গুজরাটের উপকূলে পোর বন্দরে বেড়ে ওঠা ১৪ বছরের কিশোরীর বিয়ে হয়েছিল বছর খানেক ছোট মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর (Mahatma Gandhi) সাথে। দাম্পত্য শুরু হয়েছে অনেক পরে। যখন বিয়ে হয়েছিল তখন তিনি ভাবতেও পারেননি যে তিনিই হয়ে উঠবেন পরাধীন ভারতের অঘোষিত ফার্স্ট লেডি। মহাত্মা গান্ধীর স্ত্রী কস্তুরবা গান্ধী (Kasturba Gandhi)র নিজের কোনওরকম অক্ষর জ্ঞান না থাকলেও পরবর্তীকালে তাকে নিয়েই বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ভাষায় লেখা হয়েছে নানান বই।
মা বাবার পছন্দে বিয়ে হয় মোহন দাসের সাথে। পোরবন্দরের দেওয়ান করমচাঁদের ঘরের বউ হয়ে এলেন জামা কাপড়ের ব্যবসায় বকুল দাস কাপাডিয়ার মেয়ে। রীতি মেনে বিয়ের পর বেশ কয়েকটা বছর মা বাবার বাড়িতেই কাটান তিনি। প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেলে স্বামীর ঘরে পাঠানো হয় তাকে। এই সময়ের গান্ধীর আত্মজীবনীতে কিশোরী বউয়ের সাথে বিরহের প্রসঙ্গে প্রেম, অপেক্ষা, এমনকি ‘নাইটফল’এর প্রসঙ্গও জায়গা পেয়েছে।
ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ তাঁর গান্ধী সম্পর্কিত বইতে মহাত্মা গান্ধীর দাম্পত্যজীবন, নারী-পুরুষের কামনাবাসনা সম্পর্কিত মনোভাব সম্পর্কে অনেক কিছু তুলে ধরেছেন। জানা যায়,গান্ধী-আশ্রমে বসে মার্গারেট স্যাংগার নামের এক আমেরিকান এক্টিভিষ্টকে গান্ধী বলেছিলেন, “পুরুষদের উচিৎ তার ‘জান্তব কামনা’কে সংযত করা, আর নারীদের উচিৎ শুধু আনন্দের জন্য স্বামী মিলিত হতে চাইলে সেইসব স্বামীদের বাধা দেয়া।”মনে করা হয় নারীদের নিজস্ব কামনাকে বিশেষ পাত্তা দেননি তিনি।
স্বাধীনতা সংগ্রামে সকলের পাশে দাঁড়াতে দেখা গেছে যে গান্ধীজিকে, যিনি সর্বদা অহিংসার কথা বলেছেন, জানা যায় স্বামী হিসেবে তিনিই ছিলেন বেশ আধিপত্যকামী। তিনি নিজেই একবার স্বীকার করেছিলেন, কর্তব্যনিষ্ঠ অনুগামী স্ত্রী পছন্দ করতেন তিনি। জানা যায়, কস্তুরবার ধাত ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। জানা যায়, বিয়ের প্রথম পর্যায় মতের অমিল এবং তর্ক বিতর্কের মধ্যে কেটেছে তাদের। এমনকি স্ত্রীকে নিয়ন্ত্রণ করার সবরকম চেষ্টা করেছিলেন মোহনদাস, বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন তার চলাফেরাতেও।
গান্ধীজীর আত্মজীবনী এবং কস্তুরবা গান্ধী স্মৃতি কথা থেকে জানা যায় তাদের দাম্পত্য জীবনে যৌন সুখ থাকলেও ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকত।গান্ধীজীর প্রভুত্ব ফলানোর আপ্রাণ চেষ্টা এবং কস্তুরবার বৈপ্লবিক তেজ এবং আত্মসম্মান, দুইয়ের মধ্যে সংঘর্ষ হত প্রায়ই।
দুই ছেলে হরিলাল এবং মহিলার জন্মের পর সদ্যপ্রসূতী যুবতী বউকে একা ফেলে বিদেশে চলে যান মোহনদাস। তখনও প্রথম সন্তানের মৃত্যু শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি কস্তুরবা। পড়ালেখার না জানায় তার পক্ষে স্বামীকে চিঠি লেখা সম্ভব হতো না। বাড়ির অন্যান্যদের কাছে আসা মোহন দাসের চিঠি থেকেই যেটুকু সংযোগ সম্ভব সেটুকুই হত।
১৮৯৬ সালে দুই ছেলেকে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি দেন কস্তুরবা। এখানেই তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। শ্বেতাঙ্গ এবং কৃষ্ণাঙ্গদের বিরোধের জেরে সুদূর বিদেশে কারাবাস কাটাতে হয় তাকে।কিন্তু এই জেলের দিনগুলোই তাকে আর পাঁচটা ভারতীয় নারীর থেকে আলাদা করে চিনিয়ে দেয়।
জানা যায় স্ত্রীর সাথে কোন আলোচনা না করেই ব্রহ্মচর্যের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন মোহনদাস। এর ফলে ভয়ানক রেগে গিয়েছিলেন কস্তুরবা তাদের দুজনের দাম্পত্যে গভীর প্রভাব ফেলেছিল গান্ধীজীর এই সিদ্ধান্ত।