মা কালীর ১১ রূপের রহস্য কী? মায়ের কোন রূপের কী মাহাত্ম্য?

কী কী রূপে পূজা পান মা কালী? তার কোন রূপের কী মাহাত্ম্য?

Maa Kali : অন্য সব দেবদেবীর পুজোয় তেমন নিয়ম বিধি না থাকলেও মা কালী (Maa Kali) -র পূজায় কিন্তু রয়েছে কড়া নিয়ম বিধি যা পালন না করলে মা আপনার উপর হতে পারে রুষ্ট। অমাবস্যার পুণ্য তিথিতে সমস্ত নিয়ম বিধি মেনে সারারাত জেগে আরাধনা করতে হয় মা কালীর। হোম যজ্ঞ এবং বলির মাধ্যমে (যদিও সব ক্ষেত্রে নয়) মা কালীর আরাধনা করা হয়। তবে শুধু মা কালীর একটি রূপকে আমরা পূজা করি না বরং পুজো করি হরেক রকম রূপে। আজ তেমনি কয়েকটি রূপ নিয়ে কথা বলবো আমরা।

দক্ষিণা কালী (Dakshina Kali) : পশ্চিমবঙ্গে সব থেকে বেশি যে কালীকে পুজো করা হয় সেটি হল দক্ষিণাকালী। দক্ষিণা কালীকে শ্যামা কালী রূপেও পূজা করা হয়। দক্ষিণা কালী নীল বর্ণের হয়, ত্রিনয়নী মুক্তকেশী, চারটি হাত এবং গলায় মুন্ডমালা। এক হাতে নরমুন্ড এবং একহাতে খড়্গ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন দক্ষিণা কালী।

Smashan Kali

   

শ্মশান কালী (Smashan Kali) : দক্ষিণা কালীকে বাড়িতে পুজো করা গেলেও শ্মশান কালীকে কিন্তু আপনি কখনোই বাড়িতে পূজা করতে পারবেন না। মূলত ডাকাতরা শ্মশান কালীর পুজো করে থাকেন। ‘দেবী চৌধুরানী’ উপন্যাসে এই শ্মশানকালীর উল্লেখ পেয়েছি আমরা। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে শ্মশান কালীর পূজা হয় ধুমধাম করে।

সিদ্ধকালী (Siddhakali) : সিদ্ধকালীকে ভুবনেশ্বরী নামেও ডাকা হয়। গৃহস্থের বাড়িতে সাধারণত মায়ের এই রূপের পূজা করা হয় না। সাধকরা, সাধারণত সিদ্ধ কালীর পুজো করে থাকেন। সিদ্ধ কালীর সারা শরীর থাকে গয়নায় আবৃত। দেবীর ডান পা শিবের বুকে থাকে এবং বাম পা থাকে শিবের দুই পায়ের মাঝখানে। এই দেবী অমৃত পানে সন্তুষ্ট থাকেন।

Falharini Kali

ফলহারিণী কালী (Falharini Kali) : কৌশিকী অমাবস্যায় তারাপীঠে মা কালীর পুজো হয় সম্পূর্ণ ফল দিয়ে। এই দিন মাকে কোন মালা নয় বরং ফল দিয়ে আবৃত করে রাখা হয়। গৃহস্থ্য বাড়িতে শান্তি বজায় রাখতে অনেকেই ফল দিয়ে কৌশিকী আমাবস্যার দিন মায়ের এই রূপকে আরাধনা করে থাকেন।

মহাকালী (Mahakali) : মহাকালের ঘরণী মহাকালীর থাকে দশটি হাত এবং দশটি পা। মহাকালীর প্রতিমায় শিবের কোন অস্তিত্ব থাকে না। মহাকালীর দশ হাতেই থাকে অস্ত্র। মূলত ভূত চতুর্দশীর দুপুরে মা কালীর এই রূপের সাধনা করা হয়। তবে গৃহস্থের বাড়িতে পূজা করা হয় না মহাকালীর।

আরও পড়ুন : মা কালী নগ্ন কেন? কেন নগ্নরূপে পূজিত হন মা কালী?

Kamya Kali

কাম্যা কালী (Kamya Kali) : মায়ের কাছে যখন কোন কামনা বাসনা নিয়ে পূজা করা হয় তখন মায়ের এই রূপের পুজো করেন সকলে। দক্ষিণা কালীর মতোই সমস্ত বিধি নিয়ম পালন করে মায়ের এই রূপের পূজা করা হয়। অষ্টমী চতুর্থী অমাবস্যা এবং পূর্ণিমা তিথিতে কাম্যা কালীর পূজা করা হয়।

গুহ্যকালী (Guhyakali) : মায়ের এই রূপটি সজ্জিত হয় ৫০ টি নরমুন্ডের হার দিয়ে। মায়ের কানে থাকে শবদেহের আকারের অলংকার। মায়ের এই রূপকে ভয়ংকরই হিসাবে পূজা করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রামে মায়ের এই রূপের পুজো দেখতে পাবেন আপনি।

আরও পড়ুন : জিভ বের করে মা কালী আমদেরকে কী শিক্ষা দিয়েছেন

Bhadrakali

ভদ্রকালী (Bhadrakali) : যে কোনো বারোয়ারি মন্দিরে মায়ের এই রূপের পুজো করা হয়। মায়ের এইরূপে ভদ্র শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে কল্যাণ অর্থে এবং কালি শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে জীবনের শেষ সময়কে বোঝাতে। মায়ের এই রূপটিও কিন্তু বেশ ভয়ংকর।

চামুন্ডা কালী (Chamunda Kali) : মা যে সমস্ত আদি শক্তির আধার তা মায়ের এই রূপ দেখেই বুঝতে পারবেন আপনি। চন্ড এবং মুন্ড এই দুই অসুরকে হত্যা করে মা চামুন্ডা রূপে পুজিত হন সর্বত্র। মায়ের বিভিন্ন রূপের মধ্যে আমরা পূজা করি চন্ডী, দেবী দুর্গা, কালী সহ একাধিক রূপকে।

আরও পড়ুন : বাংলায় কালী পুজো কীভাবে শুরু হল, কেন কালীপুজো করা উচিত

Shree Kali

শ্রী কালী (Shree Kali) : অনেকে মনে করেন শ্রী কালী দেবী দারুক নামে কোন পশুরকে বধ করেছিলেন। তবে পুরানো অনুযায়ী কালীর এই রূপ মহাদেবের কন্ঠের বিষে কৃষ্ণবর্ণা হন এবং পরবর্তী সময়ে মায়ের শরীরের সেই সমস্ত বিষ মহাদেব শিশুরূপে স্তন পান করে নিজের শরীরে প্রবেশ করিয়ে নেন।

আরও পড়ুন : রটন্তী কালীর আরাধনায় পূর্ণ হবে সব মনোবাঞ্ছা, মায়ের পুজোয় ফিরবে ভাগ্য

রক্ষাকালী (Rakshya Kali) : শাস্ত্র অনুযায়ী লোকালয়কে রক্ষার জন্য এই দেবীর পূজা করা হতো। দেবী দুর্গার মতই এই দেবীর বাহন সিংহ। রক্ষাকালী হল দক্ষিণাকালীর অন্য একটি রূপ।

আরও পড়ুন : ১লা নভেম্বর থেকেই বদলে যাবে ভাগ্য, কালীপুজোর আগে সুখবর পাবেন এই ৫ রাশি