বিজয় দশমীর সঠিক নাম অশোক বিজয় দশমী। মৌর্য সম্রাট অশোক কলিঙ্গ যুদ্ধে জয় করে যে বিজয় উৎসব দশ দিন ধরে পালন করেছিলেন, সেটাকেই অশোক বিজয়া দশমী বলা হয়। আর এই দিন সম্রাট বৌদ্ধ ধম্ম দিক্ষা নিয়েছিলেন। তাই এই দিন বৌদ্ধ ধম্মের পবিত্র উৎসব হিসাবে পালন করা হয়।
সম্রাট অশোক কলিঙ্গ যুদ্ধের পর হিংসার রাস্তা ত্যাগ করে বুদ্ধ ধম্ম গ্রহণ করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তিনি বৌদ্ধ ধম্ম গ্রহণ করার পর অনেক বৌদ্ধ স্থানে ভ্রমণ করেন। বুদ্ধের জীবন চর্চা করা ও সেটা নিজের জীবনে পালন করার কাজ করেন। সম্রাট অশোকের এই ধার্মিক পরিবর্তনে খুশি হয়ে দেশের জনগণ ঐ সব স্মারক বা স্তম্ভ সাজিয়ে দ্বীপ জ্বালিয়ে দ্বীপ উৎসব পালন করেন। এই আয়োজন খুব খুশি ও আনন্দের সঙ্গে দশ দিন পর্যন্ত চলে। আর দশম দিনে সম্রাট অশোক রাজ পরিবারের সঙ্গে ভন্তে মোজ্ঞিলিপুত্ত নিষ্প এর কাছে ধম্ম দিক্ষা গ্রহণ করেন।
কিন্তু ব্রাহ্মণ্যবাদীরা এক কাল্পনিক রাম আর রাবণের যুদ্ধ বিজয়ের কাহিনি প্রচার করে সম্রাট অশোকের এই মহত্ত্বপূর্ণ উৎসবকে কব্জা করে নিয়েছে। মৌর্য বংশের শেষ নাবালক সম্রাট বৃহদ্রথ মৌর্য এর সেনাপতি ছিল-আর্য ব্রাহ্মণ, পুষ্যমিত্র শুঙ্গ । ১৮৫ খৃষ্ট পুর্বাব্দে প্রকাশ্য রাজ সভায় পুষ্যমিত্র শুঙ্গ রাজা বৃহদ্রথ কে হত্যা করে শুঙ্গ বংশের স্থাপনা করে। যেদিন সম্রাট বৃহদ্রথ কে হত্যা করে পুষ্যমিত্র শুঙ্গ, তখন এই বিজয়া দশমী উৎসব চলছিল। যেটা সম্রাট অশোকের সময় থেকে চালু হয়েছিল। অশোক বিজয় দশমী হিসাবে। তো পুষ্যমিত্র শুঙ্গ বৃহদ্রথ কে হত্যা করে উৎসব পালন করে, আর নাম দেয় বিজয় দশমী। অশোক বিজয় দশমী এর পরিবর্তে শুরু হয় শুধু বিজয় দশমী। এই উৎসবে পুষ্যমিত্র শুঙ্গ মৌর্য বংশের দশ জন সম্রাটের আলাদা আলাদা পুতুল বানিয়ে তাঁদের দশ মাথা এক সঙ্গে দহন করে। আর তখন থেকে নাম দেয় দশ মাথা রাবণ দহন।
আরও পড়ুন : জানেন কী বাংলায় আধুনিক দুর্গাপূজা প্রচলনের পেছনে ইংরেজদের অবদান ছিল?
আরও পড়ুন : মা দুর্গার প্রতিমা বানাতে বেশ্যালয়ের মাটি লাগে কেন?
আসলে দশ মাথা রাবণের প্রতীক হচ্ছে দশ জন মৌর্য সম্রাট এর দহন বা মৌর্য বংশের বিনাশ। বাবা সাহেব আম্বেদকর এই অশোক বিজয় দশমীকে সম্মান জানানোর জন্য 1956 সালের বিজয় দশমীর দিন ধম্ম দিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। ঐ বছর অর্থাৎ 1956 সালের 14ই অক্টোবর সম্রাট অশোকের বিজয় দশমীর 2500 বছর পূর্ণ হয়েছিল। তাই ঐ দিনটা কে ঐতিহাসিক ভাবে পালন করার জন্য বাবা সাহেব ধম্ম দিক্ষা গ্রহণ করেন। আর নাম দেন “ধম্ম চক্র প্রবর্তন দিন” হিসাবে। “ধম্ম” অর্থাৎ ভাইচারা যার উদ্দেশ্য সমতা, স্বতন্ত্রতা, বন্ধুতা ও ন্যায়। “ধম্ম চক্র প্রবর্তন” অর্থাৎ এই ধম্মের চাকাকে অর্থাৎ সমতা, স্বতন্ত্রতা, বন্ধুতা ও ন্যায় এর চাকাকে গতি প্রদান করা।