দর্শকের বিচারে এবছর লকডাউনের সেরা ৫ সিরিয়াল

লকডাউন (Lockdown) পর্বে সবথেকে বেশি প্রভাবিত হয়েছে টলিউড (Tollywood)। দীর্ঘদিন ধরে শুটিং বন্ধ থাকায় যেন থমকে গিয়েছিল ইন্ডাস্ট্রি। তারপর অবশ্য ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরেছে টেলিপাড়া। তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে (Second Wave) ফের বন্ধ শুটিং। আগের বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বেশি বেশি কাজ করে যে ব্যাকআপ তুলে রেখেছিল সংস্থা, লকডাউনের প্রথম পর্যায়ে তাই দিয়েই কোনরকমে টেনেটুনে এপিসোড (Episode) বৃদ্ধি করেছে ধারাবাহিকগুলি।

তবে তারপর কাজ চালানোর জন্য বাড়ি থেকে শুটিংয়ের (Work From Home) দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া আর উপায় ছিল না নির্মাতা সংস্থাগুলির কাছে। অভিনেতা-অভিনেত্রীরা নিজের নিজের বাড়িতে লাইট ক্যামেরা সেট করে একা একাই শর্ট দিয়েছেন। নিজেদের মেকআপ নিজেরাই করেছেন। একা একা সব ব্যবস্থা করতে গিয়ে নাস্তানাবুদও হয়েছেন! তবে তাতেও বাঁধ সাধলো ফেডারেশন (Federation)। টেকনিশিয়ানদের বঞ্চিত করে শুধু কলাকুশলীদের নিয়ে শুটিংয়ের তীব্র বিরোধিতা করতে থাকে টেকনিশিয়ান সংস্থা।

তবে, তার পরেও চলেছে শুটিং। কিছু কিছু ধারাবাহিকের কলাকুশলীরা তো আবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে গোডাউন কিংবা হোটেলের রুম ভাড়া করেও একসাথে শুটিং করেছেন! ফেডারেশনের তরফ থেকে এই অভিযোগেও উঠেছে। এই নিয়ে আর্টিস্ট ফোরাম (Artist Forum) এবং প্রডিউসার্স গিল্ডকে (Producer’s Guild) বারংবার নোটিশ ধরিয়েছে ফেডারেশন। তবে প্রযোজকদের তরফ থেকে মনমতো কোনও উত্তর না পেয়ে এবার সিরিয়াল বয়কট করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে ফেডারেশন!

Federation prohibited technicians from working on 20 popular bengali mega serials

ফেডারেশনের সাফ নির্দেশ, লকডাউন উঠে গেলেও ২০টি ধারাবাহিকে কাজ করতে পারবেন না টেকনিশিয়ান সংগঠনের সদস্যরা! ফেডারেশনের নিষেধাজ্ঞা চেপেছে ‘কৃষ্ণকলি’, ‘তিতলি’, ‘অপরাজিতা অপু’, ‘গ্রামের রানী বিনাপানি’, ‘বরণ’, ‘খেলাঘর’, ‘যমুনা ঢাকি’, ‘গঙ্গারাম’, ‘জীবন সাথী’, ‘মিঠাই’, ‘সাঁঝের বাতি’, ‘খড়কুটো’, ‘শ্রীময়ী’, ‘মোহর’, ‘দেশের মাটি’, ‘রিমলি’, ‘ওগো নিরুপমা’, ‘ফেলনা’, ‘কি করে বলবো তোমায়’, ‘ধ্রুবতারা’ ধারাবাহিকের উপর! ফলে লকডাউন উঠে গেলেও ধারাবাহিকের শুটিং ফের বিশবাঁও জলে।

এত বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও ধারাবাহিকের কলাকুশলীরা কিন্তু সমস্ত বাধা উপেক্ষা করেই শুটিংয়ের গুরুদায়িত্বের প্রায় সবটাই নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। এত সমস্যার মধ্যেও বেশ কিছু ধারাবাহিক সুন্দরভাবে কাজ করে চলেছে। ‘খেলাঘর’, ‘দেশের মাটি’, ‘শ্রীময়ী’, ‘মিঠাই’য়ের মতো ধারাবাহিকের কলাকুশলীরা বাড়ি থেকে শুটিং করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন। চিত্রনাট্যকারেরাও এমনভাবেই গল্প লিখছেন যাতে তাদের কাজটা আরও সহজ হয়।

যেমন ‘খেলাঘর’ ধারাবাহিকের ‘শান্টু’ এবং ‘পূর্ণা’ বর্তমানে ‘পূর্ণা’র বাপের বাড়িতেই জামাইষষ্ঠী অনুষ্ঠান পালন করছে। সেখানেই ‘বরুণ চ্যাটার্জি’র সঙ্গে ‘শান্টু’র নিত্যদিনের ঝামেলা বাঁধার দৃশ্যগুলি আলাদা আলাদা স্থানে থেকেও সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন কলাকুশলীরা। তবে লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ম্যাজিক মোমেন্টস’ আবার ধারাবাহিকের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলার জন্য গ্রাফিক্সের সহায়তা নিয়েছে। দেখে বোঝার উপায় নেই যে কলাকুশলীরা নিজেদের বাড়িতেই রয়েছেন।

লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিচালিত ধারাবাহিক যেমন, ‘দেশের মাটি’, ‘শ্রীময়ী’, ‘খড়কুটো’, ‘মোহর’ ধারাবাহিকের ক্ষেত্রে কলাকুশলীদের পেছনের দৃশ্যপট ফুটিয়ে তোলার জন্য ক্রোমা শটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এডিটর এমন ভাবে এডিট করছেন যাতে কলাকুশলীদের দৃশ্যপটের পার্থক্যটা ধরা না পড়ে। হাসপাতালের দৃশ্য হোক বা থানার লক-আপের দৃশ্য (দেশের মাটি ধারাবাহিক), খড়ের ছাউনি দেওয়া ঘর হোক বা বিস্তীর্ণ মাঠের দৃশ্য (শ্রীময়ী ধারাবাহিক), এমনকি নদীর উপর নৌকা ভেসে যাওয়ার দৃশ্যটাও (মহাপীঠ তারাপীঠ ধারাবাহিক) শুট ফ্রম হোম থেকেই নিখুঁত ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। অবশ্য সবটাই ফুটিয়ে তোলার জন্য এডিটিংয়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

Shoot From Home

এছাড়া অন্য ধারাবাহিকগুলি যেমন ‘বরণ’, ‘মিঠাই’, ‘অপরাজিতা অপু’, ‘ওগো নিরুপমা’তে ক্রোমা শটের উপায় অবলম্বন করা হয়নি ঠিকই, তবে কলাকুশলীরা নিজেদের অভিনয় দিয়েই কার্যত নিজ নিজ বাড়ির দৃশ্যপটের পার্থক্য ঢেকে দেওয়ার সবরকম চেষ্টা করছেন। মোট কথা, ধারাবাহিকের কলাকুশলীরা এখন টেকনিশিয়ানদের সাহায্য ছাড়াও ক্ষতিপূরণের কাজ করে চলেছেন! শুধুমাত্র দর্শকের বিনোদনের জন্য।