ভালোবেসেছিলেন মহানায়ক উত্তম কুমারকে, তাইতো আজীবন কুমারী রয়ে গেলেন সাবিত্রী

সংসারের অভাবের জেরে প্রথম পা রাখা অভিনয় জগতে। আজ সেই সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় (Sabitri Chatterjee) বাংলা সিনেমার অন্যতম কিংবদন্তি অভিনেত্রী। তার মত সহজাত অভিনেত্রী খুব কমই পেয়েছে বাংলা ইন্ডাস্ট্রি। বাড়ির ১০ ভাইবোনের মধ্যে সবথেকে ছোট সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় ১৯৩৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের কুমিল্লার কমলাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দেশভাগের পরে কলকাতায় কালীগঞ্জে এক দিদির বাড়িতে আসেন তিনি। সেখান থেকেই শুরু তার যাত্রা।

রুপোলি পর্দায় আসা ১৯৫১ সালে ‘সহযাত্রী’ ছবিতে। আর সেই ছবিতেই তার আলাপ হয় উত্তম কুমারের (Uttam Kumar) সাথে। অবশ্য তখন তিনি পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এরপর ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Bhanu Banerjee) বোনের চরিত্রে ‘নতুন ইহুদি’ নাটকে অভিনয় করেন তিনি।

তার মেজদি ছিলেন সম্পর্কে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামি। সেই নাটক কে দর্শকের সামনে উপস্থিত হয়েছিলেন উত্তম কুমার।দৌড়ে তাকে দেখতে গিয়ে পা কেটে রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন সাবিত্রী দেবী।তবে উত্তমকুমারকে এক ঝলক দেখার পরেই যেন সব ব্যাথা দূর হয়ে গিয়েছিল তার।

এরপর ‘পাশের বাড়ি’, ‘রাতভোর’, ‘উপহার’, ‘অভয়ের বিয়ে’, ‘নূপুর’, ‘গলি থেকে রাজপথ’, ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’, ‘কুহক’, ‘বধূ’, ‘ভ্রান্তি বিলাস’, ‘উত্তরায়ণ’ইত্যাদি একাধিক চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করে প্রথম সারির নায়িকা হয়ে ওঠেন টলি ইন্ডাস্ট্রির সকলের প্রিয় ‘সাবু’ বা ‘সাবুদি’। ইন্ডাস্ট্রিতে ততদিনে আলাদা একটা জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়।

উত্তম কুমারের সাথে তার প্রেম নিয়ে জল্পনা চলছিল তখনও। তবে নিজেও সেটা কি অকপট হবে স্বীকার করেছেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন,তাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে মূল ঘটনার থেকে রটনার পরিমাণ ছিল অনেক বেশি। একসময় শোনা গিয়েছিল,মহানায়ক তাকে বিয়ে করে বালিগঞ্জে বাড়ি ভাড়া করে থাকছেন, তবে এর বিন্দুমাত্র সত্যি নয়।

তবে উত্তম কুমারের জন্যই হয়তো আজীবনকাল কুমারী রয়ে গেলেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। তাদের দুজনকে একসাথে বহু ছবিতে দেখেছে দর্শক, সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘অনুপমা’, ‘মৌচাক’, ‘রাইকমল’, ‘নবজন্ম’, ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’, ‘রাজা সাজা’, ‘দুই ভাই’, ‘লাখ টাকা’, ‘কল্যাণী’, ভ্রান্তিবিলাস’, ‘মোমের আলো’, ‘নিশিপদ্ম’, ‘রাতভোর’ এবং ‘ধন্যি মেয়ে’ ইত্যাদি। তাদের অনস্ক্রিন কেমিস্ট্রি মন ছুয়ে যেতে দর্শকদের, বুঝতে দেরি হতো না যে এই কেমিস্ট্রি অন স্ক্রীনের বাইরে ও অনেকটাই বিস্তৃত।

সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় নিজেই জানান গৌরিদেবী সাথে উত্তম কুমারের সংসার ভাঙ্গার ঘটনা তাকে কষ্ট দিয়েছিল। কাউকে কাঁদিয়ে জীবনে সুখী হওয়া যায় না, এই ধারণাতেই বিশ্বাসী ছিলেন তিনি।তবে শেষ জীবনে মহানায়কের সাথে ঘটে যাওয়া টানাপোড়েন তাকেও সমানভাবে ক্ষতবিক্ষত করেছে। তিনি নিজেই জানান, তার প্রতি ভীষণ ভাবে পসেসিভ ছিলেন উত্তম কুমার।ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্ক রূপ নিয়েছিল ভালোবাসার।

আটের দশকেই চলে যেতে হয় মহানায়ককে। তারপর থেকেই ছবিতে খুব কম দেখা যেতে থাকে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়কেও। বেশকিছু যুগ পার করে এসে সাম্প্রতিককালের নতুন প্রজন্মের পরিচালকদের সাথে কিছু ভিন্ন ধারার ছবিতে দর্শক তাকে দেখতে পান। এগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘প্রাক্তন’, ‘পদক্ষেপ’, ‘হেমলক সোসাইটি’ ইত্যাদি।

‘পদ্মশ্রী’,‘বঙ্গবিভূষণ’সহ নারায়ণ সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন তিনি।তবে বুকের ভেতরে একটা খাখা অনুভূতি এখনও আছে তার।তবে সেই কষ্ট চেপে কৌতুক চরিত্রে অভিনয় করতে এখনো ভালোবাসেন অভিনেত্রী।