নোংরা মেসেজ করে তরুণীকে কুপ্রস্তাব, অভিনেতা রুদ্রনীলের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ

একুশের বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে রাজ্যজুড়ে দলবদলের মরসুম শুরু হয়েছিল। সেই স্রোতে গা ভাসিয়েছিলেন তৃণমূলের বহু তাবড় তাবড় নেতাকর্মী। এই দলে ছিলেন তৃণমূল নেতা তথা টলিউড অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। তবে দলবদল কিন্তু তার পক্ষে বিশেষ সুবিধাজনক হয়নি। এই প্রসঙ্গে ইতিপূর্বে বহুবার রাজনৈতিক মহলে সমালোচিত হয়েছেন তিনি। একুশের লড়াইয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপির হার এবং তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে রুদ্রনীলের হার সেই সমালোচনার আগুনে যেন ঘিয়ের কাজ করছে।

ঘরে-বাইরে রাজনৈতিক সমালোচনা রুদ্রনীলের ক্ষেত্রে কিছু কম নেই। তার উপর আবার সম্প্রতি তার ব্যক্তিগত জীবনেও কাদা লাগলো। সোশ্যাল মিডিয়ায় রুদ্রনীলের বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ আনলেন এক তরুণী। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করে তাতে রুদ্রনীলের বিরুদ্ধে নিজের অভিযোগ বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন নীলাঞ্জনা পান্ডে নামের এক তরুণী। একটি নয়, রুদ্রনীলের বিরুদ্ধে নেটিজেনদের নিজের অভিযোগ জানাতে পরপর দুটি পোস্ট করেছেন ওই তরুণী। দুটি পোস্টেই অভিনেতার বিরুদ্ধে তার প্রতি যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন নীলাঞ্জনা। যার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে নতুন তরজা। বর্তমানে রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে তাই বেশ অস্বস্তিতেই রয়েছেন রুদ্রনীল।

একুশের লড়াইয়ে রুদ্রনীলের হারের পর নীলাঞ্জনা পান্ডে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করে লিখেছেন, “আমি যদি সত্যি কথা বলি, তাহলে বলব, আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছি রুদ্রনীল ঘোষ-এর হারে। কয়েক বছর আগে, রুদ্রনীলের কুপ্রস্তাব না মানায় তার প্রোডাকশন হাউস থেকে আমাকে বার করে দেওয়া হয়েছিল। আমার প্রাপ্য টাকাও দেওয়া হয়নি। সেদিন ইন্ডাস্ট্রিতে নিউকামার ছিলাম। আজ প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন সেদিন বিচার চাইনি? আসলে তখন ভয় পাইনি, কিন্তু বিচারের জন্য একজন নিউকামারকে কিভাবে এগোতে হবে জানতাম না। ঘৃণাবশতঃ রুদ্র-র নোংরা মেসেজ মোবাইল থেকে ডিলিট করে দিয়েছিলাম। ফলে প্রমাণ ছিল না। আজও বিশ্বাস করি, ভগবানের মারে আওয়াজ হয় না। তাঁর বিচার খুব সুক্ষ্ম বিচার। সেদিন হয়তো রুদ্রনীল প্রভাব খাটিয়ে আদালতে আমাকে পরাজিত করত। কিন্তু আজ জনগণ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন। আজ রুদ্রনীল ঘোষ পরাজিত। রুদ্রনীলের পতনের সবে শুরু হয়েছে।”

   

রুদ্রনীল যদি এই পোস্ট দেখে বা তাকে যদি আমার পরিচিত কেউ এই পোস্ট সম্পর্কে বলে, তাহলে আমিও শুনতে চাই রুদ্রনীল কিভাবে নিজেকে রক্ষা করার জন্য সাফাই দেবে। এই পোস্টে আজ আমি কাউকে ট‍্যাগ করব না। শুধু জনগণ ও ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে ধন্যবাদ জানাব। তাঁরা ন‍্যায়বিচার করেছেন। রুদ্রনীল ঘোষ, তুমি হেরেছ বলে তোমার শহর হাওড়া গর্বিত, আনন্দিত। তোমার শহর হাওড়াও তোমাকে তার সন্তান বলতে ঘৃণা বোধ করে। আরও একটি কথা একটি ছেলে কোনো মেয়েকে ধর্ষণ করে, কুপ্রস্তাব দিয়ে পুরুষ হয় না। তাকে নপুংসক বলা হয়। প্রকৃত পুরুষ সে, যে নারীত্বকে সম্মান প্রদর্শন করে। রুদ্রনীল, এই পোস্টের কথা জানার পর তুমি সাইবার ক্রাইম সেলে যাও, আমার বিরুদ্ধে মামলা করো, আমি সেসবের পরোয়া করি না। কিন্তু মনে রেখো, এই তোমার পতনের শুরু”, এভাবেই কার্যত সোশ্যাল পোস্টে রুদ্রনীলকে বিঁধেছেন নীলাঞ্জনা।

নীলাঞ্জনার এমন বিস্ফোরক পোস্টে অবশ্য গুরুত্ব দিতে রাজি নন রুদ্রনীল ঘোষ। তার দাবি, “রাজনৈতিক অভিসন্ধি” চরিতার্থ করতেই নাকি ওই তরুণী তার বিরুদ্ধে এমন মিথ্যে অভিযোগ এনেছেন। রুদ্রনীলের প্রশ্ন, এত বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছেন তিনি। এতদিন কেন তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠল না? ভোটের পরেই কেন উঠছে? নীলাঞ্জনার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কি আইনের দ্বারস্থ হবেন রুদ্রনীল? এই প্রশ্নের জবাবে রুদ্রনীল জানালেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বহু মানুষ অনেক কথাই বলবেন। তাই এতে আইনি জটিলতায় যাওয়ার কোনও প্রয়োজনীয়তা দেখছেন না তিনি।

তবে রুদ্রনীলের এমন সাফাইয়ে ফের ফুঁসে ওঠেন নীলাঞ্জনা। এর জবাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্বিতীয় পোস্টটি করে তিনি দেখেন, “রুদ্রনীল এখন আমার কথায় রাজনৈতিক গন্ধ পাচ্ছে, তা এবার বলে দিক, কোন রাজনৈতিক দল আমাকে দিয়ে এই কাজ করাচ্ছে?  গন্ধ যখন পাচ্ছে, তখন নিশ্চয়ই নাম জানে।” আত্মপক্ষ সমর্থনে নীলাঞ্জনা আরও লিখেছেন, “2012  সালে প্রযোজনা সংস্থাটি রুদ্রনীল ঘোষ-এর একার ছিল না, এই প্রযোজনার সমান অংশীদার ছিলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়।  রুদ্রনীল-পরমব্রতর প্রযোজনা সংস্থায় সেই সময় জিনা তরফদার নামে কেউ কাজ করতেন না। প্রকৃতপক্ষে ‘ওয়ার্কশপ’ নামে ওই সংস্থায় আমি ছিলাম একমাত্র মহিলাকর্মী।

এই কারণে পরমব্রত নিজে যেদিন অফিসে আসতেন না, সেদিন তিনি আমাকেও আসতে বারণ করতেন।  হয়তো আমার নিরাপত্তা নিয়ে তিনিও চিন্তিত ছিলেন। পরমব্রতর কাছেই আমার চিত্রনাট্য লেখা ও পরিচালনা শেখার হাতেখড়ি।  তিনি আমার ‘মেন্টর’ ছিলেন। কিন্তু তিনি জানতেন না, রুদ্রনীল তাঁকে জড়িয়ে আমাকে রীতিমত নোংরা কথা বলেছিল। ‘ওয়ার্কশপ’-এ সেই সময় কাজ করতেন অরুণাভ খাসনবীশ। ‘ওয়ার্কশপ’ ছেড়ে আসার পর অনেকের মুখে জানতে পেরেছিলাম আর্থিক তছরুপের অভিযোগে অরুণাভকে সংস্থা থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে।”

“রুদ্রনীল এরপর হয়তো বলবে পরমব্রতকে চেনে না, অরুণাভ খাসনবীশকে চেনে না।  প্রকৃতপক্ষে, রুদ্রনীল কি নিজেকে চেনে? আগে ও নিজেকে সেই প্রশ্ন করুক।” এর সঙ্গেই তার সংযোজন, “সবুজ, গেরুয়া, সংযুক্ত মোর্চা সমস্ত শিবিরেই মহিলা কর্মী রয়েছেন।  এটি কোনো রাজনৈতিক পোস্ট নয়।  মহিলাদের জন্য একজন মহিলা হয়ে আমি এই পোস্ট করছি। তাতে কোনো মহিলার রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে আমার কিছু যায়-আসে না। রুদ্রনীলেরও রাজনৈতিক মতাদর্শ তাঁর নিজস্ব ব্যাপার।  কিন্তু রুদ্রনীলের মনে হয় নিজের মেমারিতে একটু জোর দেওয়া উচিত। অথবা এমনও হতে পারে রুদ্রনীল হয়তো ধীরে ধীরে স্মৃতিভ্রমের মতো অসুখের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।”

আরও পড়ুন : আগে সেক্স তারপর ট্যালেন্ট, টলিউডে কাজ পেতে শুতে হয় ছেলেদেরও

তবে কি কোনও আইনি পদক্ষেপ নেবেন অভিনেতা? আনন্দবাজারকে রুদ্রনীল জানিয়েছেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সন্তানের মা বলে দাবি করেছিলেন এক মহিলা। তিনি কি কোনও পদক্ষেপ নিয়েছিলেন? রাজনৈতিক মানুষের বিরুদ্ধে ১০টা লোক ১০টা কথা বলে। দৌড়াদৌড়ি করে লাভ নেই। আর সেটা মহিলা খুব ভাল করেই জানেন যে আমি কোনও পদক্ষেপ করব না, তাই লিখেছেন।’’ তিনি এই ঘটনায় অত্যন্ত দুঃখিত, এটা ঠিক হয়নি বলেই মনে করছেন রুদ্রনীল।