোনও কাউকে কৃষিপণ্য বিক্রি করতে পারবেন কৃষকরা।
সরকারের মতামত
সরকারের দাবি এই নতুন আইনের ফলে কৃষক ও বাজারের মাঝে থাকা মধ্যপন্থী ব্যাক্তিদের সরানো সম্ভব হবে।এছাড়া এই আইনের ফলে কৃষক তার কৃষিপণ্যের দাম নিজেই স্থির করতে পারবেন।আগে কৃষকরা দেশের মধ্যে সব জায়গায় পণ্য বিক্রি করতে পারতো না, কিন্তু এখন নিজের ফসল রাজ্যের বাইরে সম্পূর্ন দেশে বিক্রি করতে পারবেন তারা।এছাড়া পনের বিক্রয়মূল্য চাষের আগে ঠিক হয়ে যাওয়ায় কোনও ঝামেলা হবেনা কৃষকদের।মনে করলে কোনও সংস্থার সাথে চুক্তি করে অনেক টাকার অর্ডারে চাষ করতে পারবেন কোনও কৃষক।
বিরোধীদের মতামত?
বিরোধীদের মতে এই আইনের সুযোগে বড় কোম্পানিগুলি কৃষি ব্যবসায় ঢুকে যেতে পারবে।সাধারণ চাষীরা বড় বড় কর্পোরেট হাউসের সাথে দরাদরি করে লাভজনক চুক্তি করতে পারবে না। কর্পোরেট হাউস চাষীদের ওপর জুলুম করে তাদের বোকা বনিয়ে কম দামে জিনিস বেচতে বাধ্য করবে। আর চুক্তির কথা! যেকোনও কোম্পানি চুক্তি করতে হলে স্বাভাবিক ভাবে বড় কৃষকদের সাথেই চুক্তি করবে, ফলে মার খাবে ছোট কৃষকরা।তারা এও মনে করছেন যে এই আইনের ফলে আগে কৃষকরা কৃষিপণ্য চাষের জন্য সরকারের কাছ থেকে যে ন্যূনতম অর্থ সাহায্য পেতেন,আইন বাস্তবায়িত হলে তা বন্ধ হয়ে যাবে।
চাষীদের মতামত?
মান্ডির বাইরে কোনও সাধারণ নিয়ম বা নিয়ন্ত্রন থাকেনা। কোনও গ্রিভান্স রিড্রেসাল সিস্টেম না থাকায় তারা মনে করছেন যেন মাথার ওপর ছাদ কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। চাষীদের ভয়,কৃষিপণ্যের বেসরকারিকরণ করতে চাইছে সরকার তাই কর্পোরেটের সাথে চুক্তির কথা বলা হচ্ছে। এই কারণে জোরালো ভাবে আন্দোলনে নেমেছেন তারা।
ভারতে কৃষি আন্দোলনের ইতিহাস
১৯৯১ সালের অর্থনৈতিক উদারিকরণ, ১৯৯৪ সালের ইলেকট্রনিক ট্রেডিং, FDI সহ একাধিক বিষয় নিয়ে কৃষক সম্প্রদায় উত্তপ্ত হয়েছিল।APMC এবং এসেন্সিয়াল কমোডিটিজ অ্যাক্ট নিয়েও সরকারের বিরোধিতা হয়।২০১৯ সালের কংগ্রেসের ইস্তেহারের সাত নম্বর অধ্যায়ের ২১ নম্বর পয়েন্টে যখন এসেন্সিয়াল কমোডিটিজ অ্যাক্ট সরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
আরও পড়ুন : কৃষি বিল কি এবং কৃষকরা এই বিলের বিরোধিতা করছে কেন?
বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মহলে কৃষি বিদ্রোহের রাজনৈতিক দিক নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠছে। সরকার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বিরোধীদের মিথ্যা কথায় বিশ্বাস করে আন্দোলনে নেমেছে কৃষক সম্প্রদায়।আবার অনেকের মতে এই আন্দোলনে মধ্যস্বত্বভোগী রাও নিজেদের স্বার্থের জন্য যোগ দিচ্ছে। আবার বিরোধীদের কথায় কৃষকদের প্রতি চরম অসহিষ্ণুতা দেখাচ্ছে সরকার যা সরকারের দায়িত্বের সম্পূর্ন বিপরীত। শেষপর্যন্ত এই পরিস্থিতির কি ফল হয় সেটা দেখা এবার কেবল সময়ের অপেক্ষা।