অসামান্য সুন্দরী হলেও ভাগ্য দেয়নি সাথ, অকালেই চলে যেতে হল মহুয়া রায়চৌধুরীকে

টলিউডের (Tollywood) স্বর্ণযুগের সুন্দরী অভিনেত্রী মহুয়া রায়চৌধুরী (Mohua RoyChoudhary)। নিজের প্রতিভা বিকাশ করার জন্য খুব বেশি সময় তিনি পাননি। তবে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত যেটুকু সময় পেয়েছিলেন, তারই মধ্যে তিনি অগণিত ভক্তের মনে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। তার মৃত্যুটা টলিউডের জন্য এক অভিশাপ। মহুয়ার মৃত্যু দুর্ঘটনা, নাকি এর পেছনে জুড়ে রয়েছে অন্য রহস্য? জবাব মেলেনি আজও।

দক্ষিণ কলকাতার এক বৃষ্টি ভেজা রাতেই মেলে খবরটা। টলিউড সুন্দরী নাকি তার বাড়িতে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। সেই দুর্ঘটনাতে পুড়ে গিয়েছে তার শরীরের ৭০ শতাংশ! দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত এক নার্সিংহোমের আটতলার ৭২২ নম্বর ঘরে জীবন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন মহুয়া রায়চৌধুরী। এটা যদি সত্যিই সিনেমার দৃশ্য হতো! তবে না, টানা ১১ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে শেষমেষ পরাজিত মহুয়া।

ক্ষণজন্মা এই তারকার জীবনের গল্পটা শুরু হয়েছিল উত্তর কলকাতার চৌধুরীপাড়ার একটি অস্থায়ী স্টেজ থেকে। সেখানে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, সুচিত্রা সেনের মতো তারকারাও উপস্থিত ছিলেন সেদিন। তারকাদের সামনেই সেদিন নীলাঞ্জন রায় চৌধুরী নামের এক নৃত্যশিল্পী বহুকষ্টে মেয়ে শিপ্রা রায়চৌধুরীর নাচের ব্যবস্থা করেছেন। ছোট্ট ৭ বছরের মেয়েটি সেদিন তার নাচ দিয়ে মুগ্ধ করলো তারকাদের মন। সেই শুরু। তারপর ওইটুকু বয়স থেকেই স্টেজে নাচ করে উপার্জন শুরু করেন তিনি। তারপরই বাবার পরিচিতির সুবাদে টলিপাড়ায় যাতায়াত।

পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায় তখন ‘নয়া মিছিল’ ছবির জন্য নায়িকার খোঁজ করছিলেন। শিপ্রার বয়স তখন ১৩ বছর। যদিও নায়িকার চরিত্রের জন্য শিপ্রাকে তার মনে ধরেনি। তবে সেখানেই সুখেন দাসের নজরে পড়ে যান শিপ্রা। ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’ এর নায়িকা হিসেবে এক নতুন জীবনের সূত্রপাত হলো সেখানেই‌। তবে এখন থেকে আর শিপ্রা হিসেবে নয়, মহুয়া রায়চৌধুরী হয়ে নিজেকে নতুন পরিচয় দিলেন অভিনেত্রী। তারপর তাপস পালের বিপরীতে ‘দাদার কীর্তি’, আর পেছনে তাকাতে হলো না মহুয়াকে। একের পর এক ছবির প্রস্তাব আসতেই থাকলো। তারই মাঝে তার আলাপ হয় তিলক চক্রবর্তীর সঙ্গে। আলাপের পর প্রেম, তারপর বিয়ে।

যদিও মহুয়া-তিলকের বিয়েতে প্রবল আপত্তি ছিল মহুয়ার পরিবারের। তবে মহুয়ার জেদের কাছে শেষমেষ মাথানত করতে হয়েছিল বাবাকেও। পাশে ছিলেন কাছের বান্ধবী রত্না ঘোষাল, সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় তরুণ কুমাররা। বাবা প্রথমে ইতস্তত করলেও শেষমেষ মেয়ের সিদ্ধান্তেই মত দেন। বিয়ের পরের দিনগুলো কেটেছিল ছবির মতো। একদিকে সংসার অন্যদিকে অভিনয়। দিনগুলো কাটছিল বেশ। এরই মাঝে ফুটফুটে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন মহুয়া।

আচমকাই এসে গেল সেই অভিশপ্ত রাত। উত্তম কুমারের মৃত্যুর পর মহুয়া রায়চৌধুরী খবর যেন টলিউডের কাছে বড়সড় ধাক্কা। মৃত্যুর কারণ নিয়ে উঠলো বহু প্রশ্ন। তার কাছের অতি প্রিয় বান্ধবী থেকে শুরু করে সহকর্মীরা, এমনকি ভক্তরাও কেউ দুর্ঘটনার তত্ত্ব মেনে নিতে পারেন না। তবে মহুয়া রায় চৌধুরীর মৃত্যু রহস্যের কিনারা হয়নি। পরিবারের তরফ থেকে বারবার তুলে ধরা হয়েছে স্টোভ বার্স্টজনিত দুর্ঘটনার তত্ত্ব।

বাড়িতে দুজন পরিচারক থাকা সত্ত্বেও কেন নিজেই খাবার বানাতে গেলেন মহুয়া? কেনই বা বাড়িতে চারজনের উপস্থিতি থাকা সত্বেও পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছালো? দুর্ঘটনা ঘটলো রান্নাঘরে, অথচ শোবার ঘরের লেপ, তোষক, বালিশ পুড়ে ছাই! বিছানাতে কেরোসিনের গন্ধ, কেন? কেনই বা অভিনেত্রীর শরীরের জায়গায় জায়গায় কালশিটের দাগ? প্রশ্ন উঠেছিল পুলিশের তদন্তে। তবে জবাব দিতে চাননি পরিবারের সদস্যরা। এত প্রশ্নের জবাব নিয়ে অকালেই চলে গেলেন মহুয়া রায়চৌধুরী।