বাংলার ৭ জেলার অবস্থা গুরুতর, কেন্দ্রের কড়া পদক্ষেপ, আসছে প্রতিনিধি দল

কোরোনা ভাইরাস মোকাবিলায় দেশ জুড়ে চলছে লক ডাউন। এমন অবস্থাতেও দেশজুড়ে অনেক মানুষের, বিশেষত বাঙালির হুশ ফেরেনি। সন্ধ্যা হলেই গলির মোড়ে আড্ডা থেকে বাজারের ব্যাগ নিয়ে রোজ নিয়ম মাফিক বেরিয়ে পড়া কিংবা পুলিশকে লুকিয়ে চুপিসারে চায়ের দোকান খুলে দাওয়া, সবই চলছে।

পশ্চিমবঙ্গে বেশ কিছু জেলায় ঠিক ভাবে লক ডাউন মানা হচ্ছেনা এই বিষয়টি আগেই কেন্দ্রের নজর কেরেছে। এইজন্যই রাজ্যকে ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কিন্তু তার পরেও ঠিকঠাক ফলাফল পাওয়া যাচ্ছেনা। রাজ্যের ভূমিকায় সন্তুষ্ট নয় দিল্লি।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্রের টুইটার হ্যান্ডল থেকে দু’টি টুইটে লেখা হয়েছে, ‘‘লকডাউন বিধি ভাঙার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর থেকে গুরুতর স্বাস্থ্য বিপত্তি ঘটতে পারে এবং কোভিড ১৯ ছড়ানোর ঝুঁকিও রয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর হিংসার ঘটনা ঘটছে, সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না, শহর এলাকায় যানবাহনও চলাচল করছে।’’ ‘‘বিশেষ করে পরিস্থিতি গুরুতর ইনদওর (মধ্যপ্রদেশ), মুম্বই ও পুণে (মহারাষ্ট্র), জয়পুর (রাজস্থান) এবং কলকাতা, হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা, দার্জিলিং, কালিম্পং ও জলপাইগুড়িতে (পশ্চিমবঙ্গ)।’’

এবার তাই বিশেষ ব্যবস্থা নিতে চলেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ৩৫(১), ৩৫(২), ৩৫(২)(এ), ৩৫(২)(ই) এবং ৩৫(২)(আই) ধারা কে এবার কার্যকর করা হবে কেন্দ্রের তরফ থেকে। এই ধারা অনুযায়ী কেন্দ্রের অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে রাজ্যে পাঠানো হবে আন্তঃমন্ত্রক প্রতিনিধি দল।

ইতিমধ্যেই কেন্দ্র থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।পশ্চিমবাংলার মুখ্য সচিবকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছে যে কেন্দ্রের তরফ থেকে গঠন করা দুটি বিশেষ প্রতিনিধি দল কেন্দ্রের চোখে গুরুতর এই সাত জেলাকেই ঘুরে সম্পূর্ণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখবে। প্রতিনিধি দল আগামী তিন দিনের মধ্যে রাজ্যে এসে পৌঁছবে।

• এই প্রতিনিধি দলের কাজ কি হবে?

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এর তরফ থেকে জানানো হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা আইন ৩৫(১), ৩৫(২), ৩৫(২)(এ), ৩৫(২)(ই) এবং ৩৫(২)(আই) মেনে বর্তমানে যে লক ডাউন দেশ জুড়ে কার্যকর হচ্ছে সেই ব্যবস্থার শর্ত এই জেলাগুলিতে নিয়মমাফিক পালন করা হচ্ছে নাকি সেই বিষয়টিই খতিয়ে দেখবে এই বিশেষ প্রতিনিধি দল।এর সাথেই কিছু বিশেষ জিনিস পর্যবেক্ষন করবেন তারা।

• রাজ্যের মানুষের কাছে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ঠিক ভাবে সরবরাহ হচ্ছে নাকি • সামাজিক দূরত্ব বা সোশ্যাল ডিসটেন্স এর নীতি ঠিকভাবে পালন করা হচ্ছে নাকি। • রাস্তাঘাটে লোকজনের সংখ্যা কেমন • রাজ্য জুড়ে সাস্থ্য কাঠামো কিরকম। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরিষেবা কেমন। • হাসপাতাল গুলিতে ব্যবস্থা কেমন, চিকিৎসা ক্ষেত্রে কি কি নীতি প্রয়োগ করা হচ্ছে। • যে অঞ্চলগুলো হটস্পট বলে ইতিমধ্যেই ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে কতজনের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন :- ২০ই এপ্রিলের পর পশ্চিমবঙ্গে ছাড় পাওয়া যাবে এইসব কাজে

এছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এর তরফ থেকে জানানো হয়েছে উল্লেখিত সাত জেলায় পর্যাপ্ত টেস্ট কিট রয়েছে কিনা এবং তার সাথেই ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পার্সোনাল প্রোটেকশন অর্থাৎ পিপিই, মাস্ক ইত্যাদি পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে কিনা তাও দেখবে এই বিশেষ প্রতিনিধি দল। বাংলার ত্রান শিবিরের আওতায় যে লক্ষ্য লক্ষ্য শ্রমিক আছেন তাদের অবস্থাও পর্যালোচনা করবে এই বিশেষ দল।

প্রতিনিধি দল কীভাবে কাজ করবে?

দুটি আন্তঃমন্ত্রক প্রতিনিধি দলের মধ্যে প্রথম দলটি যাবে কলকাতা, হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর ও উত্তর চব্বিশ পরগনায় ।এই প্রতিনিধি দল হবে পাঁচ জনের এবং দলের নেতৃত্বে থাকবেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব অপূর্ব চন্দ্র। তার সাথে থাকবেন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থার যুগ্ম সচিব রমেশ চন্দ্র গন্ট, স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ডেপুটি ডিরেক্টর জিলে সিংহ ভিকাল, পাবলিক হেল্থ স্পেশালিস্ট অধ্যাপক আর পতি এবং উপভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রকের ডিরেক্টর সীতারাম মিনা।

আরও পড়ুন :- পশ্চিমবঙ্গের এই ১০ জেলাকে ছুঁতে পারেনি করোনা

অপর যে দলটি সেটি যাবে উত্তর বঙ্গে অর্থাৎ জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ে। এই দলের নেতৃত্বে আছেন মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব বিনীত জোশী। তার সাথেই দলে থাকবেন পাবলিক হেল্থ স্পেশালিস্ট অধ্যাপক শিবানী দত্ত, বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থার উপদেষ্টা অজয় গাঙওয়ার, উপভোক্তা বিষয়ক দফতরের ডিরেক্টর ধর্মেশ মাকওয়ানা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ডেপুটি সেক্রেটারি এন বি মানি। এই দুই দল সম্পূর্ণ পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলোর কোরোনা ভাইরাস মোকাবিলার সমস্ত দিক খতিয়ে দেখবে।