
বাংলাতে তার অভিনীত শেষ ছবির বয়স হয়ে গিয়েছে প্রায় ২০ বছর! দীর্ঘ দুই দশক তিনি টলিউড থেকে মুখ ফিরিয়েছিলেন। শুধু টলিউড (Tollywood) নয়, শহর কলকাতার প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মে শহর ছেড়ে রাজ্য ছেড়ে উত্তরাখণ্ডের পাহাড় ঘেরা প্রকৃতির কোলেই শান্তি খুঁজে নিয়েছিলেন ভিক্টর ব্যানার্জি (Victor Banerjee)। তবে তিনি ফিরেছেন। পরিচালক তথাগত ভট্টাচার্যের নতুন ছবি ‘আকরিক’ এর হাত ধরে ভিক্টর ব্যানার্জি আবারও ফিরে এসেছেন বাংলা ছবিতে। এই ছবিতে তার সঙ্গে অভিনয় করেছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, অনুরাধা রায়।
ছবিতে অভিনয় করার সুবাদে দীর্ঘ দিন বাদে কলকাতায় ফিরেছেন ভিক্টর ব্যানার্জি। টলিউডের সঙ্গে দূরত্ব ঘুঁচেছে। দূরত্ব ঘুঁচলো কলকাতার সঙ্গেও। এবারের কলকাতা সফরে আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে খোলামেলা আড্ডা জুড়লেন ভিক্টর ব্যানার্জি। আড্ডার মাঝে উঠে গেল বহু পুরনো কথা। স্মৃতি হাতড়ে নস্টালজিক ভিক্টর ব্যানার্জি। সাংবাদিককে বললেন, ‘‘আপনি ‘প্রতিদান’ দেখেছেন? বাংলার প্রথম অ্যাকশন হিরো বলতে পারেন আমাকে। এক দিকে যেমন ‘শতরঞ্জ…’, ‘ঘরে বাইরে’ করেছি, তেমনই অন্য দিকে ‘প্রতিদান’, ‘একান্ত আপন’। আবার ‘বো ব্যারাকস ফরএভার’-এ পিটার দ্য চিটারও হয়েছি। রেঞ্জটা এক দিক থেকে দেখতে গেলে অদ্ভুত!’’
এতদিন বাদে কলকাতায় ফিরেছেন। টলিউডের প্রসঙ্গে তার ধারণা কী? অভিনেতার কথায়, ‘‘ঠিক জানি না। এত দিন পরে একটা বাংলা ছবি করতে এসে ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা সম্পর্কে বলা কঠিন। আর আমি বরাবরই ইন্ডাস্ট্রি থেকে দূরে ছিলাম। বাংলা ছবি করতাম বটে, কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যোগাযোগ বলতে যা বোঝায়, সেটা ছিল না। শুনেছি টেকনিশিয়ানস স্টুডিয়ো নাকি খুব উন্নত মানের হয়ে গিয়েছে এখন, বাকি সব স্টুডিয়োর তুলনায়। এক সময়ে ইন্ডাস্ট্রির রাজনীতি প্রত্যক্ষ করেছি খুব কাছ থেকে। এখন আর এ সব নিয়ে ভাবি না।’’
টলিউডের সঙ্গে একসময় ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন ভিক্টর ব্যানার্জি। আজ জীবনের এই পর্যায়ে এসে সেই টলিউড এবং কলকাতা প্রসঙ্গে একরাশ অভিমান চেপে রেখেছেন বুকে। বললেন, ‘‘বাংলাকে মিস করি কি না জিজ্ঞেস করছিলেন না? এখানে প্রতিভার কোনও অভাব নেই। কিন্তু টাকাপয়সার জন্য আটকে যায় অনেক কিছু। এখন কলকাতায় আসা মানে যেন ‘নেই’-এর দেশে আসা! অমুকের জন্য বাজেট নেই, তমুকের জন্য টাকা দেওয়া যাবে না… ইত্যাদি। আর নিজেদের শহরটা পরিষ্কার করে রাখতে পারি না আমরা। অসংখ্য হাসপাতাল, আর সেগুলোর কী দশা… এই কষ্ট সহ্য করা যায় না। আমি জন্মেছি এখানে। তার পরে অসমে মানুষ হয়েছি। তার পরে কিছু দিন থেকে পালিয়ে গেলাম পাকাপাকি ভাবে’’।
তবে কলকাতার সঙ্গে দূরত্ব বাড়লেও শহর কলকাতা আজও তার মনে বেঁচে রয়েছে। কলকাতা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বললেন, ‘‘কলকাতার অনেক কিছুই মিস করি। তবে যেটা করি না, সেটা হল এখানকার ভায়োলেন্স। এখানে একটা মব মেন্টালিটি আছে, সেটা খুব পীড়াদায়ক। চাইলেই রাস্তায় নেমে সব কিছু পোড়ানো যায়, এই ব্যাপারটা অসহ্য। বিয়িং অ্যাট দ্য মার্সি অব দ্য মব ইজ় নট আ গুড থিং। সংস্কৃতির দিক থেকে এ শহরকে দেশের মধ্যে সেরা বলা হত, সেটা গর্বের। তবে এখন সেটাও তো… কী আর বলব!’’ কলকাতার কোলাহল থেকে দূরে আজ পাহাড়ে শান্তির বাসা খুঁজে পেয়েছেন ভিক্টর ব্যানার্জি। কিন্তু যতই মুখ ফিরিয়ে থাকুন, অভিনয় করার ইচ্ছেটা আজও ঘুমিয়ে আছে তার মনে। বর্ষীয়ান অভিনেতার আক্ষেপ, ‘‘অভিনেতা হিসেবে অনেক কিছুই তো করা বাকি। তবে এখন আর কেউ সুযোগ দেবে না।’’