জাতীয় কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসে ১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন মমতা ব্যানার্জি। তিনি এখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। বাংলা ছাড়াও ত্রিপুরা, মণিপুর ও অরুনাচল প্রদেশে ছড়িয়ে আছে তৃনমূলের সংগঠন। তৎকালীন বাম সরকার কৃষকের জমি অধিগ্রহণ করে বিশেষ বাণিজ্যিক অঞ্চল তৈরির চেষ্টা করেছিল। সেই নীতির বিরুদ্ধে মমতার তৃণমূল দল কৃষক ও শ্রমিককে সফলভাবে সংগঠিত করে বদল এনেছিল সরকারে। এখানে তৃণমূল দল সম্পর্কে বেছে নেওয়া হল তৃণমূল সম্পর্কে এই ১০টি তথ্য সবার জানা দরকার।

১০। জাতীয় দল
নির্বাচনের পর ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি নির্বাচন কমিশনারের কাছে ১৯টি আসন নিয়ে লোকসভার ষষ্ঠ বৃহত্তম দল হিসাবে নাম নথিভুক্ত করে তৃনমূল। বর্তমানে ৩৪টি আসন নিয়ে তৃনমূল দেশের চতুর্থ বৃহত্তম দল। ২০১৬-র ২ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন তৃনমূলকে জাতীয় দল হিসাবে স্বীকৃতি দেয়।

৯। দলের প্রতীক
তৃণমূলের নির্বাচনী প্রতীক ‘জোড়া ঘাসফুল’। মমতার নিজের তৈরি। প্রতি ঘাসের দুটি বৃন্ত। যা ইঙ্গিত করে, একটি হিন্দু অন্যটি মুসলমান। দুটি ঘাসের অর্থ, চোখ ও জীবন। একইসঙ্গে এই প্রতীক তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করার পক্ষের ইচ্ছার প্রতীকী।

৮। প্রধান বিরোধী দল
১২ লোকসভা নির্বাচনে নিজেদের দলীয় প্রতীকে ৬ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে রাজনৈতিক ময়দানে পা ফেলে তৃণমূল। পশ্চিমবঙ্গে টানা ৩৪ বছর কমিউনিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রধান বিকল্প হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে তাঁরা।
৭। লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ-এর সঙ্গে জোট
১৯৯৯ সালে কেন্দ্রে ভারতীয় জনতা দলের সঙ্গে জোট বাঁধে তৃনমূল। ফল হিসাবে রেল মন্ত্রক সামলানোর দায়িত্ব পান মমতা। প্রথম বাজেটেই পূর্ব ও উত্তর পূর্ব ভারতের মধ্যে সংযোগ বাড়ানোর দিকে নজর দেন। রেলমন্ত্রী হিসেবে তাঁর সংক্ষিপ্ত মেয়াদকালে, পশ্চিমবঙ্গে পর্যটন শিল্পের বিকাশের ওপর জোর দেন এবং যুক্তি দেন যে ট্রান্স-এশিয়া রেলওয়ে উন্নয়নে ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

৬। এনডিএ ত্যাগ
২০০০ সালে পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে মন্ত্রীপদ ত্যাগ করেন মমতা। এর কিছু পরেই ২০০১ সালে ভারতীয় জনতা দলের সঙ্গে জোট ভেঙে দেয় তৃণমূল। এই সময় রাজ্যসভা ভোটের জন্য কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধতে চাইছিল তৃণমূল। ২০০৪-এর প্রথম দিকে ফের এনডিএ জোটে ফেরে তাঁরা। কয়লা ও খনি মন্ত্রকের দায়িত্ব পান মমতা। ওই বছরের নির্বাচনে মাত্র ১টি আসন পায় তৃণমূল।

৫। নন্দীগ্রাম
বাম আমলে তখন মুখ্যমন্ত্রী পদে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাঁর নেতৃত্বে নন্দীগ্রামের ১০,০০০ হাজার বর্গমিটারের চাষযোগ্য জমিতে ইন্দনেশিয়ার সালিম কোম্পানি গড়তে চেয়েছিল কেমিক্যাল হাব। ফলে সেই জমিকে বিশেষ বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসাবে ঘোষণা করেছিল বাম সরকার। এতেই শুরু হয় বিতর্ক। কিন্তু কৃষকেরা জমি ছাড়তে রাজি নন। তাঁদের উসকে দেয় মাওবাদী দলগুলো। শুরু হয় আন্দোলন। সময়মতো পুলিশ নন্দীগ্রামে পৌঁছতে পারেনি। যখন পৌঁছল ততক্ষণে মাওবাদীদের হাতে নন্দীগ্রামে ঘটে ঘেছে ছিনতাই ও গণহত্যা। দেশ জুড়ে ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান বুদ্ধিজীবীরা। এই ‘সরকারি সন্ত্রাসে’র বিরুদ্ধে মমতার নেতৃত্বে তৃণমূল আন্দোলন শুরু করে। পশ্চিমবঙ্গে ২০১১ বিধানসভা ভোটের সময় এই ঘটনাকে সামনে রেখে প্রচার শুরু করে তাঁরা।

৪। সিঙ্গুর
বাম আমলে সিঙ্গুরের ৯৯৭ একর চাষের জমিতে টাটারা ন্যানো গাড়ি তৈরির কারখানা করতে চাইলে প্রবল বিরোধী বাধার মুখোমুখি হতে হয় সরকারকে। তৃণমূল ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলি দাবি তোলে, ন্যায্য ক্ষতিপূরণ ও বিকল্প বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করছে সরকার। ক্ষুব্ধ কৃষকেরা মমতার নেতৃত্বে সংগঠিত হন। শুরু হয় ‘চাষের জমি বাঁচাও’ আন্দোলন। সমর্থন জানান মেধা পাটকর, অপর্ণা সেন, অরুন্ধতী রায়ের মতো পরিবেশবিদ, সমাজকর্মী, অভিনেত্রী থেকে দেশের সর্বস্তরের মানুষ। ২০০৮-এর অক্টোবরে টাটা তাঁদের কারখানা গুজরাটে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সিঙ্গুরের এই জয়ই তৃণমূলকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে দেয়।

৩। সারদা কেলেঙ্কারি
সামনে এল সারদা গ্রুপের জালিয়াতি। জনগণের টাকা নিয়ে ফেরত দিল না তারা। কেলেঙ্কারি ধরতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার একটি স্বতন্ত্র তদন্ত কমিশন তৈরি করে। এই কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তৎকালীন পরিবহন মন্ত্রী মদন মিত্র গ্রেপ্তার হতেই তৃণমূলের দিকে আঙুল তোলা শুরু করে জনগণ।

২। মুসলমান ও তুষ্টিকরণের রাজনীতি
তৃণমূল ও মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ, ভোটব্যাংক বজায় রাখতে দুজনেই মুসলিম তোষণ করে। আরও অভিযোগ, উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা হিন্দিভাষী মুসলমান ও বিহারীদের ভোট পেতে তাঁরা বাংলার ওপর উর্দুকে জোর করে চাপিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশী উদ্বাস্তু মুসলমানদের ঠাই দিতে হিন্দুদের ওপর হিংসার ঘটনা ঘটছে বলেও অভিযোগ।

১। মা মাটি মানুষ
‘মা মাটি মানুষ’ তৃণমূলের রাজনৈতিক ট্যাগলাইন। এটাও মমতার সৃষ্টি। ২০১১-এর রাজনৈতিক পালাবদলের সময় এই স্লোগানকেই সামনে রেখে এগিয়েছিল তৃণমূল। পরে মমতার এটি গান আকারে রেকর্ডও হয়। এখনও পর্যন্ত এটি ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় রাজনৈতিক স্লোগান।
বিরোধী থাকাকালীন সংসদের মধ্যেই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায় তৃণমূল। ডেরেক ও ব্রায়েন, সুগত সরকাররা এই দলের অন্যতম প্রধান সদস্য।