সামরিক শক্তিতে বিশ্বের প্রথম ১০টি শক্তিশালী দেশ ও তাদের ক্ষমতার বহর

প্রত্যেক দেশ নিজের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য তৈরি করে সেনা দল। এই সেনা দল বিশেষ বিশেষ সামরিক শক্তিতে সজ্জিত থাকে। এই সামরিক শক্তি যেমন কোন দেশকে তার সীমানা রক্ষা করতে সাহায্য করে, তেমনি দরকার পড়লে  শত্রু দেশের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। বিশ্বের ইতিহাস যদি আমরা দেখি তো আমরা যেমন দেখব উপনিবেশিক আগ্রাসন, তেমনি দেখবো নিজের দেশের সীমাকে রক্ষা করার জন্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে দেশ। আর তাই প্রত্যেক দেশের সামরিক ক্ষমতাও বিবর্তনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে।

বর্তমানের নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্ষেপনাস্ত্র তৈরি থেকে জলে, স্থলে ও আকাশে যুদ্ধ করার জন্য এখন প্রত্যেক দেশ বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত। আর তাই বিশ্বজুড়ে যে দেশের সামরিক ক্ষমতা যত বেশি সেই দেশের কতৃত্ব বা জোর ততো বেশি। আজও বিভিন্ন দেশের সামরিক ক্ষমতার বহর দেখে তার প্রকৃত ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক অবস্থার সংকেত পাওয়া যায়। তাই কোন দেশই চায় না তারা সামরিক শক্তিতে পিছিয়ে পড়ুক। তাই নিজেদের সাধ্যমতো প্রত্যেক উন্নত দেশ তাদের সামরিক শক্তিকে ঢেলে সাজায় প্রত্যেক বছরই। আজকে তাই আমাদের আলোচনার বিষয় বিশ্বের ১০ টি সামরিক শক্তিতে উন্নত দেশের  সম্পর্কে।

Source

তুরস্ক

পৃথিবীর মানচিত্রের দিকে দেখলে তুরস্কের আয়তন খুব যে বিরাট তা কিন্তু নয়। কিন্তু পূর্ব ইউরোপে অবস্থিত এই রাষ্ট্র বরাবরই সামরিক শক্তিতে উন্নত। আট কোটির জনসংখ্যা যুক্ত এই দেশ বর্তমানে NATO গোষ্ঠীভুক্ত দেশের মধ্যে তুরস্কের প্রতিরক্ষা বাহিনী দ্বিতীয় বৃহত্তম। এই দেশে  সক্রিয় সেনার সংখ্যা হল প্রায় ৪,১০,৫০০জন এবং রিজার্ভ সেনার সংখ্যা ৫,৮৫,৬৩০জন। বর্তমানে এই দেশের সামরিক ক্ষমতা বলতে গেলে, এই দেশের মোট যুদ্ধ জাহাজের সংখ্যা প্রায় ১,০০৭টি এবং বিধংসী ট্যাঙ্কের সংখ্যা ৩,৭৭৮টি এবং সামরিক জলজাহাজের সংখ্যা হল ১১৫টি। সামরিক শক্তির বিচারে এই দেশ ১০ম স্থানে আছে।

জাপান

এশিয়ার অন্যতম উন্নত দেশ হল জাপান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকি শহরে যে পরমাণু বিস্ফোরণ হওয়ার পরও এই দেশ বর্তমানে বিশ্বের মধ্যে অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষমতার বিচারে উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করেছে। এই দ্বীপপুঞ্জ দেশের  জনসংখ্যার পরিমান এশিয়ার ভারত বা চীনের মতো খুব বেশি না হলেও এই দেশে জনঘনত্ব অত্যন্ত বেশি। এই দেশের সামরিক বিভাগ অর্থাৎ সেনাকে বিশেষভাবে প্রশিক্ষন দেওয়া হয় অস্ত্রহীন অবস্থায় আত্মরক্ষা করার জন্য। জাপানের সামরিক বাজেট বিশ্বের মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং তারও সমসাময়িক বিভিন্ন কারণে জাপানের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ইতিহাস অনেক প্রাচীন তাই তারা তাদের সামরিক শক্তিকে অত্যন্ত উন্নত রাখে। প্রতিবেশী দেশ চীন, রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার সাথে কূটনৈতিক ভাবে জাপানের বেশ কিছু বিষয়ে মত বিরোধ থাকায় সামরিক শক্তির বিষয়ে জাপান সবসময় গুরুত্ব দিয়ে ভাবে। বর্তমানে এই দেশের মোট সক্রিয় সেনার সংখ্যা ২,৫০,০০০এর মতো। এছাড়াও রিজার্ভ সেনার সংখ্যা ৫৭,৮৯০এর মতো। বর্তমানে এই দেশের কাছে ১,৫৯০টি এয়ারক্রাফ্ট, ৬৭৮টি ট্যাঙ্ক,এবং ১১৫টি জল জাহাজ আছে। সামরিক শক্তির বিচারে তাই জাপান নবম নাম্বারে।

Source

জার্মানি

ইউরোপের অন্যতম উন্নত এই দেশ ঊনবিংশ শতাব্দী থেকেই নানা কারণে বিভিন্ন দেশের যুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করে জার্মানি সারা বিশ্বের কাছে ত্রাস সৃষ্টি করেছিল। হিটলারের নেতৃত্বে জার্মানি প্রায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল। আর এই সময় থেকেই জার্মানির সামরিক শক্তির বাড়বাড়ন্ত দেখা যায়। বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তি এবং অত্যাধুনিক রকম অস্ত্র ব্যবহারের দিকে জার্মানি প্রথমের সারিতে অবস্থান করে। এই দেশের সেনাবাহিনীতে আছে সেনা এবং বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ ও পারদর্শী বাহিনী আছে। বর্তমানে এই দেশের কাছে   ১,৮০,০০০ সক্রিয় সেনা  এবং ১,৫০,০০০ রিজার্ভ সেনা আছে।এই দেশের সামরিক অস্ত্রের ভাণ্ডারে ৬৭৬টি এয়ারক্রাফ্ট এবং ৪০৮ টি ট্যাঙ্ক ও ৮১ টি রণতরী জাহাজ আছে।

Source

দক্ষিণ কোরিয়া

উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিবাদ যেকোন সময় যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করে। তাই দক্ষিণ কোরিয়াকে সবসময় সামরিক দিক দিয়ে প্রস্তুত থাকতে হয়। তাই সামরিক ক্ষমতার প্রসারে দক্ষিণ কোরিয়া সবসময় অন্যান্য দেশের  তুলনায় অনেক বেশি মূলধন বিনিয়োগ করে। বর্তমানে এই দেশে ৬,২৫,০০০  জনের মতো সক্রিয় সেনা আছে এবং ২,৯০,০০০এর মতো রিজার্ভ সেনা আছে। এছাড়াও এই দেশের কাছে , ১৪৫১ টি এয়ারক্রাফ্ট এবং ২,৩৮১ টি ট্যাঙ্ক ও ১৬৬টি নৌ জাহাজ আছে। তাই সামরিক ক্ষমতার বিচারে এই দেশ বিশ্বের মধ্যে সপ্তম।

Source

ফ্রান্স

বিশ্বের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় ফ্রান্সের সামরিক শক্তি বহু প্রাচীন সময় ধরেই উন্নত। ইউরোপ জুড়ে ফ্রান্সের আধিপত্য নেপোলিয়নের সময় থেকেই লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও ইংল্যান্ডের সাথে উপনিবেশ তৈরি করা নিয়ে নানা লড়াই ধাপে ধাপে ফ্রান্সের সামরিক ক্ষমতা বাড়াতে বাধ্য করেছে। পরবর্তী সময়ে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সক্রিয় অবদানের মাধ্যমে ফ্রান্স বিশ্বের অন্যতম সামরিক ক্ষমতা সম্পন্ন দেশগুলির মধ্যে প্রথমের সারিতেই অবস্থান করে। বর্তমানে এই দেশের কাছে ২,০৫,০০০জনের মতো সক্রিয় সেনা এবং  ১,৯৫,৭৭০ জনের মতো রিজার্ভ সেনা আছে। বর্তমানে এই দেশের কাছে ১,২,৮২টি এয়ারক্রাফ্ট, ৪২৩টি অত্যাধুনিক ট্যাঙ্ক এবং ১১৩টি নৌ জাহাজ আছে।

আরও পড়ুন : গোর্খারা সবসময় বাঁকাভাবে টুপি পরে কেন জানেন ?

Source

ইংল্যান্ড

উপনিবেশিক ক্ষমতার বিস্তারে যদি কোন দেশ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল তা ছিল ইংল্যান্ড। তাই বহু প্রাচীন কাল থেকেই সামরিক ক্ষমতায় দারুন ভাবেই বলীয়ান ইংল্যান্ড। পৃথিবীর খুব কম দেশই আছে যেখানে ইংল্যান্ড তার উপনিবেশিক বিস্তার করে নি। এই দেশের যুদ্ধের ইতিহাসও অনেক প্রাচীন। নানা সময় নানা শত্রু দেশের সাথে ক্ষমতা বিস্তারের লড়াইয়ে জড়িয়েছে এই দেশ। যেমন প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এছাড়াও বর্তমান সময়ে ইরাকে আক্রমন ইত্যাদিতে। বর্তমানে এই দেশের কাছে ১,৫০,০০০ জনের মতো সক্রিয় সেনা এবং  ১,৮২,০০০ জনের মতো রিজার্ভ সেনা আছে। বর্তমানে এই দেশের কাছে ৮৭৯টি অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফ্ট, ৪০৭টি বর্তমান প্রযুক্তির ট্যাঙ্ক এবং ৬৬টি বিশাল নৌ জাহাজ আছে।

আরও পড়ুন : বিশ্বের ১০ পরমাণু শক্তিধর দেশ 

Source

ভারত

ভারত পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম জনবহুল দেশ। এই দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য এবং প্রতিবেশী দেশ চীন এবং পাকিস্তানের সাথে সীমান্ত বিষয়ে নানা বিবাদের কারণে ভারতকে তার সামরিক ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে হয়েছে সময়ের সাথে সাথে। এছাড়াও দেশের বিশাল জনসংখ্যাকে নিরাপত্তা দেওয়া এবং আভ্যন্তরীন নানা সমস্যা যেমন মাওবাদী, জঙ্গি হামলা থেকে দেশকে রক্ষা করতে ভারতকে নানা ভাবে সামরিক ক্ষমতা উন্নত করতে হয়েছে। ভারতের সামরিক ক্ষমতার অন্যতম হাতিয়ার হল এর সৈন সংখ্যা। বর্তমানে এই দেশের কাছে প্রায় ১৩,২৫,০০০জনের মতো সক্রিয় সেনা এবং ২১,৪৩,০০০এর মতো রিজার্ভ সেনা আছে। এছাড়াও আমাদের দেশের কাছে ২,০৮৬টি এয়ারক্রাফ্ট, এবং  ৬,৪৬৪টি ট্যাঙ্ক ও ২০২টি নৌ জাহাজ আছে।

আরও পড়ুন : ভারতের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সৈনদল যাদের কথা জানলে আপনার গর্ব হবে

Source

চীন

সারা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনবহুল দেশ চীন। বর্তমানে অর্থনৈতিক উন্নতিতে  আমেরিকার সমকক্ষে পরিণত হয়েছে। একদলীয় শাসনব্যবস্থা থাকার জন্য কমিউনিস্ট  চীনের অগ্রগতি সকল দেশের কাছে ঈর্ষার কারণ হয়ে উঠেছে।ভারতের ও জাপানের সাথে সীমান্ত সম্বন্ধীয় মতপার্থক্য এছাড়া এশিয়ার মধ্যে বৃহৎ ক্ষমতাশালী দেশ হওয়ার বাসনা মনে রাখার জন্য সামরিক শক্তিতে এই দেশ অত্যন্ত আধুনিক। ইউনাইটেড নেশনের নিরাপত্তা পরিষদের অন্যতম স্থায়ী সদস্য এই দেশ।বিশাল জনসংখ্যা এবং দেশের সীমানা সুরক্ষিত রাখার জন্য এক বিশাল সেনা এই দেশের কাছে আছে। বাৎসরিক সামরিক বাজেটের হিসাবে এই দেশ সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ করে। বর্তমানে এই দেশের সক্রিয় সেনার সংখ্যা ২৩,৩৫,০০০জনের মতো এবং রিজার্ভ সেনার সংখ্যা ২৩,০০,০০০জনের মতো। বর্তমানে এই দেশের কাছে ২,৯৪২টি এয়ারক্রাফ্ট এবং ৯১৫০টি ট্যাঙ্ক এবং  ৬৭৩টি নৌ জাহাজ আছে।

Source

রাশিয়া

পৃথিবীর বৃহত্তম দেশ রাশিয়া। বিশ্বের ইতিহাসে এই দেশ বারবারই অতীতকাল থেকেই তার সামরিক ক্ষমতার প্রদর্শন করে আসছে। আমেরিকার সাথে কূটনৈতিক ক্ষমতার দ্বন্দ্ব “শীতযুদ্ধের”সময় থেকেই চলে আসছে। সামরিক শক্তির বিচারে এই দেশ বরাবরই  আমেরিকার সাথে সমকক্ষ। বর্তমানে এই দেশের সামরিক শক্তি বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয়। বর্তমানে এই দেশের কাছে সক্রিয় সেনার সংখ্যা ৭,৬৬,০০০এর মতো সক্রিয় সেনা এবং ২৪,৮৫,০০০জন রিজার্ভ সেনা আছে। এছাড়াও ৩,৫৪৭টি এয়ারক্রাফ্ট এবং ১৫,৩৯৮টি ট্যাঙ্ক এবং ৩৫২টি রণতরী জাহাজ আছে এই দেশের সামরিক ক্ষমতার ভাণ্ডারে। বর্তমানে এই দেশ সামরিক ক্ষমতার বিচারে বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয়।

Source

আমেরিকা

বর্তমানে অন্যতম ক্ষমতাশালী এই দেশ। সকল প্রকার ক্ষমতার ভান্ডার এখন আমেরিকা। বিগত ৫০বছর ধরে সারা বিশ্বের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে আমেরিকা। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সারা বিশ্ব জুড়ে আমেরিকা তার ক্ষমতার যা সাম্রাজ্য স্থাপন করেছে তা বর্তমানেও একই ভাবে কায়েম আছে। আফগানিস্তান, ইরাক প্রভৃতি দেশে জঙ্গিদের উৎখাত করতে বর্তমান সময়ে সম্মুখ সমরে আমেরিকা  নিযুক্ত। এছাড়াও নানা কারণে ইরান, উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার ও অন্যান্য দেশের সাথে কূটনৈতিক উষ্ণতার কারণে বরাবরই সামরিক ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ করেছে আমেরিকা। জঙ্গি হামলায় আমেরিকায় বিশ্ব বাণিজ্য সেন্টারের টুইন টাওয়ার ধ্বংস হওয়ার পর সারা বিশ্ব জুড়ে জঙ্গি নিধন শুরু করে আমেরিকা। বর্তমানে সামরিক খাতে প্রতি বছর সবথেকে বেশি টাকা খরচ করে পৃথিবীর সমস্ত দেশের তুলনায়। এই দেশের কাছে আছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মারণাস্ত্র,এয়ারক্রাফ্ট, ট্যাঙ্ক এবং বিশাল বিশাল নৌ জাহাজ।

এছাড়াও এই দেশের সক্রিয় সেনার সংখ্যা ১৪,০০,০০০ এবং  রিজার্ভ সেনার সংখ্যা ১১,০০,০০০জন।এছাড়াও ১৩,৪৪৪টি এয়ারক্রাফ্ট, ৮৮৪৮টি ট্যাঙ্ক এবং ৪৭৩টি নৌ জাহাজ আছে এই দেশের কাছে।

বি:দ্রঃ উপরের দেওয়া তথ্য সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তনশীল। সামরিক ক্ষমতা প্রত্যেক দেশের অত্যন্ত গোপনীয় ব্যাপার তাই সব তথ্য যা বাইরে প্রকাশ পায় তা একদমই সত্যি তা বলা খুবই মুশকিল।