ভারতের অমীমাংসিত ১০ রহস্য; বিজ্ঞানও এর ব্যাখ্যা দিতে পারেনি

হাজার-হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতা ভারতের। দেশের কোনে কোনে ছড়িয়ে আছে ইতিহাস। আর তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে পরম্পরা, ঐতিহ্য আর রহস্য। যা অমীমাংসিত এবং ব্যাখ্যাতীত। কোনওটা গা ছমছমে, কোনওটা রোমান্টিক আবার কোনওটা বা আসামান্য শিল্প সুষমা-মণ্ডিত। তাদের উপস্থিতি নিয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু আজও বিজ্ঞান এর ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। ভারতের এমনই ১০ রহস্যের তালিকা করলাম আমরা।

লামা তেনজিং-এর ৫০০ বছরের পুরনো মমি

হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত ছোট গ্রাম ‘ঘুয়েন’। এই গ্রামেই একটি ছোট কংক্রিটের ঘরে পাতলা কাঁচের বাক্সে রাখা আছে পনেরশ শতাব্দীর বৌদ্ধ ভিক্ষু সাংহা তেনজিং-এর দেহ। পুরোপুরি মমি নয়। স্ব-বশ্যকরণ পদ্ধতিতে এই দেহ সংরক্ষিত আছে। ৫০০ বছর ধরে। আজও মৃতদেহ এতটাই সুসংরক্ষিত, যে চামড়া এবং মাথার চুল দুইই অবিচ্ছিন্ন। মনে করা হয়, এই মৃতদেহ প্রাকৃতিক উপায়ে মমিতে পরিণত হয়েছে।

চারামা গ্রামের গুহায় এলিয়েনের চিত্র

ছাত্তিসগর প্রদেশের বাস্তার জেলায় অবস্থিত চারামা গ্রাম। এই গ্রামেরই এক গুহায় যে প্রাচীন দেওয়ালচিত্রের সন্ধান মিলেছে। সেইসব ছবির সঙ্গে কল্পবিজ্ঞানের এলিয়ানদের অনেক মিল পাওয়া যায়। এই দেওয়াল চিত্রের আবিষ্কারক পুরাতত্ত্বজ্ঞ জেআর ভগত। তাঁর মতে, ছবিগুলো এমন এক প্রাণীর বর্ণনা দেয় যাদের দেহ অনেকটা অবয়বহীন প্রাণীর মতো। একই সঙ্গে ওইসব চিত্রে উড়ন্ত চাকতির মতো জিনিসের ছবিও আছে। মজার ব্যাপার হল, উড়ন্ত চাকতি থেকে নেমে আসা প্রাণী গ্রামের মানুষদের ধরে নিয়ে যায় – চারামা গ্রামে এমন গল্পের প্রচলন আছে। এখানকার বাসিন্দারা সেই ছোট ছোট প্রাণীদের বলেন, ‘রোহেলা’। এই আবিষ্কৃত সেওয়াল চিত্রের ওপর গবেষণা চালানোর জন্যে নাসা এবং ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অরগানাইজেশনের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে ছত্তিসগর ডিপার্টমেন্ট অব আর্কিওলজি অ্যান্ড কালচার সংস্থা।

৯ অজ্ঞাতনামার দল

৯ জন অত্যন্ত বিশ্বস্ত এবং জ্ঞানী ব্যক্তিকে নিয়ে এই দল তৈরি করেছিলেন সম্রাট অশোক স্বয়ং। এঁদের প্রত্যেকের কাছে গচ্ছিত ছিল একটি করে বই। তাঁতে রক্ষিত আছে মনুষ্য সমাজের গোপন ক্ষতিকর তথ্য। এই ৯ ব্যক্তির বিশেষ গুপ্ত ক্ষমতা ছিল বলেও মনে করা হয়। ওই বিতে সেগুলিই লিখে রেখেছেন তাঁরা। এই গোপন সংঘ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সংরক্ষিত এবং আজ অবধি এই সংঘ বিদ্যমান। বইগুলিও গুপ্তভাবে সংরক্ষিত হচ্ছে।

বিহারের সন ভাণ্ডার গুহা

একটি মাত্র বিশাল পাথর। তার মাঝে খনন চালিয়ে বানানো হয়েছে একটি গুহা। যার মধ্যে গচ্ছিত আছে রাজা বিম্বিসারের ধনভাণ্ডার।  কথিত আছে, যখন রাজা বিম্বিসারাকে তার পুত্র অজতশত্রু বন্দী করেছিলেন, তখন রাজার স্ত্রী স্বামীর নির্দেশে সমস্ত ধনদৌলত এই গুহায় গোপন করে রাখেন। সেই থেকে এখনও ওই ভাবেই রয়েছে। গুহার পশ্চিম দেওয়ালের গায়ে কিছু খোদাই করা লিপি আছে। সেগুলির পাঠোদ্ধার আজও সম্ভব হয়নি। ধরে নেওয়া হয়, ওই দুর্বোধ্য লিপির মধ্যেই লুকনো আছে রাজার ধনভাণ্ডারে পৌঁছনোর সূত্র। ইংরেজরা একবার কামান দেগে গুহা ফাটিয়ে পথ বের করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শুধুমাত্র গুহার গায়ে গোলার কালো দাগ পড়া ছাড়া কিস্যু হয়নি।

মীর ওসমান আলীর গুপ্তধন

অবিভক্ত ভারতের হায়দ্রাবাদের শেষ নিজাম ছিলেন মীর ওসমান আলী। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ২১০.৮ বিলিয়ন ডলার। টাইম ম্যাগাজিন ১৯৩৭ সালে তাকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মীর ওসমান আলীর ব্যক্তিগত সম্পত্তির সিংহভাগই উদ্ধৃত করা সম্ভব হয়নি। অনুমান করা হয় যে, তার এই বিশাল সম্পদ লুকিয়ে রয়েছে কোথি প্রাসাদে। নিজাম তার এই প্রাসাদে জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন। সেই কোথি প্রাসাদের কোনো এক গুপ্ত কুঠুরিতেই সেই লুকানো সম্পদ রয়েছে বলে অনেকের বিশ্বাস। তাঁর সম্পদের তালিকায় রয়েছে ১৭৩টি জমকালো রুবি, হীরা, প্রবাল, মুক্তো, নীলকান্তমণি দিয়ে তৈরি বিখ্যাত নিজাম জুয়েলারি, স্বর্ণ ও রুপা যুক্ত বিভিন্ন দামী পাথর। আজও অনেকেই খুঁজে বেড়াচ্ছেন নিজামের সেই লুকনো সম্পদ।

লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যু

ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের দুই বছরের মাথায় সুদূর তাসখন্দে লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যু হয়। বিভিন্ন রিপোর্ট এর কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে, কার্ডিয়াক অ্যাটাক। অথচ মৃতদেহে একাধিক নীল হয়ে যাওয়া কালশিটে এবং কাটা দাগ পাওয়া যায়। যেমনটা বিষক্রিয়ায় হয়। তাঁর স্ত্রীও জবানবন্দিতে জানিয়েছিলেন, লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর কোনোদিন হার্টের সমস্যা ছিল না। তাহলে মৃত্যু হল কীভাবে? মৃতদেহের ময়নাতদন্ত না হওয়ায় রহস্য আরও গুলিয়েছে। যার জট আজও ছাড়ানো যায়নি।

আরও পড়ুন : লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর অজানা জীবন ও রহস্যে মোড়া মৃত্যু

নেতাজির অন্তর্ধান

ধরে নেওয়া হয়, ১৯৪৫ সালে তাইহোকুর তথাকথিত বিমান দুর্ঘটনাতেই সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যু হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে বিভিন্ন নথি থেকে পরিষ্কার, সেই দুর্ঘটনার পরেও নেতাজি জীবিত ছিলেন। ১৯৪৭ সালে তাঁর রাশিয়া যাওয়ার প্রমাণও মেলে। কিন্তু তারপর অন্ধকার। কেউ মনে করেন, তিনি উত্তর ভারতে সন্ন্যাসীর বেশে আছেন। গুমনামিবাবাই নেতাজি। আবার কারও মতে, সাইবেরিয়ার জেলে ৬২ থেকে ৬৬ সালের মধ্যে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে নানা মুনির নানা মত। তবে আজও আসল কারণ জানা যায়নি। যেন ১৯৪৫ সালের পর কর্পূরের মতো উবে গেছেন নেতাজি।

আরও পড়ুন : পিঠে গুলি খেয়ে নেতাজিকে বাঁচিয়েছিলেন কর্নেল নিজ়ামুদ্দিন

রাজস্থানের কুনধারা এলাকা

জয়সলমীর থেকে মাত্র ১৫ কিমি দূরে কূলধারা। একসময় এই অঞ্চলে প্রায় ১২৯১ জন মানুষের বসতি ছিল। কুশাসক সেলিম সিংহের অন্যায্য খাজনার হাত থেকে রক্ষা পেতে গ্রামের লোকজন রাতারাতি গ্রাম ত্যাগ করে চলে যান। তাঁদেরই দীর্ঘশ্বাস পড়ে এখানে। তারপর থেকে তাই যারাই এই এলাকায় বসতি স্থাপনের চেষ্টা চালিয়েছে, তাদের সকলের ভাগ্যে জুটেছে নির্মম মৃত্যু। এই অভিশাপের ফলে আজ পর্যন্ত কুল্ধারাতে কোন জনবসতি নেই।

আরও পড়ুন : ভারতের ১০ রহস্যময় জায়গা যেখানে পর্যটন নিষিদ্ধ করা হয়েছে ভৌতিক কারণে

আহার ছাড়াই জীবিত

মাতা অম্বার ভক্ত প্রহ্লাদ জানি একজন ভারতীয় সাধক। চুনরিওয়ালা মাতাজি নামেও তিনি পরিচিত। থাকেন আহমেদবাদ থেকে ২০০কিমি দূরে আম্বালা গ্রামে। তাঁর দাবি, ১৯৪০ সাল থেকে আজ পর্যন্ত এক দানা খাবার বা এক ফোঁটা জল না পান করেও তিনি দিব্যি বেঁচে আছেন। দেবী আম্বাই তাঁকে এই না খেয়ে থাকার অতিমানবীয় ক্ষমতার অধিকারী করেছেন। এর সত্যতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে ১৫ দিন তাঁর ওপর নজরদারি চালানো হয়। সবাইকে অবাক করে তিনি পনেরো দিন কিছু মুখে না তুলে দিব্যি বেঁচে থাকেন। তাঁর শরীরে খাদ্যাভাব জনিত কোনও লক্ষণও দেখা যায়নি। ২০০৩ সালে ২১ জন মেডিক্যাল বিশেষজ্ঞ তাঁর শরীরের ওপর ধারাবাহিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছিলেন। কিন্তু রহস্য ভেদ করতে পারেননি।

আরও পড়ুন : ৭৭ বছর ধরে অভুক্ত! খাননি কিছুই, স্পর্শ করেননি জলও ; কে এই মাতাজি ?

সিন্ধু সভ্যতার অন্তর্ধান

সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ এগিয়ে থাকা ও উন্নত একটি সভ্যতার নাম ইন্দাস ভ্যালি। এই সভ্যতার পতনের ঘটনাই ভারতের সব থেকে প্রাচীন রহস্য হিসেবে বিবেচিত হয়। পৃথিবীর অন্যান্য সভ্যতার থেকে বহুলাংশে উন্নত এই ইন্দাস ভ্যালি মিশরীয় এবং মেসপটেমিয়ান সভ্যতার থেকেও প্রাচীন এবং বৃহৎ। আর্যদের আক্রমণেই এই সভ্যতার পতনের কারণ হিসাবে ধরা হয়। তবে এটা অনুমান মাত্র, কোনও পাথুরে প্রমাণ নেই। কারণ ভগ্নাবশেষ থেকে পাওয়া শিলালিপিগুলোর অর্থ এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয়, এই সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলি প্রায় একই সময়ে ধ্বংস হয়েছে। কেন এই সভ্যতা হঠাত্‍ কালের গর্ভে তলিয়ে গেল, তা আজও জানা যায়নি।