সারা বিশ্বজুড়েই দেখতে পাওয়া যায় এমন কিছু বিখ্যাত স্ট্যাচু যা তাদের উচ্চতাতেই শুধুমাত্র বৃহত্তম নয়, এইসব প্রত্যেকটি স্ট্যাচুই ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের এক একটি বিষ্ময়। এই সমস্ত স্ট্যাচু ধর্মীয় ভাবাবেগ বা দেশের বিখ্যাত কোন ব্যক্তিকে উৎসর্গ করে তৈরি করা হয়েছে। আজকের প্রতিবেদনে আমরা জানবো এমনই কিছু বিখ্যাত এবং উচ্চতম স্ট্যাচু যা সারা বিশ্বের আঙিনায় নিজেদের অস্তিত্বের বলিষ্ঠ পরিচয় দিয়ে যায়
চীনের লিং শানে গ্র্যান্ড বুদ্ধমূর্তি, ৮৮মিটার
এটি চীন দেশে অবস্থিত উচ্চতম বুদ্ধমূর্তি গুলির মধ্যে অন্যতম একটি বুদ্ধ মূর্তি বা স্ট্যাচু এটি চীনের লিং শান পর্বতে অবস্থিত। এই স্ট্যাচু টির উচ্চতা ৮৮ মিটার এবং এই ব্রোঞ্জ তৈরি স্ট্যাচু টি করতে ব্রোঞ্জ লেগেছে প্রায় ৭০০ টনের মতো।৭৪ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত অবস্থিত এই পর্যটক স্থলটি ঘিরে নানান বৌদ্ধমঠ এবং প্রদর্শন ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে।
গ্রেট বুদ্ধা অফ থাইল্যান্ড, ৯২মিটার, থাইল্যান্ড
থাইল্যান্ড দেশে অবস্থিত এই বুদ্ধ স্ট্যাচুটি সেই দেশের উচ্চতম স্ট্যাচু। এটির উচ্চতা প্রায় ৯২মিটার।১৯৯০ সালে এই স্ট্যাচু নির্মাণ শুরু হয় এবং২০০৮ সালে এই স্ট্যাচু নির্মাণ সম্পন্ন হয় ।এই স্ট্যাচু নির্মাণে কংক্রিট সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে এবং পুরো স্ট্যাচুটি সোনালী রং দিয়ে রঙিন করা হয়েছে।
পিটার দ্য গ্রেট স্ট্যাচু , ৯৮মিটার,রাশিয়া
এই স্ট্যাচু টি রাশিয়ার শাসক পিটার রাশিয়ার শাসক পিটার প্রথম এর স্মৃতিতে বানানো হয়েছিল ।যিনি রাশিয়ায় ৪৩ বছর ধরে শাসন করেছিলেন দক্ষতার সঙ্গে। ৯৮মিটার উঁচু এই স্ট্যাচুটি রাশিয়ার রাজধানী মস্কো শহরে মস্কোভা নদীর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। ১৯৯৭সালে উন্মোচিত এই স্ট্যাচু টি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে ৬০০টন স্টেনলেস স্টিল এবং ব্রোঞ্জ। স্ট্যাচুটির মোট ওজন ১০০০ টন। এটি রাশিয়ার উচ্চতম স্ট্যাচু
সেন্ডাইডাইকনুন , ১০০মিটার, জাপান
জাপানের সেন্ডাই প্রদেশে অবস্থিত এই স্ট্যাচুটি জাপানের উচ্চতম স্ট্যাচুগুলির মধ্যে একটি।১০০ মিটার লম্বা এই স্ট্যাচুটি জাপানিদের আরাধ্য দেবতা বুদ্ধদেবের বোধিসত্ত্বের প্রতিরূপ। সেতুটির ডান হাতে নেওয়া অলংকার এর মাধ্যমে তিনি সমগ্র জাপানিদের আশীব্বার্দ দান করছেন এবং বাঁ হাতে নেওয়া কমুন্ডল এর মাধ্যমে তিনি সকলকে জ্ঞান এবং শুভ বুদ্ধি প্রদান করছেন ।এই স্ট্যাচুতে চড়ার জন্য এলিভেটরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও এই স্ট্যাচুর উচ্চতম স্থান থেকে সারা শহরকে খুব সুন্দর দেখা যায়।
এম্পেরোর ইয়াং এবং হুয়াং, ১০৬মিটার, চীন দেশ
এই স্থাপত্যগুলি চীন দেশের রাজা ইয়াং এবং হুয়াংয়ের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়েছে। এটি নির্মাণ করতে প্রায় কুড়ি বছরের মতো এক দীর্ঘ সময় লেগেছে। চীন দেশের হেনান প্রদেশে অবস্থিত এই স্ট্যাচু দুটির উচ্চতা১০৬ মিটার। এই স্ট্যাচু দুটি নির্মাণে প্রায়২২৫ লক্ষ ডলার খরচ করতে হয়েছে চীনের সরকারকে। স্ট্যাচু দুটির প্রত্যেকটির চোখ দুটি প্রায় ৪ মিটার পরিধিযুক্ত এবং নাক দু’টি ৬মিটার করে লম্বা।
গোয়ান উইন, সাউথ সি অফ সায়ানা , ১০৮মিটার, চীন
চীনের হাইনান প্রদেশে অবস্থিত এই স্ট্যাচুটি চীন দেশের দেশের বৌদ্ধ সম্প্রীতি দেবীর এক প্রতিমূর্তি। এটি ১০৮ মিটার লম্বা এবং তিন দিকে মুখ বিশিষ্ট এই স্ট্যাচুটি সারা বিশ্বের মধ্যে এরকম অনন্য এবং অদ্বিতীয় একটি স্ট্যাচু। স্ট্যাচু টি নির্মাণে প্রায় ৬বছর সময় লেগেছিলো।
উসহিকু দাইবুতসু, ১১০মিটার, জাপান
উসহিকু দাইবুতসু কথার অর্থ হল “গ্রেট বুদ্ধা ইন উসহিকু” যা জাপানের উসহিকু শহরে অবস্থিত। স্ট্যাচু টির উচ্চতা ১১০মিটার যা জাপানের মধ্যে সবচেয়ে উচ্চতম স্ট্যাচু। স্ট্যাচু টি সম্পূর্ণভাবে ব্রোঞ্জ দ্বারা নির্মিত।
লায়কায়ুন সেটকায়ার,১১৬মিটার, মায়ানমার
পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম স্ট্যাচুটির মায়ানমার দেশে অবস্থিত। এই স্ট্যাচুটির উচ্চতা১১৬মিটার।১৯৯৬ সালে নির্মাণ শুরু হয়েছিল এই স্ট্যাচুটির এবং ২০০৮ সালে নির্মাণ সম্পন্ন হয়। স্ট্যাচু টি দাঁড়িয়ে আছে একটি ১৩.৫মিটার উঁচু সিংহাসনের উপর। স্ট্যাচু থেকে শহরের মনোরম দৃশ্য দেখার জন্য স্ট্যাচু টির ভিতরে এলিভেটরে ব্যবস্থা করা আছে।
স্প্রিং টেম্পেল বুদ্ধা, ১৫৩ মিটার, চীন
পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম ১৫৩মিটার উঁচু এই স্ট্যাচুটি নির্মাণ করা হয়েছে চীন দেশে। এই বুদ্ধ মূর্তির স্ট্যাচুটি চীনের হেনান প্রদেশে অবস্থিত। ১৯৯৭সালে এই স্ট্যাচুটি নির্মাণ শুরু করা হয় এবং২০০৮ সালে এই স্ট্যাচু নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়। স্ট্যাচুটি দাঁড়িয়ে আছে একটি ২০ মিটার পরিধিযুক্ত পদ্মফুলের উপর। এই স্ট্যাচুটি নির্মাণে ৫৫০লক্ষ ডলার খরচ করা হয়।
স্ট্যাচু অফ ইউনিটি, ১৮২মিটার, ভারত
বর্তমানে সারা পৃথিবীর মধ্যে উচ্চতম এই স্ট্যাচুটি ভারতের গুজরাট রাজ্যে অবস্থিত। নর্মদা নদীর মধ্যখানে এই স্ট্যাচুটি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা তথা স্বাধীন ভারতের প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের। স্ট্যাচুটির উচ্চতা ১৮২মিটার যা সারা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে উচ্চতম। এই স্ট্যাচুটি নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ৩,০০০কোটি টাকা।স্ট্যাচুটি নির্মাণ করতে ভিতরের দিকে কাঠামোয় ব্রোঞ্জ লেগেছে ১,৭০০ টন ,স্ট্যাচুটির বহি:দেশে ব্রোঞ্জ এর আস্তরণ লেগেছে ১,৮৫০ টন। এছাড়াও মূল কাঠামো তৈরি করতে কংক্রিট সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়েছে ১,৮০,০০০ কিউবিক মিটার। রিইনফোর্সড স্টিল লেগেছে১৮,৫০০টন এবং কাঠামো নির্মাণে স্টিল লেগেছে ৬,৫০০ টন।
আরও পড়ুন : বিশ্বের সর্বোচ্চ স্ট্যাচু, ভারতের স্ট্যাচু অফ ইউনিটি সম্পর্কে ১০টি অজানা তথ্য
যদি আপনার উচ্চতা ৫.৬ ফুট হয় তাহলে এই স্ট্যাচুটি আপনার উচ্চতার তুলনায় ১০০গুন বেশি উঁচু। স্ট্যাচুটির উচ্চতা ১৮২মিটার যা আমেরিকার নিউ ইয়র্কে অবস্থিত “স্ট্যাচু অব লিবার্টির” চেয়েও উচ্চতায় দ্বিগুন। স্ট্যাচুটি সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেলের গমনরত অবস্থায় কথা মাথায় রেখে বানানো হয়েছে। স্ট্যাচুটি বর্তমানের ইঞ্জিনিয়ারিং নির্মাণের এক প্রকার বিষ্ময়। স্ট্যাচুটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছে ৩৩মাসের মত সময়।”স্ট্যাচু অফ ইউনিটি” নামের” নামের এই স্ট্যাচু টি ঘণ্টায় ১৮০ কিমি বেগে প্রবাহিত ঝড়কে প্রতিহত করে স্থির অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে কোনরূপ ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া ছাড়া। এবং এর সাথে৬.৫ রিখটার স্কেলের মাত্রার ভূমিকম্পজনিত আঘাত সহ্য করতে সক্ষম হবে এই স্ট্যাচুটি।
আরও পড়ুন : আলাপ করুন ৯৩ বছর বয়সী পদ্ম-সম্মানে ভূষিত এক শিল্পীর সঙ্গে
ভারতের নয়ডার পদ্ম পুরস্কার প্রাপ্ত স্থপতি রাম ভি সূত্তর এই স্ট্যাচুটি নির্মাণ করেছেন, এই নির্মাণের ক্ষেত্রে সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেলের দুহাজার ছবি নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে এবং তাকে যারা সামনে থেকে দেখেছেন এমন ব্যক্তিদেরও সাহায্য নেওয়া হয়েছে। স্ট্যাচুটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যা দূর থেকে দেখলে মনে হবে তিনি সর্দার সরোবর ড্যামের সরোবর ড্যামের দিকে হেঁটে চলেছেন।সারা ভারতের হাজার হাজার গ্রাম থেকে১৩৫ মেট্রিক টন লোহা নিয়ে আসা হয়েছে এই স্ট্যাচু নির্মাণের জন্য যা এই স্ট্যাচু নির্মাণের ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য বিষয়। এই সকল লোহা যা সারা ভারতবর্ষে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিয়ে আসা হয়েছে তা ভারতের একতাকে প্রকাশ করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে এই স্ট্যাচু নির্মাণে।