বিয়েতে এমন নানা প্রথাই আছে যা মানুষ বিনা বাক্যে মেনে নেন। হাজারো শিক্ষার পরেও অযৌক্তিক প্রথাগুলোকে প্রশ্ন করেন না কেউই। দিন কয়েক আগেই, কনকাঞ্জলি দিতে অস্বীকার করে ‘অন্য বিয়ে’র নজির স্থাপন করেছিলেন প্রিয়া মান্না। মায়ের দিকে এক মুঠো চাল ছুঁড়ে ‘তোমার সব ঋণ শোধ করলাম’ বলার মধ্যে কোনও যুক্তিই খুঁজে পাননি তিনি।
ফের বিয়ের নানা প্রথাকে যুক্তি দিয়ে ভেবে তা মানতে অস্বীকার করার নজির উঠে এল। এই বিয়েতেই মেয়ের বাবা বিয়ের অন্যতম বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রথা কন্যা দান বা কন্যা সম্প্রদানের প্রথাটিকেই চ্যালেঞ্জ করেছেন। অযৌক্তিক এই রীতি পালনে নারাজ তিনি। তাঁর কথায়, “মেয়ে সম্পত্তি নয় যে দান করব!” কন্যাদান না করেই সম্পন্ন হল সেই বিয়ে ৷
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে৷ অস্মিতা ঘোষ নামে এক মহিলা একটি ট্যুইট করে লিখেছেন, ‘‘আমি মহিলা পুরোহিতদের সঙ্গে এক বিবাহ অনুষ্ঠান উপস্থিত হয়েছিলাম৷ যেখানে তাঁরা কনেকে মায়ের নাম দিয়ে প্রথমে পরিচয় করায়৷ এরপর মেয়ের পরিচয় হিসেবে আসে বাবার নাম৷ আর সেখানে কিছু কথা বলতে গিয়ে কনের বাবা জানান যে, তিনি কন্যাদান করবেন না৷ কেননা তাঁর মেয়ে কোনও সম্পতি নয়, যাকে অন্য হাতে তুলে দিতে হবে৷’’
I'm at a wedding with female pandits. They introduce the bride as the daughter of <mother's name> and <father's name> (mom first!!!). The bride's dad gave a speech saying he wasn't doing kanyadaan because his daughter wasn't property to give away. ??? I'm so impressed. pic.twitter.com/JXqHdbap9D
— Asmita (@asmitaghosh18) February 4, 2019
ভাইরাল এই পোস্টটি স্বাভাবিকভাবেই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং বলা বাহুল্য বিয়ের নানা অদ্ভুত রীতিকে প্রশ্ন করার আরেকটি দরজাও খুলে দিয়েছে। অনেকেই এই বিয়েকে ‘প্রগতিশীল’ এবং ‘যুক্তিভিত্তিক’ বলে মনে করছেন।
পিতৃতান্ত্রিক সমাজের চিরায়ত ‘কন্যাদান প্রথা’ পালন ছাড়াই প্রথম হিন্দু নারী পুরোহিত হিসেবে এক তরুণীকে বিয়ে দিয়ে ব্যাপক আলোচনায় এসেছেন নন্দিনী ভৌমিক। নন্দিনীর বিয়ে পড়ানোর এ ঘটনা রীতিমতো ‘টক অব দ্য’ টাউনে পরিণত হয়েছে।
এই বিয়েতে নেই সাতপাকে ঘোরা! স্ত্রীকে ‘ভাত-কাপড়’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বা মেয়ের ‘চাল ছোড়া’র মতো প্রথা! আছে রবি ঠাকুরের গান! অভিনব কায়দায় শুভ পরিণয় সম্পন্ন করিয়ে আসছেন মহিলা পুরোহিত নন্দিনী ভৌমিক এবং তাঁর সহকারীরা৷
পেশায় জাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত শিক্ষক নন্দিনী ভৌমিক গত ১০ বছরে ৪০টি বিয়ে দিয়েছেন। শিক্ষকতা এবং ১০টিরও বেশি নাটকের দলের সঙ্গে যুক্ত নন্দিনী ভৌমিক শত ব্যস্ততার মাঝেও এই কাজ করেন। বিশেষ করে ভিন্ন ধর্মের, ভিন্ন জাতের এবং ভিন্ন নৃগোষ্ঠীর নারী-পুরুষদের মাঝে বিয়ে দেওয়ার কাজ করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন ঃ রবীন্দ্র সঙ্গীতে কন্যাদানহী বিয়ে দেন মহিলা পুরোহিত নন্দিনী
আর এই পুরোহিতের কাজ করে তিনি যে সামান্য টাকা পান তা উড়িষ্যার পুরির বালিঘাই এর একটি এতিমখানায় দান করে দেন। নন্দিনীর বলেন, হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ ঋগবেদে এভাবে কন্যাদান ছাড়াই নারী পুরোহিতদের বিয়ে দেওয়ার গল্প রয়েছে। নন্দিনীও নিজেকে সেই ঘরানার বলে দাবি করেন। এবং সমাজে পরিবর্তনের ঘোষণা দেন।