প্রেমের দেবতা শ্রীকৃষ্ণ। তিনি ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার। সমস্ত পৃথিবী জুড়ে তার সকল কর্মের মাধ্যমে শাশ্বত প্রেমকে প্রকাশ করেছেন। তার রাধার সাথে প্রেম লীলা আজও আমাদের ভক্তিরসে আপ্লুত করে। তিনি একাধারে দুষ্টের দমনকারী এবং অন্যদিকে শিষ্টের পালনকারী। তিনি পরম মিত্র রূপেও অবতীর্ন হয়েছেন আবার গীতা অনুযায়ী তিনি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দার্শনিক। আর আজ এই প্রেমের দেবতা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মদিন। সারা ভারত তথা বিশ্বের যেকোন প্রান্তে যেখানে হিন্দু ধর্ম ছড়িয়ে আছে সেখানে বসবাসকারী হিন্দুরা আগামী কাল আবার বৈষ্ণব মতে আগামী পরশু ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মদিন ভক্তিভরে আনন্দের সঙ্গেই পালন করবে। এই উপলক্ষে সারা দেশ জুড়ে নানা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। বিশেষ বিশেষ মন্দিরে নানা পদ শ্রীকৃষ্ণের উদ্দ্যেশ্য ভোগ হিসাবে নিবেদন করা হবে। এ যেন ভক্তের সঙ্গে ভগবানের ভালোবাসার এক শ্রেষ্ঠ নিদর্শনে পরিণত হবে। আর তাই এই শুভ মুহূর্তে আমরা সবাই চাই, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভদৃষ্টি সকল ভক্তের উপর পড়ুক। তাই আজকের প্রতিবেদনে আমরা জন্মাষ্টমী উৎসবের শুভ বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করবো।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবন বৃত্তান্ত
মথুরার ভোজ বংশের রাজা উগ্রসেন ছিলেন এক ধার্মিক রাজা। তার রাজত্বে প্রজারা খুব সুখেই বসবাস করছিলেন। কিন্তু তার পুত্র কংস ছিল চরম অধার্মিক এবং অহংকারী। সারা রাজ্য জুড়ে সে শুরু করেছিল প্রজাদের উপর অন্যায় এবং অত্যাচার। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে প্রজারা যখন রাজা উগ্রসেনের কাছে কংসের বিরুদ্ধে নালিশ জানায়, তখন যুবরাজ কংস নিজের ক্ষমতার প্রদর্শন করার জন্য তার নিজ পিতাকে সৈন্য দ্বারা বন্দী করে কারাগারে নিক্ষেপ করেন।
আর তার ফলে তিনি মথুরা নগরীর সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন। রাজা উগ্রসেনের একমাত্র কন্যা দেবকীর সাথে বিবাহ হয়েছিল কংসের ঘনিষ্ট বন্ধু বসুদেব। মথুরা নৃপতি কংস তার প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন তার ভগিনী দেবকীকে। কিন্তু বিবাহের পরে রীতি অনুযায়ী রথে করে কংস যখন তার ভগিনী এবং ভগ্নিপতি বসুদেবকে বোনের শশুরবাড়িতে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন তখন আশ্চর্যভাবে হঠাৎ আকাশ জুড়ে দৈববানী হয় যে, দেবকীর অষ্টম গর্ভজাত সন্তান কংসের মৃত্যুর কারণ হবে, অর্থাৎ অষ্টম গর্ভজাত সন্তান কংসকে হত্যা করবে।
এই দৈববানী শুনে কংস তৎক্ষণাৎ তার প্রাণের প্রিয় বোন দেবকীকে হত্যা করতে উদ্যত হন তখন দেবকীর সদ্য বিবাহিত স্বামী বসুদেব তার বন্ধু তথা মথুরা রাজা কংসের কাছে দেবকীর প্রাণ ভিক্ষা চান এবং তাকে কথা দেন তাদের প্রত্যেকটি সদ্যজাত সন্তানকে তারা রাজা কংসের হাতে তুলে দেবেন। এই কথা শোনার পর রাজা কংস তাদের দুজনকেই বন্দী করেন এবং কারাগারে নিক্ষেপ করেন। তারপর তিনি এক এক করে দেবকী এবং বসুদেবের ছয় ছয়টি সদ্যজাত সন্তানকে হত্যা করেন।
সপ্তম গর্ভ দেবকী বসুদেবের প্রথম স্ত্রী রোহিনীকে প্রদান করলে তা থেকে বালরামের জন্ম হয়। তবে অষ্টম গর্ভজাত সন্তান ছিলেন স্বয়ং ভগবান শ্রী কৃষ্ণ। অর্থাৎ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মাতা দেবকী এবং পিতা বসুদেবের অষ্টম সন্তান ছিলেন। তবে তার পালন পিতা ও মাতা ছিলেন রাজা নন্দ এবং যশোদা।
তবে ভাগবত পুরাণ অনুযায়ী শ্রীকৃষ্ণের জন্ম রাজা বসুদেব এবং দেবকীর মধ্যে কোনরূপ যৌন সংসর্গ ছাড়াই মানসিক যোগের মাধ্যমে ঘটেছিল। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মসাল নিয়ে বর্তমান শাস্ত্র বিশারদদের মধ্যে নানা মতবিরোধ থাকলেও বেশিরভাগ জন মনে করেন আনুমানিক ৩২২৮ খ্রিস্ট পূর্বব্দে ১৮আগস্ট বা অন্য মতে ২১শে আগস্ট বুধবার তিনি পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেন। দিনটি ছিল ভাদ্র মাসের কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমী তিথি। এই দিনটিকেই কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী বা শুধু জন্মাষ্টমী রূপে সারা পৃথিবী জুড়ে হিন্দু ধর্মের লোকেরা পালন করে।
যেসব ভোগ নিবেদন করলে আপনার মনোস্কামনা পূর্ন হবে
এমনিতে ভগবান শ্রী কৃষ্ণ যখন তার শৈশব থেকে কৈশোর বৃন্দাবনে পিতা নন্দ এবং মাতা যশোদার কাছে কাটিয়েছিলেন। এখানে তার অন্যতম প্রিয় খাবার ছিল ছানা, ননী এবং মাখন। তাই তার পছন্দের অন্যতম প্রিয় খাবারগুলির বেশিরভাগই দুগ্ধজাত।
নাড়ু
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অন্যতম প্রিয় খাবারের মধ্যে একটি হল নাড়ু।তিনি খুবই ক্ষীরের নাড়ু খেতে ভালো বাসতেন।তাই তার ভোগে অবশ্যই রাখুন ক্ষীরের নাড়ু।
মাখন মিছরি
মাখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অত্যন্ত পছন্দের খাবার। তাই ভগবানের নিমিত্তে যে ভোগ প্রসাদ দেওয়া হবে তাতে অবশ্যই রাখুন গরুর খাঁটি দুধের মাখন। আর সেই মাখন ছড়িয়ে দিন মিছরি। তবে যদি মাখন না পান তাহলে ছানা দিয়েও ভোগ নিবেদন করতে পারেন। তবে ছানাতে মিছরি মেশাতে ভুলবেন না।
তালের বড়া
ভাদ্র মাসে পাওয়া অন্যতম ফল হল তাল। এই তাল ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অন্যতম প্রিয় ফল। তিনি ঘি দিয়ে ভাজা তালের বড়া খেতে খুব ভালো বাসতেন। তাই তার ভোগ প্রসাদে অবশ্যই রাখুন দেশি ঘি দিয়ে ভাজা তালের বড়া।
আরও পড়ুন : জন্মাষ্টমী পালনের আদর্শ দিন কবে? পূজার সঠিক পদ্ধতি? শাস্ত্র কি বলছে?
পায়েস
ভগবান শ্রী কৃষ্ণের ভোগ প্রসাদে অবশ্যই রাখুন গোবিন্দভোগ চালের পায়েস। পায়েস তৈরির সময় কাজু, কিসমিস, এলাচ দিতে ভুলবেন না। পায়েস তৈরিতে দুধ দিতে কার্পণ্য করবেন না। পায়েস যত সুস্বাদু হবে তত ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রিয় ভাবে তা গ্রহণ করবেন।
মালপোয়া
এই খাদ্যবস্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পছন্দের খাবার।তাই ভোগ নিবেদন করার সময় অবশ্যই তাতে মালপোয়া দেবেন। এছাড়াও ভোগে রাখতে পারেন রাবড়ি, গোপালকলা ইত্যাদিও।
তবে অবশ্যই মনে রাখবেন ভোগ নিবেদন করার সময় ভক্তি এবং প্রেম উভয়ই আপনার হৃদয়ে যেন বিরাজ করে।তবেই আপনি ভগবান শ্রী কৃষ্ণের আশীর্বাদ অবশ্যই লাভ করবেন।