
শিক্ষার মূল কথা হলো অন্ধকার থেকে আলোয় আসা। কিন্তু এই বছর কোভিড-১৯ এর কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা ,পরীক্ষা ব্যবস্থা সবটাই যেন অন্ধকারে, ধোঁয়াশায় তলিয়ে গেছে। এবার তাই দেশের শিক্ষা পরিকাঠামোতেই বড়োসড়ো বদল আনলেন কেন্দ্রীয় সরকার। নতুন এই শিক্ষানীতিতে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভাও সবুজ সংকেত দিয়ে দিয়েছেন।
বিজেপির নির্বাচনী প্রচারের সময় শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারের বিষয়টি বারবার উঠে এসেছিল। এরপর শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার করতে কমিটি তৈরি হয়। এই কমিটির প্রধান ছিলেন ইসরোর প্রাক্তন চেয়ারম্যান কে কস্তুরীরঙ্গন। গতবছর শিক্ষার সংস্কারের একটি প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়েছিল কমিটির তরফ থেকে মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে। সেই খসরা প্রস্তাব অবশেষে সবুজ সংকেত পেলো। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের নাম বদল করে রাখা হল শিক্ষা মন্ত্রক।
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় কি কি বদল হচ্ছে?
সামনের বছর থেকে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীতে আর নতুন করে বোর্ডের পরীক্ষা নেওয়া হবে না। এই পরীক্ষার পরিবর্তে আনা হচ্ছে ৫+৩+৩+৪ পদ্ধতিকে। নতুন এই শিক্ষা ব্যবস্থায় নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত একটি স্টেজ রাখা হবে। এই স্টেজটিকে সেকেন্ডারি স্টেজ বলা হচ্ছে। এর ফলে দশম দ্বাদশ শ্রেণীর বোর্ডের পরীক্ষা আর দিতে হবে না।
ক্লাস ওয়ান ও ক্লাস টু’কে রাখা হচ্ছে pre-primary স্টেজের মধ্যে। এটাকে বলা হচ্ছে ফাউন্ডেশন কোর্স। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত চারটি বছরের মধ্যে মোট ৪০টি পরীক্ষা দিতে হবে শিক্ষার্থীদের। এর মধ্যে কিছু পরীক্ষা নেবে স্কুল কিছু পরীক্ষা নেবে বোর্ড।
নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর এই যে কোর্স, এটি হবে মাল্টিডিসিপ্লিনারি কোর্স অর্থাৎ এই কোর্সে পড়ুয়ারা তাদের ইচ্ছেমত বিষয় নিতে পারবে। তবে কোর্স বেছে নেওয়ার সময় এটাও দেখা হবে যাতে এই কোর্স নিলে তাদের পরবর্তীকালে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা না হয়।
প্রাক-প্রাথমিক পরের যে তিন বছরের শিক্ষা অর্থাৎ প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত সেই সময় শিক্ষার্থীকে সাক্ষরতা ও অক্ষর জ্ঞানের পাঠ দেওয়া হবে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বিষয় ভিত্তিক আলাদা আলাদা করে পড়ানো হবে। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত সকলকে একসাথে পড়ানো হবে। অর্থাৎ সাইন্স, আর্টস, কমার্সের ভাগ আর রইল না। মোট আটটি সেমিস্টারের চলবে এই চার বছরের শিক্ষা।
নতুন শিক্ষা পদ্ধতিতে বোর্ড পরীক্ষার গুরুত্ব কম হলেও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পাঠদানের পদ্ধতিতে একটি বড় পরিবর্তন এসেছে। এই ক্ষেত্রে কোন একটি ছাত্র পদার্থবিদ্যার সঙ্গে বেকারি শিখতে পারে অথবা রসায়নবিদ্যার সঙ্গে ফ্যাশন টেকনোলজি পড়তে পারে।
একসাথে সমস্ত বিষয়ই পড়ানো হবে এই নতুন পদ্ধতিতে। বেকারি, ফ্যাশন টেকনোলজির মত বিষয়ের সাথে সঙ্গীত খেলাধুলার মতো বিষয়ও থাকবে। যে যার নিজের নিজের ইচ্ছামত বিষয় পছন্দ করতে পারবে।
এই নতুন শিক্ষা পদ্ধতিতে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই ভোকেশনাল বিষয় পড়ানো হবে। নতুন এই শিক্ষা বিধিতে মূল্যায়ন বিধির ক্ষেত্রেও পরিবর্তন করা হয়েছে। রিপোর্ট কার্ডে একজন পড়ুয়া, তার সহপাঠীরা ও শিক্ষকরা মূল্যায়ন করতে পারবেন।
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে চালু হয়েছে মাল্টিপল এন্ট্রি অন্ড এক্সিট সিস্টেম। অর্থাৎ পড়াশোনার মাঝখানে যদি কোন পড়ুয়া পড়া ছেড়ে দেয় পরবর্তীকালে সে মনে করলে আবার সেখান থেকে শুরু করতে পারে। নতুন শিক্ষা পদ্ধতির ক্ষেত্রে কেউ যদি এক বছরের সার্টিফিকেট কোর্স সম্পন্ন করার পরে ছেড়ে দেয় তাহলে পরবর্তীকালে সে যখন পড়াশোনার করতে চাইবে তখন তাকে আর প্রথম বছরের কোর্সটি করতে হবে না। সে দ্বিতীয় বছর থেকেই পড়াশোনা শুরু করতে পারবে।
যারা গবেষণা করতে ইচ্ছুক তাদেরকে আর এমফিল করতে হবে না। তাদের চার বছরের কোর্স করতে হবে। স্নাতক স্তরে প্রতিবছর পাশ করার পর একটি করে সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। স্নাতক স্তরের দ্বিতীয় বছর উত্তীর্ণ হওয়ার পর শিক্ষার্থী ডিপ্লোমা পাবে। তৃতীয় ও চতুর্থ বছরের পর শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে স্নাতক সার্টিফিকেট।
গবেষণার ক্ষেত্র রদবদল করা হয়েছে।বলা হয়েছে এরপর থেকে কেউ গবেষণা করতে চাইলে সে তিন বছরের স্নাতক স্তরের পর এক বছরের স্নাতকোত্তর পড়লেই সরাসরি পিএইচডি করতে পারবে এমফিল করার আর কোন প্রয়োজন নেই।
নতুন শিক্ষা পদ্ধতিতে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মাল্টিডিসিপ্লিনারি এডুকেশন চালু করা হয়েছে। আর এর মধ্যে মেজর ও মাইনর ব্যবস্থাও থাকছে। অর্থাৎ কেউ যদি মনে করেন মূল বিষয়ের সহযোগি বিষয়ের পাশাপাশি সংগীত চিত্রকলার মত বিষয়ে পড়বেন সেও তা পড়তে পারবেন।
কলেজগুলিকে স্বায়ত্ত শাসন ব্যবস্থা দেওয়া হবে। তবে তা কলেজের গ্রেড অনুসারে নির্ধারণ করা হবে। পরীক্ষার ফিজ নির্ধারণ হবে নয়া পদ্ধতিতে। অনলাইন সেল্ফ ডিসক্লোজার ভিত্তিক পুরো ব্যবস্থাপনাটি চলবে।